মজুরি বৃদ্ধিজনিত সংকট

‘দিন এনে দিন খায়’-এর কিছুটা উন্নত সংস্করণ হচ্ছে আজকের দুনিয়ার চাকরিজীবীরা। বেতনের ওপরই তাদের নির্ভরশীল থাকতে হয়। এই বেতন ও ভাতার বৃদ্ধি বা বৃদ্ধির সম্ভাবনামাত্রই তারা বুনতে শুরু করে স্বপ্নের জাল। আগের চেয়ে একটু স্বচ্ছন্দে জীবন চলবে এমন আশা বাসা বাঁধে বুকে। এমনটাই স্বাভাবিক। গুনতির সংসারে একটু হাত-পা ছড়ানোর সুযোগ হবে ভেবে একটা স্ফূর্তি কাজ করে তাদের মনে।
নিউইয়র্কসহ আমেরিকার কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ঘণ্টাপ্রতি ন্যূনতম মজুরি ১৫ ডলারে উন্নীত হওয়ার খবরে এমন করেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন চাকরিজীবীরা। কিন্তু এই ন্যূনতম মজুরি কার্যকরের পর দেখা গেল উল্টো চিত্র। আয়াস তো দূরের কথা কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া থেকে শুরু করে চাকরি হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন এখন অনেক চাকরিজীবী।
ঘণ্টায় ন্যূনতম মজুরি ১৫ ডলারে উন্নীত করার সিদ্ধান্তটি মূলত ফেডারেল সরকারের। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমেরিকায় ঘণ্টাপ্রতি ন্যূনতম মজুরির হার ১৫ ডলারে উন্নীত করার সিদ্ধান্তটি নেয় হাউস এডুকেশন অ্যান্ড লেবার কমিটি। তবে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয়, ম্যারিল্যান্ড ও ম্যাসাচুসেটসে এ মজুরি হার এরই মধ্যে কার্যকর হতে শুরু করেছে। শুরুতে ১০ জনের বেশি কর্মী রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোয় এ মজুরি হার কার্যকর করা হয়েছে। তবে সব প্রতিষ্ঠানে একযোগে নয়। নিউইয়র্কে বিভিন্ন খাতে ধীরে ধীরে এ মজুরি হার কার্যকর করা হচ্ছে। কিন্তু এরই বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে চাকরির বাজারে।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে নিউইয়র্কে অস্বাভাবিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে চাকরির বাজার। চাকরি হারাচ্ছে মানুষ। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নগরের কফি শপ, রেস্তোরাঁ, স্টোর। কমে গেছে কর্মঘণ্টা। ছোট হয়ে আসছে চাকরির বাজার। আমেরিকার বড় বড় প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিলেও তুলনামূলকভাবে নিয়োগ দিচ্ছে কম। কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ায় মজুরি বৃদ্ধির সুফল পাওয়া তো দূরের কথা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মোট আয় কমে যাচ্ছে মানুষের। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হওয়ায় চাকরি হারাচ্ছে মানুষ।
যেকোনো রাষ্ট্রেই মজুরি বৃদ্ধির দুটি দিক থাকে। একটি ইতিবাচক, অন্যটি নেতিবাচক। আয় বৃদ্ধি যদি ইতিবাচক দিক হয়, চাকরি হারানোর শঙ্কা তবে নেতিবাচক দিক। নিউইয়র্ক এখন নেতিবাচক দিকটি দেখছে। যদিও সরকারি তথ্যমতে, আমেরিকায় চাকরিপ্রার্থীর চেয়ে চাকরির সংখ্যা এখন অনেক বেশি। একই বাস্তবতা নিউইয়র্কেরও। ফলে চাকরিজীবীদের তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকার কথা। কারণ বাজারে চাহিদার চেয়ে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা বাড়লে চাকরিদাতারা যেমন সুবিধায় থাকে, ঠিক তেমনি বিপরীত অবস্থায় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে চাকরিপ্রার্থীরা। নিউইয়র্কে দক্ষ-অদক্ষ দুই ক্ষেত্রেই চাহিদার চেয়ে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও মজুরি বৃদ্ধির ফলে অঙ্গরাজ্যটির চাকরির বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
এই অস্থিরতার মূল কারণ বহু বছর ধরে ঘণ্টাপ্রতি মজুরি হার একই থাকা। ফলে মুদ্রাস্ফীতিকে বিবেচনায় নিয়ে ন্যায্য হারে মজুরি বৃদ্ধির প্রশ্ন সামনে এলেই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রমাদ গুনছে। বিশেষত ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর এ বিষয়ে কোনো প্রস্তুতি না থাকায় তারা এর মোকাবিলা করতে পারছে না। আর বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এ অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে মুনাফার অঙ্কে কোনো ছাড় দিতে রাজি হচ্ছে না। ফলে মূল কোপটি নেমে আসছে শেষ পর্যন্ত চাকরিজীবীদের ওপরই। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ধাপে ধাপে মজুরি বৃদ্ধি করলে সংকট মোকাবিলা সহজ হতে পারত। বিশেষ করে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ফেডারেল সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর একটু একটু করে বাড়িয়ে পাঁচ বছরে তা সমন্বয় করলে চাকরিদাতা ও চাকরিজীবী উভয় পক্ষই শঙ্কামুক্ত থাকতে পারত। প্রশাসনের উচিত বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা।