যুদ্ধ ও প্রেমের 'পারস্য পরবাসে'

সাম্প্রতিক বছরে নতুন যত বই পড়েছি তার মধ্যে হুমায়ূন কবিরের ‘পারস্য পরবাসে’ সবচেয়ে ভালো লেগেছে। এটি অসামান্য একটি উপন্যাস যা বিষদ আলোচনার দাবি করতে পারে। লেখকের আগের ‘তিনজন তীর্থযাত্রী’ এবং ‘এক জীবনের কথা’ বই দুটি পড়া থাকায় আলোচ্য উপন্যাসটি কেনার সঙ্গে সঙ্গে পড়ার তাগিদ অনুভব করিনি। এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বইটি সম্পর্কে কয়েকজন বিশিষ্ট লেখকের অভিমতের একটি সংবাদ প্রতিবেদন, এবং ‘কালি ও কলম’ শিল্প-সাহিত্য পত্রিকায় একটি চমৎকার পুস্তক সমালোচনা পড়েছি বলেও এটি পড়া হয়নি এত দিন।

সম্প্রতি হাতের কাছে নতুন কিছু না থাকায় অনেকটা অপারগ হয়েই ‘পারস্য পরবাসে’ পড়া শুরু করি। কিন্তু মলাট উল্টানোর পর ১৯০ পৃষ্ঠার বইটির প্রতিটি বাক্য ও বর্ণনায় বুঁদ হয়ে লেগে থেকে বিকেলের নির্ধারিত কাজই শুধু নয়, রাতের খাবারের কথাও যে কীভাবে ভুলেছিলাম তা ভেবে আশ্চর্য হচ্ছি। বলা বাহুল্য যে এই বইটি আগের পড়া দুটি থেকে অনেক পরিশীলিত ও সুখপাঠ্য। 

ধরে নিয়েছিলাম এটি ভ্রমণমূলক একটি বই হবে। কিন্তু পড়তে গিয়ে দেখলাম অত্যন্ত সাবলীল ভাবে সমসাময়িক ঘটনা, প্রকৃতি, সাহিত্য ও মানুষের চরিত্র চিত্রায়ণ করে ভালোবাসায় মোড়া এটি একটি অসামান্য উপন্যাস। বিশ্বাস, যুদ্ধ ও রাজনীতি মানুষের জীবন ও অন্তরিস্থ ভাবনাকে কীভাবে আলোড়িত করতে পারে তার এক সার্থক রূপায়ণ। অন্যের পুস্তক আলোচনা পড়ে বা শুনেই বসে থাকলে বইটির রসাস্বাদন আমার কখনোই করা হতো না।

এক সময় বামপন্থী রাজনীতিতে বিশ্বাসী লেখক জীবিকার্জনের আশায় এবং একই সঙ্গে বেদখল হয়ে যাওয়া বিপ্লব পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশে ডাক্তারি পরীক্ষা দিয়েই পাড়ি দেন ইরানে। তখন কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন বামপন্থী তুদেহ পার্টি, মধ্যপন্থী ধর্মনিরপেক্ষ মোজাহেদিন এবং ইরানি মোল্লাতন্ত্রে বিশ্বাসী সম্মিলিত শক্তির আন্দোলন মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভিকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। ফলশ্রুতিতে পশ্চিমা সভ্যতা বিরোধী শক্তি ইমাম খোমেনির নেতৃত্বে ইরানের ক্ষমতায় আসীন। দেশ পুনর্গঠনের সঙ্গে সঙ্গে খোমেনি যখন বিপ্লবের দুই অংশীদার মোজাহেদিন এবং তুদেহ পার্টির প্রভাব খর্ব করায় ব্যস্ত তখনই পার্শ্ববর্তী দেশ ইরাক আক্রমণ করে বসে ইরানকে। ক্ষমতাসীন মোল্লারা তখন এই দুই ফ্রন্টেই যুদ্ধে জড়িয়ে আছে।

এই পটভূমিকায় বাংলাদেশ থেকে আগত তরুণ এই লেখক-ডাক্তারের পরিচয় হয় আনুশেহসহ সুন্দরী দুই ইরানি যুবতী এবং রাষ্ট্রক্ষমতার প্রভাবশালী এক যুবকের সঙ্গে। এই তিনজনের চোখে দেখা ইরানের ইতিহাস, সংগীত, কবিতা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও প্রকৃতি অপরূপ হয়ে প্রকাশ পেয়েছে লেখকের কলমের ডগায়। তার সঙ্গে সঙ্গে হয়েছে স্বচক্ষে অবলোকন করা ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, অমানবিক যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং ইরানিদের দেশপ্রেম। আর এর সবই হৃদয়গ্রাহী করে সাজানো হয়েছে একে অপরের সঙ্গে সাজুয্য রেখে, অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সুন্দর একটি মালা গাঁথার মতো করে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে এক অনবদ্য উপন্যাসের। পড়তে গিয়ে চোখে জল এসেছে কখনো অপার এক ভালো লাগার শিহরণে, কখনো কারও উপদেশ বাণী শুনে, আবার কখনো চরিত্র সৃষ্টিতে লেখকের দক্ষতা দেখে। কোথাও কোনো ছন্দপতন নেই, নেই বর্ণনার আতিশয্য, অথচ লেখা হয়েছে ছোট ছোট বাক্যে খুব সাধারণ ভাষায়। এখানেই বইটির অসাধারণত্ব।

এই উপন্যাস আমাদের সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘শবনম’ এর কথা মনে করিয়ে দেয়। যেখানে হাফিজ, সাদী আর রুমীসহ আরও অনেক পারস্য ও ভারতীয় কবির কাব্য আলোচনাই ছিল প্রধান চরিত্র দুটির সেতুবন্ধন। ‘পারস্য পরবাসে’ উপন্যাসের মূল চরিত্রগুলোর সঙ্গেও লেখকের সম্পর্ক গভীর হয়ে ওঠে হাফিজ, জয়নাল আক্তার ও ওমর খৈয়ামের দর্শন ও কাব্য আলোচনার ভেতর দিয়ে। ‘শবনম’ আফগানিস্তানে বাদশাহ আমানুল্লাহ, বাচ্চায়ে শাকো এবং তালেবুল এলম (বা তালেবান) এর বিরোধের চরম ক্রান্তিলগ্ন সময়ের ঘটনা। তেমনি ‘পারস্য পরবাসে’ আধুনিক ইরানের শাহ, আয়াতুল্লাহ এবং রিপাবলিকান গার্ডের হিংসা-ভালোবাসার অনুরূপ এক ক্রান্তিলগ্নে রচিত। মুজতবা আলীর আবদুর রহমান চরিত্রটির বদলে লেখক হুমায়ূন কবীরের আগা ইব্রাহিমিকে দেখতে পাই, কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য সংবলিত পাহাড়ের পাদদেশে ঝরনার পাশে বসে এক বান্ধবীর কণ্ঠে শোনা মৃত্যু-বিরহ-কাতর গানটিও মুজতবা আলীর আরেক লেখায় জনৈক যাযাবর শিল্পীর গাওয়া ‘যদি প্রিয়ার মুখের একটি চুম্বন পাই’ সুরলহরীর কথা মনে করিয়ে দেয়। অন্যদিকে গাধার পিঠে চড়ে প্রাণটি হাতে নিয়ে দুর্গম পাহাড়ের চূড়া দিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি ধীরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘যখন পুলিশ ছিলাম’-এ অনুরূপ বর্ণনার সাদৃশ্য খুঁজে পাই। সময় ও ভৌগোলিক দূরত্বে অবস্থান করেও বিশ্ব সাহিত্যে এ ধরনের সাদৃশ্যের উপমা ভূরি ভূরি পাওয়া যায়। কিন্তু আঙ্গিকের কিছু কিছু সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও বক্তব্যের স্বকীয়তাসহ সব মিলিয়ে ‘পারস্য পরবাসে’ হুমায়ূন কবির যা সৃষ্টি করেছেন তা তাঁর নিজস্ব আলোয় আলোকিত।

ছোট ছোট সহজবোধ্য বাক্যে বলা সাধারণ কিছু কথোপকথনের ভেতর দিয়ে ইরানি দুই সুন্দরী লেখকের অনুরাগী হয়ে পড়ে। লেখকও এর বাইরে থাকেন না। তাঁদের মাঝে অভিন্ন যোগসূত্র হচ্ছে পারস্যের ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি, যুদ্ধ, রাজনীতি আর মানবিক মূল্যবোধ। কার প্রতি লেখকের আকর্ষণ বা পক্ষপাতিত্ব বেশি তা বুঝতে নিজের সঙ্গে পাঠকের বোঝাপড়া করতে হয়। পারস্পরিক এই আকর্ষণ আদৌ প্রেমের দিকে অগ্রসর হচ্ছে কিনা তাও বোঝা যায় না। কিন্তু যুদ্ধ, ধর্মবিশ্বাস ও সামাজিক অনুশাসনের সংঘাতের মাঝে এই ত্রয়ীর পরস্পরের প্রতি যে এক গভীর সমবেদনা, অনুরাগ ও সম্মানবোধ গড়ে উঠেছে তা পাঠককে আপ্লুত করে তোলে। অব্যক্ত প্রেমের এই সম্পর্কটি উপন্যাসের প্রায় শেষে প্রথম নারী আনুশেহর মুখে ‘আমাকে সত্যিই যদি ভালোবাসতে তবে এ কাজটি করতে পারতে না তুমি, আগায়ে ডাক্তার’ উচ্চারিত শব্দগুলো সব সংশয়ের ইতি ঘটায়। ‘এ কাজটি’র অর্থ হচ্ছে মাসউদ কাজেমি নামের প্রেমিককে লেখক কেন যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত করতে পারলেন না। মাসউদ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন।

১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে শাহ শাসিত ইরানে যে এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে যায় সারা বিশ্বে তা ‘ইসলামি বিপ্লব’ নামে পরিচিত। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে নৈরাজ্যময় সেই বিপ্লব ঘটানোর পেছনে যে ইরানের কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন ও সংঘবদ্ধ তুদেহ পার্টি এবং মুজাহেদিনদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল লেখক তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় বিপ্লবোত্তর ইরানে খোমেনি সরকার তুদেহ পার্টির ওপর খড়্গ চালালেও জনমুখী সব কাজকর্ম সোভিয়েত রাশিয়ার অনুকরণে তুদেহ পার্টি রচিত ফর্মুলা অনুযায়ীই করা হচ্ছিল। নারীদের মাথা ও শরীর ঢেকে রাখার বিধান চালু করলেও খোমেনি সরকার এবং ইরানি সমাজ আত্মীয়তায় সম্পর্কহীন নারী-পুরুষের মেলামেশায় বাধা দিত না। এর উদাহরণ ছিল লেখক ও মাসউদ কাজেমির সঙ্গে তাঁদের দুই বান্ধবীর সম্পর্কটি। আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে সৌর ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নওরোজ নামে নববর্ষ পালন অনুষ্ঠানটির উৎপত্তি প্রাক-ইসলামিক যুগে হলেও মোল্লাদের অনুসারী অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পারস্য সংস্কৃতির এই ধারাটিকে এখনো সমুন্নত রেখেছে। এই সব বিবেচনায় ইরানি মোল্লারা আমাদের দেশের ধার্মিকদের চেয়েও অনেক উদার বলে মন্তব্য করেছেন লেখক। ফলে মোল্লাদের শাসন ব্যবস্থার প্রতি লেখকের সূক্ষ্ম একটি পক্ষপাতিত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

কিন্তু এর বিপরীত মনোভাব পোষণ করা ইরানি মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তাঁরা মনে করেন অনৈসলামিক বলে মোল্লা শাসকেরা নওরোজের মতো জনপ্রিয় উৎস বটিকেই শুধু নয়, আনুশেহর মতো সুন্দর পারসিক নাম রাখাকেও নিরুৎসাহিত করে আসছে। শুধু তাই নয়, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, পিতা-কন্যা, এবং মাতা-পুত্র ব্যতীত প্রকাশ্যে অন্য কোনো নারী-পুরুষের মেলামেশা যে আয়াতুল্লাহ শাসিত ইরানে গর্হিত অপরাধ তা আজ সর্বজন বিদিত। কাজেই ইরানের রাজনৈতিক-সামাজিক বিষয় নিয়ে যেসব আলোচনা এই বইতে উঠে এসেছে তা দিয়ে দেশটিকে যাচাই করা ঠিক হবে না। কিন্তু একটি উপন্যাসের অঙ্গ হয়ে এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বলেই বিবেচনা করতে হবে।

ভারত উপমহাদেশে লখনউয়ের মুসলমানদের বচন ও আচরণে পরম সৌজন্যবোধের কথা আমাদের সবারই জানা। ‘পারস্য পরবাসে’ উপন্যাসের চরিত্রগুলোর কথোপকথনে আমরা ইরানি সংস্কৃতি ও সৌজন্যমূলক চমৎকার কিছু বচনের সঙ্গে পরিচিত হই। যেমন অতি নগণ্য হলেও উপহার আদান প্রদান ইরানিদের সংস্কৃতির একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ দিক। হাত থেকে গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে উপহারটির প্রশংসা করে ধন্যবাদ জানিয়ে বলতে হবে ‘তোমার হাতে কখনো ব্যথা না হোক’। কোনো তরুণী বা যুবতীর দেওয়া উপহারের ফুলের তোড়াটি হাতে নিয়ে বলতে হবে ‘এত কষ্ট করার কী দরকার ছিল? আপনি/তুমি নিজেই ফুলের চেয়েও সুন্দর’। এই বচনটি কি সম্ভাব্য প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করে অথবা যেকোনো নারীকে উদ্দেশ্য করে বলতে হবে, লেখক অবশ্য তা উল্লেখ করেননি।

আধুনিক বিশ্বে ‘টিউলিপ’ ফুলের সঙ্গে হল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডসের নামটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু উপন্যাসের কিছু রোমান্টিক পরিস্থিতি ও সাহিত্য আলোচনার ভেতর দিয়ে আমরা জানতে পারি টিউলিপের আদি বাসস্থান হচ্ছে ইরানের জাগ্রোস পর্বতমালার পাদদেশে কুহরাং নামের মায়াময় এক স্থানে। অবশ্য পর্বতের ওপারে পোশতকুরের ‘বন্য সুন্দরী’রা বুক উদোম করে দাঁড়ালে হাতে ধরা স্টেথোস্কোপ কার বুকের ধুকধুকানি শুনতে পাওয়া যায়, এই ডাক্তার-লেখক তা উল্লেখ করেননি। কিন্তু ডাক্তার দ্বারা হাতের নাড়ি পরীক্ষাকালে রবীন্দ্রনাথের কঙ্কাল গল্পের নায়িকা ঠিকই বলেছিল ‘তিনি জ্বরের উত্তাপ বুঝিলেন, আমিও তাঁহার অন্তরের নাড়ি কীরূপ চলিতেছে কতকটা আভাস পাইলাম’।

উপন্যাসের নায়ক নায়িকা এবং গুটিকয় পার্শ্ব চরিত্রের কথোপকথনের মাঝে ইরানের সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিপ্লব ও যুদ্ধের হৃদয়গ্রাহী বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গ পাঠক এক সময় দুই নায়িকা ও নায়কের ত্রিভূজ অনুরাগে সিক্ত হয়ে ওঠে। ভালো লাগার এক ক্লাইমেক্সের দিকে এগিয়ে যায়। আর ঠিক তখনই যুদ্ধে স্বজন হারানো প্রিয় বান্ধবীর স্মৃতি বিলুপ্তিতে প্রধান নারী চরিত্রের মুখে ‘ন্যায়যুদ্ধ হলেও আমি একে ঘৃণা করি’ আর্তনাদ পাঠককে অতি রূঢ় ও বাস্তব এক পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনে।

ঘটনা বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে লেখকের উপলব্ধির সুন্দর সুন্দর প্রকাশও পাঠকের দৃষ্টি এড়াতে পারে না। কয়েকটি উদাহরণ হচ্ছে ‘ধ্বংস আর মৃত্যু ছাড়া যুদ্ধের কোনো সুন্দর বর্ণনা হয় না’, ‘আনুশেহর কাছে হার মেনে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম তার চোখের দিকে’, এবং ‘আশ্চর্য হয়ে দেখি অনুভবের দ্যোতনায় কবিতাও কেমন করে হয়ে ওঠে ধর্মগ্রন্থ পাঠের মতো পূতপবিত্র’।

উপন্যাসের নায়িকার আনুশেহ নামটি আরব্যোপন্যাসের ঘোরলাগা কোনো কাহিনির কাছাকাছি নিয়ে যায়। পারসিকদের কাছে আজও আনুশেহ একটি কাব্যময় নাম। উপন্যাসটির নামও তেমনি আকর্ষণীয় কিছু হতে পারত। সাহিত্যের ছোঁয়া থাকলেও ‘পারস্য পরবাসে’ নামটিতে ভ্রমণের বাইরে প্রেম বা উপন্যাসের ঘ্রাণ পাওয়া যায় না। রবীন্দ্রনাথের ‘পারস্যে’ শুধুই ভ্রমণ কাহিনি। কিন্তু ‘পারস্য পরবাসে’ ভ্রমণ কাহিনির ঊর্ধ্বে।

১৯৮০ থেকে শুরু হয়ে ১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধটি শেষ হয়েছিল। তখনকারই একটি সময়কালে লেখক ইরানে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু ঢাকার ‘সময়’ থেকে ‘পারস্য-পরবাসে’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮ সালে। মাঝে সময়ের ব্যবধান ন্যূনতম ৩০ বছর। বইটি ইরান ত্যাগের পরপরই লেখা হয়ে থাকলে মন্তব্যের কিছু নেই। কিন্তু তিন দশক আগের স্মৃতিকে ভরসা করেই যদি বইটি লেখা হয়ে থাকে তবে লেখকের তীক্ষ্ণ স্মৃতিশক্তির প্রশংসা না করে পারা যায় না।