ছেলেধরা দৈত্য ও মামুন

মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। দুনিয়ায় কতজনের কত কী হয়! লটারি পায়, বিদেশ যায়, বড় লোকের সুন্দরী মেয়ের সাথে বিয়েও হয়, কিন্তু মামুনের কপালে কিছুই নেই। আজ একটা বই বের হওয়ার কথা ছিল। প্রকাশক বলল, ‘পরের বছর। আমাদের হাতে ভালো কিছু বই এসেছে, নামীদামি লেখকদের।’ ওদিকে পলি আজ সারা দিন ফোন ধরেনি। এখন গুজবটাই সত্যি মনে হচ্ছে। পলিকে নাকি কোন এক ছেলের সাথে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। অনেকে নিচু স্বরে বলে গেছে, ‘সেটা রাফেল।’ মামুন তা বিশ্বাস করেনি দেখে তারা মুচকি হেসেও গেছে।
চাকরি তো হলোই না। ভিসাও হলো না। এইসব চিন্তা করতে করতে মামুন রমনার একটা বেঞ্চে, গাছের নিচে বসে হতাশ মনে সিগারেটের প্যাকেট বের করল। সন্ধ্যার এই সময়টা বিষণ্ন। আজ এই মুহূর্তে লাল মোচের বাসায় তুমুল আড্ডা হচ্ছে। সেখানে মামুন নেই দেখে একের পর এক সবাই ফোন করছে। মানুষ যখন বিষণ্ন হয়, তখন বিষণ্ন জায়গায় কেন থাকতে চায়, সেই প্রশ্ন মামুনের মনে এল না।
গ্যাস পেটো লাইটারের চাকা ঘুরাতেই ঘষা খাওয়ার ‘ঘরত’ শব্দ হলো, কিন্তু সেটা জ্বলল না। যখন জ্বলে না, তখন জীবনে কিছুই জ্বলে না। এমনকি লাইটারও না। অসহিষ্ণুভাবে চাকা ঘুরিয়ে লোহার লাইটারের চকমকি পাথর মামুন বারবার ঘষতে লাগল। তখন একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটল।
লোহায় চকমকি পাথর ঘষা খাওয়ার খস শব্দ নয়; ধুম করে একটা কলজে কাঁপানো শব্দ হলো। কিন্তু কোনো আগুন বের হলো না। মামুন আশ্চর্য হয়ে দেখল, অনেক ধোঁয়া বের হচ্ছে। লাইটারের ধোঁয়া না। একেবারে পাক খেয়ে খেয়ে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। এইটা আবার কী সর্বনাশের লাইটার! এমন বিদঘুটে ধোঁয়া বের হবে কেন?
মুহূর্ত পরে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে গা ছমছম করে উঠল মামুনের। সেই ধোঁয়া একটা রূপ নিচ্ছে। এটা সত্যি হতে পারে না। তার কি হতাশায় মতিভ্রম হচ্ছে? সেই কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী থেকে এবার একটা মানুষের অবয়ব বেরিয়ে আসছে। ঠিক মানুষও না, এটা কী তাহলে একটা দৈত্য? মামুনের হা করা মুখ থেকে অজান্তে সিগারেট পড়ে গেল। মামুন কিছুতেই এটাকে কল্পনা ভাবতে পারছে না। দৈত্যটার দপদপ করা শিরা পর্যন্ত সে দেখতে পাচ্ছে।
এবার সে শুনতে পেল, ‘হুজুর, আপনার তিনটি আশা আমি পূরণ করব।’
তাহলে আলাদিনের চেরাগ! জাহাজ ভাঙা ফার্নিচারের দোকান থেকে সে কিম্ভূত লাইটারটা কম দামে কিনেছিল। সেটাই কী না জাদুর চেরাগ!
দৈত্য লম্বায় তার দ্বিগুণ হবে। মাথা উঁচু করে তার বিনয়ী, সদা-প্রস্তুত ভাবটা দেখে মামুনের সন্দেহ, ভয় সব কেটে গেল। বুকের ভেতর এবার খুশি নেচে বেড়াতে শুরু করল। দৈত্য অতি বিনয়ী ভঙ্গিতে বলল, ‘হুজুর, একটা ছোট্ট শর্ত আছে।’
-কী শর্ত?, গম্ভীর গলায় কথাটা বলতেই মামুনের মনে হলো, সে আসলেই এ দৈত্যের মুনিব।
-হুজুর, কোনো ব্যবহারিক জিনিস চাওয়া নিষেধ আছে। স্বর্ণ-মুদ্রা, হেরেমখানা, জুড়ি-গাড়ি এই সব চাওয়া যাবে না। আপনার চরিত্রের কোনো কিছু চাইতে পারেন। ধরুন, আপনি ব্যায়াম করতে চান; কিন্তু পারেন না। অথবা সময়ানুবর্তিতা আপনার মধ্যে নেই। সেসব গুণ মুহূর্তের মধ্যে আপনার ভেতর ঢুকিয়ে দেব। সময়ের পাঁচ মিনিট আগেই যেখানে যাওয়ার সেখানে চলে যাবেন।
-বলে কী? সময়ের আগে পার্টিতে গিয়ে কী সে একা ভেরেন্ডা ভাজবে? এই বলদের ঘিলু কম না থাকলে কী আর দৈত্য হতো?
দৈত্য কিছু বুঝতে পেরে বলল, ‘হুজুর, উল্টোটাও চাইতে পারেন। কোনো কিছু বাদ দিতে চান, কিন্তু পারছেন না। যেমন সিগারেট। আপনার কোনো কষ্টই হবে না। কাল ঘুম থেকে উঠে, আপনি যে সিগারেট খেতেন, সে কথাও মনে থাকবে না। অথবা আপনার রাগ বেশি। সেটা কমিয়ে দিতে পারি। অথবা বহু নারীতে আসক্ত, এক প্রেমিকায় মন থাকে না, সেটা অনায়াসে বাদ দিয়ে দেওয়াতে পারি।’
যতই শুনছে ততই মামুনের মুখ বেজার হয়ে যাচ্ছে। বলে কী ব্যাটায়? এখন সিগারেট ছাড়াবে? তাহলে আনন্দটা কোথায়? রাগ? ধুর, এ পুরাই বলদ। রাগ না থাকলে আবার পুরুষ মানুষ না কি?
বিনয়ী কিন্তু নির্বোধ দৈত্য বলল, ‘হুকুম করুন হুজুর। কী গুণ চান বলুন। নাকি বদভ্যাস বাদ দিতে চান?’
কিছু একটা ভালো খুঁজে বের করতে হবে। হিরা-জহরত, নিদেন পক্ষে ডিওএইচএসে একটা দু হাজার স্কয়ারফিটের ফ্ল্যাট পেলেও ভালো হতো। কিন্তু এই ব্যাটা তো সেসব দিতে চায় না। আর কী চাওয়া যায়? গুণের মধ্যে? যেমন লাগসই কথা বলে কাজ উদ্ধার করা। বাক চাতুর্য? হ্যাঁ, এটাতে অনেক কাজ হবে। তারপর? আর কী? আর কী কাজে লাগবে? ব্যবসায়িক বুদ্ধি? হ্যাঁ, এটা হলেই তো টাকা আসবে। আরেকটা কি চাওয়া যায়? এবার একটা কিছু তুলে নিতে বলা যাক। কী সেটা? ভয়? নাকি লজ্জাটা একটু কমিয়ে দেবে? নাহ, ভয়টাই ঠিক আছে।
একে একে তিনটা ইচ্ছার কথা বলল মামুন। পাহাড়ের মতো দাঁড়ানো আলাদিনের চেরাগের দৈত্য জলদগম্ভীর স্বরে বলল, ‘জো হুকুম জাহাঁপনা। আপনার ইচ্ছা সত্যি হবে। আমি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার তিনটা ইচ্ছাই পূরণ হবে।’
এই বলে হঠাৎ দৈত্যটা আবার ধোঁয়া হয়ে ধীরে ধীরে বাতাসে মিলিয়ে গেল। মামুন এখন একা। চারদিকে ভুতুড়ে অন্ধকার কিন্তু তার ভয় লাগছে না। নিজের ভেতর বেশ কিছু পরিবর্তন মামুন টের পাচ্ছে। কিন্তু পরিবর্তনটা আসলে কি, তা বুঝতে পারছে না।
কোত্থেকে দু’জন পুলিশ এসে তাকে ধমকে উঠল, ‘এই মিয়া, এখানে কি করো? দুই নম্বরি নাকি?’
মামুন নরম গলায় বলল, ‘দেখুন পুলিশ ভাই, মনের দুঃখে এখানে বসে আছি।’
-শালা দুই নম্বর, নিশ্চয়ই ধান্দায় আছে। হাইজ্যাকার নাকি?

-ভাই, গালি দিয়ে ফেললেন? দেখুন আমার পকেটে একটা টাকা নেই। অথচ আমার টাকাওয়ালা বন্ধুরা রমনা রেস্তোরাঁয় ফুর্তি করছে। ভাবতে পারেন, কেমন মন খারাপ হয়?

পুলিশের মধ্যে একজন সার্জেন্ট বলে মনে হলো। তার দিকে তাকিয়ে মামুন বলল, ‘ভাই, আপনারা যে আমার কথাটা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন, তাতেই মনটা হালকা হয়ে গেল। আর কিছুক্ষণ এখানে বসি?’
সার্জেন্ট হঠাৎ নরম গলায় বলল, ‘আপনার রমনা রেস্তোরাঁর জন্য কত টাকা লাগবে?’
-এই পাঁচ শ। ওরা তো অনেক খায়, অনেক খরচ করে। পরে বলে হিজ হিজ হুজ হুজ।
-আমি আপনাকে পাঁচ শ টাকা দিচ্ছি। আমাকে ভাই মনে করে টাকাটা নিন। ওখানে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারুন।
নিজের বাকচাতুর্যে সে নিজেই অবাক। সত্যি হয়েছে তাহলে? টাকাটা নিতে নিতে মামুন বলল, ‘মানুষ কেন যে বলে পুলিশ খারাপ, আপনার মতো মহানুভব ব্যক্তি আমি একজনও দেখিনি। এই না হলে মানুষ!’
রাতে মোড়ের বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ওশেনিয়ায় গিয়ে সে মালিককে ডেকে এক ঘণ্টা আলাপ করল। মালিক ছোটখাটো কিন্তু ঘোড়েল টাইপের গাফফার ভাই। বারবার তাকে চা খাওয়ালেন, সিগারেট সাধলেন। শেষে মামুনকে তার বিজনেসের পার্টনার করার প্রস্তাব দিলেন। এমনকি কোনো পুঁজিও দিতে হবে না। শুধু বুদ্ধি দিলেই হবে।
দিনটা যে কী ভালো গেল, বলার মতো নয়। নিজ মনে আনন্দ উপভোগ করতে করতে মামুন গভীর রাতে ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে উঠে তার মনে হলো, এবার তাহলে নতুন জীবনের শুরু। সফল মামুন। ঝকঝকে মামুন। চৌকস মামুন। বিত্তবান মামুন। নতুন জামা পরে সে রাস্তায় বেরোল।
একটু এগোতেই দেখল, বাচ্চাদের স্কুলের সামনে গোলমাল। আরও এগিয়ে গেল সে। শুনল ছেলেধরা। ভিড়টার ভেতর ঢুকে পড়ল মামুন। এদের চামড়া ছিলে লবণ লাগিয়ে দেওয়া উচিত। মারার জন্য হাত-পা নিশপিশ করছে। মানুষ ঠেলে আরও ভেতরে ঢুকল সে। একটা মহিলা মাটিতে পড়ে আছে। এখন এসেছে মহিলা ছেলেধরা! বাচ্চাদের ধরে নিয়ে গিয়ে গলা কেটে ফেলবে। কী অমানুষ! কষে কয়েকটা লাথি দিয়ে ওখান থেকে চলে এল মামুন।
