কে আছেন, কে নেই?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

যাঁরা তাঁকে ঘৃণা করেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁদের নতুন বছরের অভিনন্দন জানিয়েছেন। ‘ফেক মিডিয়া’—যারা নিত্যদিন ট্রাম্পের সমালোচনায় মুখর, তাদেরও শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘শান্ত থাকো। আমেরিকার যে উন্নয়ন আসছে, তা নিয়ে আনন্দ করো।’ তাঁর ভাষায়, সামনে অনেক বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে আমেরিকায়। 

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সীমান্ত–দেয়ালে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দে কংগ্রেস একমত না হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার কার্যত বন্ধ রয়েছে। ওয়াশিংটনে বসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পড়েছেন উত্তপ্ত রাজনৈতিক বৈরিতায়। তাঁর স্বভাবসুলভ উপহাসে ভরা ছিল নববর্ষের টুইট বার্তা। সমালোচকদের শান্ত থাকার কথা তিনি বলেছেন।

২০১৯ সালের শুরুতেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তাঁর হোয়াইট হাউস গোছাতে হবে। অস্থির হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কে আছেন, কে নেই—তা হলফ করে কেউ বলতে পারবেন না। কার কোন সময় প্রস্থান ঘটছে, কে কোন সময় চলে যাচ্ছেন—তা নিয়ে হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হয় খোদ আমেরিকার রাজনীতিবিদ বা সংবাদমাধ্যমেরও।

বছরের শুরুতেই দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের নিয়োগ নিয়ে ভাবতে হবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে। জেফ সেশনের প্রস্থানের পর উইলিয়াম বারকে মনোনীত করেছেন ট্রাম্প। কংগ্রেসের শুনানিতে উইলিয়াম বার যে কঠিন পরীক্ষায় পড়বেন, তা এখনই অনুমান করা হচ্ছে। উইলিয়াম বার সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সময় অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। এবারে রবার্ট ম্যুলারের চলমান তদন্ত নিয়ে শুনানিতে উইলিয়াম বার কড়া প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন। জেফ সেশনের প্রস্থানের পর অ্যাটর্নি জেনারেলের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ম্যাথিউ উইটেকার।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস ডিসেম্বরের ২০ তারিখে তাঁর পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। ট্রাম্পের বিদেশনীতির সঙ্গে ভিন্নমতের কারণেই তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন ছেড়ে যাচ্ছেন। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন থেকে দেখানো হচ্ছে ম্যাটিস অবসরে যাচ্ছেন। প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী প্যাট্রিক শানাহান ১ জানুয়ারি থেকে জেমস ম্যাটিসের দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন, তিনি শিগগিরই নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোনয়ন দেবেন। অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জ্যাক কেইন, সিনেটর টম কটন ও লিন্ডসে গ্রাহাম প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন—এমন আলোচনা হচ্ছে। যদিও সিনেটর গ্রাহাম ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ট্রাম্প প্রশাসনে যুক্ত হতে অনিচ্ছুক। তাঁরা সবাই আবার সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আসছেন।

ইন্টেরিয়র সেক্রেটারি রায়ান জিঙ্কেও চলে যেতে হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে নৈতিকতা লঙ্ঘনের অভিযোগ আসছে। জমি ইজারা দেওয়া এবং চার্টার ফ্লাইটে ভ্রমণ নিয়ে তিনি নৈতিকতা লঙ্ঘনের দায়ে আটকা পড়ছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে শিগগিরই তাঁর বিকল্প খুঁজতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডেপুটি ইন্টেরিয়র সেক্রেটারি ডেভিড বার্নহার্ডথ দায়িত্ব পেতে পারেন রায়ানের। এ পদের জন্য কংগ্রেসম্যান রব বিশপ, সিনেটর ডিন হেলার এবং সাবেক কংগ্রেসম্যান সিন্থিয়া লিমিসের নাম উচ্চারিত হচ্ছে।
ফক্স নিউজের একসময়ের উপস্থাপক হেইদার ন্যুয়ার্ট মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে পরিচিত হয়ে ওঠেন মুখপাত্র হিসেবে। জাতিসংঘে আমেরিকার স্থায়ী দূত হিসেবে নিকি হেলির প্রস্থানের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হেইদার ন্যুয়ার্টকে এ পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। হেইদার ন্যুয়ার্ট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিদেশনীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মোকাবিলা করার লড়াই সামাল দিতে হবে। তাঁর এ নিয়োগ নিশ্চিত করতে কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটরা কতটা হামলে পড়েন, তা এখন দেখার অপেক্ষায়।
হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফের পদে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট বিভাগের প্রধান মিক ম্যালভানি। জন কেলির প্রস্থানের পরই চিফ অব স্টাফ কে হচ্ছেন, এ নিয়ে আলোচনা চলছিল। চিফ অব স্টাফের জন্য কংগ্রেসের শুনানির প্রয়োজন হয় না। অস্থির হোয়াইট হাউসে এ পদটিতে আবার কে আসছেন, এ নিয়ে নানা কানাঘুষা চলেই আসছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে উইলবার রস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের শুরু থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তাঁর প্রস্থান নিয়ে সংবাদমাধ্যম সরগরম হয়ে উঠেছে। এ পদে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসনের প্রধান লিন্ডা ম্যাকমাহন নিয়োগ পেতে পারেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম দিকের সমর্থক উইলবার রস। বর্তমানে ৮১ বছর বয়সী রসের বয়স আর কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উপহাস করেছেন বলে সংবাদ বেরিয়েছে।
পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার প্রধান পদেও নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছে।

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক প্রধান ক্রিস্টিন নেলসেন মধ্য মেয়াদি নির্বাচনের পরই বিদায় নিচ্ছেন, এমন কথা শোনা গেলেও এখনো আছেন। অভিবাসী দমনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতির কঠিন বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যস্ত ক্রিস্টিন নেলসনও থাকছেন না শেষ পর্যন্ত—এমন কথাই শোনা যাচ্ছে।
এসব পদপদবি ছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসনের আরও কমপক্ষে এক ডজন উচ্চ পদে পরিবর্তন আসতে পারে শিগগিরই। তাঁদের কেউ স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছেন, কেউ পড়েছেন প্রেসিডেন্টের রোষানলে।
সংবাদ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই জানেন না তাঁর প্রশাসনে কে আছেন, কে নেই! সামনের দিনগুলো একদিকে নিজের বিরুদ্ধে তদন্ত তল্লাশি সামাল দেওয়া, নিজের প্রশাসন গুছিয়ে আনাসহ কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া ডেমোক্র্যাটদের সামাল দিতে গিয়ে নিজে কতটা বেসামাল হন, তা দেখার জন্যই অপেক্ষা এখন।

ইব্রাহীম চৌধুরী, আবাসিক সম্পাদক, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সংস্করণ।
ibrahim. chowdhury@prothomalo. com