ব্যথার দিনের বন্ধু...

১.
আমার একটা সমস্যা আছে, সেটা হচ্ছে আমি তেমন সামাজিক মানুষ না। ঘুর কুনো টাইপ। সে জন্য আমার বিরুদ্ধে আপনজনদের বিস্তর অভিযোগ। যখন যেটা করা দরকার, সেটা আমি করি না। যখন যে যোগাযোগ করা দরকার, তা হয় না। নির্বিকার থাকি। সে জন্য আমি জীবনে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই আমি এমন। আমার জগৎটা ছিল খুব ছোট। আমি বেশি মানুষের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম না। মানুষের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতেও লজ্জা লাগত। এখনো আমার সেই স্বভাব বদলায়নি। আমি লাজুক বলে কাউকে পছন্দ করলেও সে কথা সহজে বলতে পারি না। সে আবার কী মনে করে না–করে, এটা ভেবে পিছিয়ে যাই। তাই লেখনী ভালো আশ্রয়।
আমি ফোনেও বেশি কথা বলতে পারি না। কোনো গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ফোন করলে আমি অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকি। বিশ্বাসই হয় না, আমাকে ফোন করেছে। ফোনে আমি কি কথা বলব! আমার কথার ভান্ডার অনেক কম। এক/দুই কথা বলার পরই আমার কথা ফুরিয়ে যায়। আমার ছেলেমেয়েও হয়েছে আমার মতো। ওদেরও বেশি কথা থাকে না। আমাদের কথা চালাচালি হয় হোয়াটসঅ্যাপে। অবশ্য আমরা কথা কম বললেও জেসমিন আমাদের সবারটা একাই পুষিয়ে দেয়। এমন অনেক দিন যায়, যখন আমি জেসমিনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগই পাই না।

২.
তাতে আমার সুবিধাই হয়েছে। যত কম কথা, তত শান্তি। আমি যেহেতু গর্তের মানুষ, তাই আমি বই পড়ি। গত কয়েক দিন থেকে হাঁটুর ব্যথার জন্য টেবিল–চেয়ারে বসতে পারছি না। তাই লেখালেখি কার্যত বন্ধ। তা সত্ত্বেও ঈদ উপলক্ষে উত্তর আমেরিকার পত্রিকাগুলোতে তিন/চারটা গল্প লিখেছি। আমি ডেস্কটপে লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমার ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান আমাকে বলে দিয়েছে হাঁটু, গোড়ালি বা পিঠের ব্যথা জাতীয় ক্রনিক ব্যথার কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই। আমাকে এসব যন্ত্রণা নিয়েই বাঁচতে হবে। কি আজব কথা! আজকে আমার প্রিয় মানুষ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সৈয়দ রানা মুস্তফির সঙ্গে কথা হয়েছে। ভারতের হরিয়ানায় মেদান্তা হাসপাতালের খোঁজ পেয়েছি তার কাছে। সেখানে যাব কখনো।

৩.
এবার আসল কথায় আসি। আমি সাধ্যমতো বই কিনি এবং সেই বই বহন করে নিয়ে আসি কানাডায়। প্রতিবছর আমার কাপড়চোপড় ঢাকায় রেখে আসতে হয়। এখন পর্যন্ত পাঁচ ছয় সেট কাপড় জমেছে। ভুলে যাই, কী আছে সেখানে। আমি যে দুইটা লাগেজ পাই, সেগুলোতে থাকে বই। নিজের লেখা বই যেমন থাকে, তেমনি যেগুলো কিনি সেগুলো থাকে। অন্যের বইও বহন করি এবং যেগুলো গিফট পাই তাও আনার চেষ্টা করি। এবার অন্যান্য বইয়ের সঙ্গে এনেছি আনিসুল হকের উপন্যাস আলো-আঁধারের যাত্রী। আগের বছর এনেছিলাম এই পথে আলো জ্বেলে।
এই সিরিজের আগের দুটো বই যারা ভোর এনেছিল এবং উষার দুয়ারে আমার পড়া হয়নি। চেষ্টা করছি জোগাড় করার। তবে আখতার হুসেন সম্পাদিত জনকের মুখ গ্রন্থ থেকে আনিসুল হকের যারা ভোর এনেছিল উপন্যাস থেকে ‘আমি মাথা নিচু করি না’ অংশটুকু পড়েছি। একটু দেরিতে হলেও আলো-আঁধারের যাত্রী পড়ে শেষ করলাম। বেশ চমৎকার বই। আমার ব্যথার দিনে এই বই আমাকে ইতিহাসের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। মহান নেতা বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব, শেখ হাসিনা ও অন্যান্য চরিত্রগুলো চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছিল। অবশ্যই এই বই নতুন প্রজন্মের পাঠকদের পড়া উচিত। ধন্যবাদ আনিসুল হক আপনাকে।