মতিঝিল স্টক এক্সচেঞ্জে গেল মামুন। সেখানে একজন বড় ব্রোকারকে সে চেনে। হানিফ ভাই। তার সাথে সহজেই দেখা করতে পারল। কিছুক্ষণ পর তিনিও আগ্রহভরে মামুনের কথা শুনতে থাকলেন। তারপর প্যাটিস সাধলেন, কফি সাধলেন। এক প্যাকেট লন্ডন ফাইভ ফিফটি ফাইভ সিগারেট দিয়ে দিলেন।
তাহলে জব্বর দুইটা গুণ সে নিতে পেরেছে। কী ভাগ্য তার! সাক্ষাৎ আলাদিনের দৈত্য চলে এল! মামুনের কাউকে সব খুলে বলতে খুব ইচ্ছা করছে। কিন্তু এসব বললে যদি গুণ চলে যায়? ভয়টা একদম নেই সে বুঝতে পারছে। এই হানিফ ভাইয়ের সামনে সে আগে কাঁচুমাচু করে কথা বলত। আর এখন?
রাস্তায় শুনল কোন এক মহিলাকে মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। বাসায় ঢুকতেই মামুন আঁচ করল ভয়ানক কিছু ঘটেছে। বাবা এসে কাঁপা গলায় বললেন, ‘মামুন পালা! পুলিশ আসবে এখনই।’
মলির কথাতে সে ব্যাপারটা বুঝতে পারল। সেই ছেলেধরা আসলে একজন ভদ্রমহিলা ছিলেন। তাকে গণপিটুনি দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে মামুনকেই পাশবিকভাবে মারতে দেখা যাচ্ছে। মলির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে সে নিজেই দেখল। কমেন্টস দেখে তার বাড়তি সাহসের পরেও শরীর ঠান্ডা হয়ে এল। কেউ লিখেছে, ‘এই ব্যাটার চামড়া ছিলে কুত্তাকে খাওয়ানো উচিত।’ আবার কেউ, ‘প্রকাশ্যে মেরে ফেলা উচিত’ কিংবা ‘এইটা সিটি কলেজের মামুন।’ কেউ লিখেছে, ‘এই জানোয়ারও ঠিক বেঁচে যাবে। কিচ্ছু হবে না।’ তখন পুলিশের গাড়ির সাইরেন শুনতে পেল মামুন। বাড়ির সবাই বলছে, ‘পালা, পালা। ক্রস ফায়ারে যাবি তো!’
প্রায় দৌড়ে সে পালিয়ে গেল। ব্যাপার এত ভয়ংকর দাঁড়িয়েছে এখানে তার বাকচাতুর্যেও কিছু হবে না। অনেক ঘুরে সেই বেঞ্চটাতে এসে বসেছে মামুন। ফোন বন্ধ করার আগে যা দেখেছে, তাতে সে নিশ্চিত তার আর বাঁচার কোনো উপায় নাই। প্রতি মিনিটে সেই ভিডিও হাজার হাজার নতুন মানুষ দেখছে। এই অল্প সময়ে ৪ লাখ ১৫ হাজার ভিউ! তার নামে ‘পিশাচ’, ‘পশু’, ‘সমাজের বিষ’—এই সব লিখেছে। ফোনটা সে রাস্তার পাশের ডাস্টবিনে ফেলে দিল।
মামুন রমনা পার্কের বেঞ্চে বসে চিন্তা করছে, তাকে তাহলে মেরে ফেলবে? মানুষ এমন কেন? এত হুজুগ কেন? কারও কি বিবেক নাই? মানবিকতা নাই?
