সবার জন্য অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং

‘নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়।’ উত্তমকুমার গাইছেন। গাইছেন না আসলে ঠোঁট মেলাচ্ছেন। গাইছেন আদতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। চলচ্চিত্রের নাম ইন্দ্রানী। খুবই রোমান্টিক দৃশ্য; উত্তমের চোখে স্বপ্নের আবেশ।

তবে পথে যাদের জীবন, যাদের মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই নিয়ে রীতিমতো আইঢাই অবস্থা হয় হামেশাই, তাদের পক্ষে এই ছোট নীড়ের পিঠে আকাশের উপমা ঠিক ভালো লাগার কথা নয়। আর এই দলে যদি থাকেন রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে ‘অবৈধ’ চিহ্নিত মানুষেরা, তবে হয়তো ক্ষোভ উগরে দিতেও তাঁরা দেরি করবেন না। এই মানুষদের ঠিকই বুঝতে পেরেছেন নিউইয়র্ক নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। এই বৈরী সময়ে তিনি অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি আরও একবার সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

নিউইয়র্ক নগরী এমনিতেই ব্যয়বহুল। কিছুদিন ধরে এখানকার আবাসন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে নিউইয়র্কত্যাগী মানুষের খবর আসছে। ব্যয় সামলাতে না পেরে শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অনেকে। এই দলে এমনকি মধ্যবিত্তরাও রয়েছে। এই অবস্থায় নগরীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অবস্থা সহজেই অনুমেয়। হ্যাঁ, তাদের জন্য অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং নামে একটি প্রকল্প রয়েছে, যেখানে কম খরচে আবাসনের নিশ্চয়তা মেলে। মেলে মাথা গোঁজার ছোট হলেও একটি নীড়, যেখানে বসে অন্তত বিরাট আকাশের উপমা দিয়ে জীবনের ক্ষত সারানোর স্বপ্নটা বোনা যায়। কিন্তু এই সুযোগও এত দিন ওই ‘অবৈধ’ তকমা জোটা অভিবাসীদের জন্য ছিল রুদ্ধ। এবার সেই বাধটি ভেঙে দিয়েছেন মেয়র। এখন থেকে অবৈধ অভিবাসীরাও নগরের অ্যাফোর্ডেবল হাউজিংয়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই আবেদন করতে এখন থেকে আর ক্রেডিট কার্ড ও সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর জমা দিতে হবে না। ফলে আবেদন করার দরজাটি খুলে যাচ্ছে। বাকিটা লটারির হাতে।

মেয়র বিল ডি ব্লাজিওর এই পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবেই আশাবাদী করে তুলেছে অবৈধ অভিবাসীদের। কিন্তু সমালোচনাও কম হচ্ছে না। সমালোচনার তিরটা বেশি আসছে রিপাবলিকানদের দিক থেকে। এটা অনুমিতই। এর বাইরেও অনেকে এর সমালোচনা করছেন। কারণ, এই সুবিধা অবৈধ অভিবাসীদের দেওয়া হবে করের অর্থে। এই যুক্তি ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তবে কথা হচ্ছে ‘অবৈধ’ চিহ্নিত অভিবাসীরাও নানাভাবে আর্থিক কর্মকাণ্ড চালান, যা থেকে কিছু অর্থ সরকারের কোষাগারেও জমা পড়ে। ২০১৬ সালে দ্য ইনস্টিটিউট অন ট্যাক্সেশন অ্যান্ড ইকোনমিক পলিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আমেরিকার ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীর কাছ থেকে বছরে ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি জমা হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। অঙ্কটি নেহাত কম তো নয়।

আমেরিকাজুড়ে অভিবাসনবিরোধী যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, অভিবাসীদের কর্মমুখী করার নামে সামাজিক নিরাপত্তা যেভাবে সংকুচিত করা হচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটে ডি ব্লাজিওর এই পদক্ষেপের গুরুত্ব মানবিক দিক বিবেচনায় অনেক। এর মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীরা সরকারি আবাসনে থাকার সুযোগ পেয়ে যাবেন, এটা বলার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এর মাধ্যমে নগরী তার সব বাসিন্দাকে সমমর্যাদা দিচ্ছে—এই কথা জানিয়ে দিল। মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য, যা অনুসরণ করতে পারে আমেরিকার অন্য নগরগুলো।