নিউ ইস্কাটন টু নিউ ইয়র্ক

তোমরা যখন ঘুমাও তখন
আমরা থাকি জেগে-
তোমার আমার জীবন গাঁথা
দু’রকম উদ্বেগে।
তোমার যখন সকাল বেলা
আমার তখন রাত,
ঘরে ফিরে ক্লান্ত দেহে
দেই ছেড়ে পা-হাত।
আমার সকাল ব্যস্ত এমন
দু’পাটি দাঁত মেজে-
এত দ্রুত বের হই যেন
লাগছে আগুন লেজে!
ব্রেকফাস্টের সময় তো নেই
হাতে কফির কাপ,
ট্রেনে বসে দাঁতের মাঝে
ক্রোসানে দেই চাপ।

সকাল বেলা তোমার থাকে
রেডি প্রাতরাশ,
চোখ পেপারে, চায়ে চুমুক
নেই কোনো হাঁসফাঁস।
তোমার আছে আয়া বুয়া
নেইতো ঘামাঘামি,
আর এখানে বুয়া-ক্লিনার
রাঁধুনিও আমি।

ট্রেনে-বাসে চেপে আমি
পৌঁছাই রোজ কাজে,
তুমি থাকো গাড়ির ভেতর
অফিশিয়াল সাজে।
হয়তো বসে ট্রাফিক জ্যামে
ঘণ্টা-খানেক রবে,
অফিস যেতে দেরি হলে
কী বা ক্ষতি হবে!
তোমার দেশে তুমিই প্রজা
তুমি নিজেই রাজা
আমি বাধা নিয়ম জালে
আইন ভাঙলে সাজা।

তোমার কাটে গরম হাওয়ায়
আমার ন’মাস শীতে
নিজের হাতে পথের বরফ
হয় সাফ করিতে!
নিজের কাজ নিজে করি
সমস্যা নয় সেটা,
নিজের পায়ে চলতে শিখুক
আমার ছেলে-মে’টা।

তোমার পৃথিবীতে আছে
চেনামুখের আলো,
আমায় ঘিরে অচেনামুখ
রাশভারী মেঘ কালো।
যদিও বা হাই, হ্যালোটা
হরহামেশাই কয়,
ওসব ওদের মুখের বুলি
মনের কথা নয়।
অচিন দেশেও মুগ্ধ হবে
ভদ্রতা জ্ঞান দেখে,
আমায় যেতে পথ করে দেয়
দরজা টেনে রেখে।
মা-শিশু বা বয়স্করা
উঠলে ট্রেনে-বাসে,
সিট ছেড়ে দেয় সসম্মানে ৩
ওরা অনায়াসে!

চারপাশে আজ রকমারি
মানুষ, আমি একা
খুঁজে ফিরি চেনামুখের
পাই যদি বা দেখা!
অষ্টপ্রহর চেনা মানুষ
তোমার ঠিকানায়
তোমার ভাষায় কথা বলে
প্রাণ খুলে গান গায়।

ঈদ পার্বণ বর্ষবরণ
পুজো বড়দিন
বিলায় তোমার সব দরজায়
খুশি অমলিন।
এ দেশেও অদ্ভুত সব
উৎসব হয়, যাতে-
এ দেশিরাই সচরাচর
ওসব নিয়ে মাতে।
ইচ্ছে হলেই যাও হারিয়ে
বইমেলাতে ভিড়ে
অভিবাসী আমরা শুধু
হাঁটি স্মৃতির তীরে।

ভার্চ্যুয়ালি আমরা কাছে-
দুঃখ এবং সুখ
করছি শেয়ার পরস্পরে
মাধ্যম ফেসবুক।
এই ধরোনা ক্রিকেট খেলায়
ভাবছ নিয়ে বোলারদের,
একই খেলায় দু’জন বিভোর
ঠিক বিপরীত গোলার্ধের!
নিউ ইস্কাটনে তুমি,
আমি যে নিউ ইয়র্কে;
তুমি আমি কেমন আছি!
যাব না সেই তর্কে।
দেশকে ছেড়ে যে কারণেই
যত দূরেই যাই,
বুকের ভেতর দেশটা থাকে
তাই বয়ে বেড়াই।