তারপর হঠাৎ চিন্তা হলো, সেও একজনকে মেরে ফেলেছে। মামুনকে অন্যে মেরে ফেলতে চাওয়ার তবু কারণ আছে। অপরাধের ভিডিও আছে। কিন্তু তার ছেলেধরা সন্দেহে ওই মহিলাকে লাথি দিয়ে মেরে ফেলার কোনো কারণই নেই। প্রথম কে, কীভাবে ছেলেধরা সন্দেহ করেছে, তাও সে জানে না। জানতেও চায়নি! তাহলে সে তো এক ঘৃণ্য অপরাধী? ইস, সব ঠিক যাচ্ছিল, কিন্তু এটা সে কী ভুল করে ফেলল?
আরও আধা ঘণ্টা পর তার মনে হলো, আচ্ছা, ওই তিনটা গুণ নিয়ে কী লাভ হলো? এখন তো তার জীবনই শেষ! ইস, যদি জানত কত বড় বিপদ হতে যাচ্ছে? কী সহজ ছিল ব্যাপারটা! চাইলেই হতো, আমি যেন কাউকে নির্যাতন না করি। অথবা অন্যায় না করি। সব অটোমেটিক হয়ে যেত। তার কোনো কষ্টই করতে হতো না। রাগ কমাতে রাজি হলো না কেন? বহু নারীতে আসক্তি কমাতেও তো সে রাজি হয়নি! কেন হলো না? ইস আরেকবার যদি সুযোগ পেত, আরেকটিবার?
এর মধ্যে লাইটার টিপে টিপে সে হাতে ফোসকা ফেলে দিয়েছে। লাইটার জ্বলে, কিন্তু ধোঁয়া বের হয় না। আরও আধা ঘণ্টা পর তার মনে হলো, সে নিজে যা, আসলে তার চাওয়াটাও তা-ই। ভালো চাওয়ার জন্য একজন ভালো মনের মানুষ হওয়া দরকার। সে ভেবেছিল চামে চামে অর্থ বিত্ত করে জীবনটা উপভোগ করে যাবে। অন্যের কী হচ্ছে, তাতে তার বিন্দুমাত্র যায়-আসে না। মামুন আরও বুঝল, ভালো হতে চাইতে পারাটাই একটা বড় গুণ, নিজের খারাপটা দেখতে পারাটাই একটা বড় গুণ। সেই গুণ তার মধ্যে ছিল না। গোড়ায় গলদ, তাই দৈত্য দিয়েও কোনো কাজ হলো না।
আরও আধঘণ্টা পরে তার মনে হলো, এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। সে এর আগেও তিনজনকে পকেটমার সন্দেহে পিটিয়েছে। তাদের মধ্যে একজন সেই গণপিটুনিতে মারা গেছে। সেই লোকটিও পকেটমার ছিল না। মামুন তাহলে নির্যাতক এবং খুনি! আজকের এই ঘটনা না ঘটলে সে আরও এমন করত। আরও মানুষ কষ্ট পেত। আরও পরিবার পথে বসত।
মামুন দেখতে পেল, কয়েকজন পুলিশ তার দিকে এগিয়ে আসছে। তার খুব একটা ভয় লাগল না। সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘দেখুন আমি একদম নিরপরাধ। আমার মতো দেখতে আরেকজন এ কাজটি করেছে।’
তখন সামনের পুলিশটাকে সে চিনতে পারল। সেই সার্জেন্ট, যে তাকে পাঁচ শ টাকা দিয়েছিল। সে ক্রসফায়ার শব্দটা শুনল। মনের ভুলও হতে পারে।
শুধু একটা দুঃখ থেকে গেল। আরও কত নিরীহ মানুষকে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কষ্ট দিয়ে দিয়ে মারা হবে। ঘিরে ধরা হিংস্র জনতা কাউকে পেটাচ্ছে দেখে আরও কত মামুন ভিড় ঠেলে নিজেও পেটাতে যাবে। সেগুলোর একটাও সে থামাতে পারল না।