দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়

এমন মানুষ পাওয়া খুবই কঠিন, যার কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এতই ভয়াবহ যে, এটি মানুষের উচ্চ রক্তচাপ তৈরি থেকে শুরু করে স্ট্রোকের মতো জীবনসংহারী ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষকে দুশ্চিন্তা করতে করতে শয্যাশায়ী হয়ে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে যেতে পর্যন্ত দেখেছি আমি। তাই, ২০১৬ সালে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আমি শিকাগো পাবলিক লাইব্রেরিতে ও ২০১৭ সালে লারগো পাবলিক লাইব্রেরিতে কিছু বই পড়ি। আমার পড়া ৫-৬টি বইয়ের মধ্যে যেটি আমার সবচেয়ে ভালো লাগে, তা হলো ডেল কার্নেগির ‘হাও টু স্টপ ওরিইং অ্যান্ড স্টার্ট লিভিং (How to stop worrying and start living)। অন্যান্য বইয়ে যা বলা হয়েছে তার সব উপায়ই আছে ডেল কার্নেগির এই বইটিতে। তাই, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে লিখতে বসে আমি ঠিক করেছি, ডেল কার্নেগির এই বইটির একটি সারাংশ লিখলেই মনে হয় তা হবে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির সবচেয়ে ভালো উপায়। চলুন, দেখা যাক, বইটির সারমর্ম।

দুশ্চিন্তা সম্পর্কে যেসব মৌলিক বিষয় আপনার জানা উচিত—
১. রৌদ্রোজ্জ্বল ঘরে বসবাস করুন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে নিজেকে শেষ করে না দিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আজকের দিনের জন্য বাঁচুন।
২. সমস্যা মোকাবিলা করতে উইলস এইচ ক্যারিয়ারের সূত্র মেনে চলুন। সূত্রটি হলো–
ক. চিন্তা করুন আপনি সমস্যাটি সমাধান করতে না পারলে আপনার সর্বোচ্চ কী কী ক্ষতি/সমস্যা হতে পারে
খ. সবচেয়ে খারাপ ক্ষতি/সমস্যাটি মেনে নিতে মনে মনে প্রস্তুতি নিন।
গ. তখন শান্তভাবে সবচেয়ে খারাপ ক্ষতি/সমস্যাটি থেকে ভালো করার চেষ্টা করুন।
৩. দুশ্চিন্তা যে আপনার শারীরিক কত বড় ক্ষতি করতে পারে সে বিষয়ে নিজেকে মনে করিয়ে দিন।

দুশ্চিন্তা বিশ্লেষণ করার উপায়—
১. সব তথ্য সংগ্রহ করুন।
২. তথ্যগুলো থেকে একটা সিদ্ধান্তে আসুন।
৩. নিজেকে উদ্বেগমুক্ত রেখে ফলাফলের কথা চিন্তা না করে সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করুন।
৪. যখনই মনে হবে আপনি দুশ্চিন্তা করছেন, নিচের এসব প্রশ্নের উত্তর বের করে লিখুন—
ক. সমস্যাটি কী?
খ. সমস্যাটির কারণ কী কী?
গ. সম্ভবত কী কী উপায়ে সমস্যাটি সমাধান করা যেতে পারে?
ঘ. সমস্যাটি সমাধান করার সবচেয়ে ভালো উপায় কোনটি?

দুশ্চিন্তা আপনাকে ভেঙে ফেলার আগে আপনি যেভাবে দুশ্চিন্তার অভ্যাসকে ভেঙে ফেলবেন-
১. ব্যস্ত থাকুন।
২. খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে হইচই করবেন না।
৩. যে বিষয়টি হতে পারে ভেবে দুশ্চিন্তা করছেন, সেটি গড়ে কেমন হারে হয়?
৪. যেটি নিশ্চিতই হবে, সে সমস্যাটির সঙ্গে সহযোগিতা করে কাজ করুন।
৫. আপনার উদ্বেগ্ন যতটুকু সমস্যা তৈরি করতে পারে, তার চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা না করার সিদ্ধান্ত নিন।
৬. অতীতকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না।

মানসিক সুখ-শান্তি আনার ৭টি পদ্ধতি—
১. শান্তি, উৎসাহ, সুস্বাস্থ্য আর আশা দিয়ে মনকে ভরপুর করুন।
২. যেসব মানুষকে আপনি পছন্দ করেন না, তাদের নিয়ে চিন্তা করে আপনার এক মিনিট সময়ও নষ্ট করবেন না।
৩. মানুষের অকৃতজ্ঞতাকে মেনে নিন।
৪. সমস্যাগুলো নয়, আপনার প্রাপ্তিগুলো গণনা করুন।
৫. নিজের মতো হোন। মনে রাখবেন, এই পৃথিবীতে আর কেউ আপনার মতো নন।
৬. ক্ষতির মধ্যেও লাভ বের করুন। আপনার ভাগ্যে একটি লেবু থাকলে লেবুর সরবত বানান।
৭. অন্যের সুখ-শান্তি তৈরি করুন।

দুশ্চিন্তা জয়ের নির্ভুল পদ্ধতি—
১. প্রার্থনা করুন।
২. বর্তমান নিয়ে বাঁচুন।

এ ছাড়াও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে ‘প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা’–এ প্রকাশিত নিচের শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধগুলো পড়ুন। কারণ সাধারণত এসব সমস্যার কারণেই মানুষের দুশ্চিন্তা হয়।
১. হতাশা থেকে মুক্তির উপায়, ১২ অক্টোবর, ২০১৮
২. বিষণ্নতা থেকে মুক্তির উপায়, ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
৩. উদ্বেগ ও ভয়কে জয় করুন, ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
৪. ঠাট্টা-তিরস্কারে জবাব যেভাবে দেবেন, ০৫ অক্টোবর, ২০১৮
৫. রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
৬. কাজের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়, ১০ মে, ২০১৯
৭. সমালোচনা থেকে মুক্তির উপায়, ১৯ এপ্রিল, ২০১৯