বই কেন পড়বেন?

সিলেট বিভাগে বিনা মূল্যে বই!
দিনদিন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ কম্পিউটার বা টেলিভিশনে সময় দিচ্ছেন বেশি এবং বই পড়ছেন তুলনামূলকভাবে অনেক কম। কিন্তু, কম্পিউটার/টেলিভিশনে কোন প্রোগ্রাম/নাটক/সিনেমা কি বই পড়ার সমান সুফল বয়ে আনতে পারছে? হয়তো টেলিভিশনে কম সময়ে একটা উপন্যাস থেকে তৈরি করা সিনেমা দেখে শেষ করা যায়। তবে, তার সুফল কখনোই বই পড়ার মতো হয় না। তাই, চলুন দেখি কী কী কারণে বই পড়বেন।
১. এক মাস আগে টেলিভিশনে দেখা আপনার একটি ভালো লাগা প্রোগ্রাম মনে করে দেখার চেষ্টা করে দেখুন- সবকিছু সুস্পষ্টভাবে মনে করতে পারবেন না। কিন্তু, এক বছর আগের আপনার পড়া কোন বইয়ের সব চরিত্রই আপনার মনে থাকবে নিখুঁতভাবে। কারণ? বই পড়ে অর্জিত স্মৃতির স্থায়ীত্ব তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
২. টেলিভিশনে কোন নাটক/সিনেমায় দেখা চরিত্রগুলো আমাদের সেসব চরিত্র সম্পর্কে উপস্থিত একটা ধারণা দেয়। কিন্তু, বইয়ে পড়া গল্প/উপন্যাসের চরিত্রগুলো আমাদের মনে কল্পনার জগতের তুলিতে ছবি আঁকে এবং সেসব ছবি রং করে ভাবনার জগতে ভাবিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
৩. ২০১৩ সালে জাপানের টোহোকু ইউনিভার্সিটির হিকারুর গবেষণা মতে, শিশুরা বেশি টেলিভিশন দেখলে তারা বেশি উত্তেজনাকর ও আক্রমণাত্মক হয়। অন্যদিকে তারা বই পড়লে মননশীল হয়।
৪. আমেরিকার জনপ্রিয় লেখক ও টেলিভিশন অভিনেতা গ্রাউছো মার্ক্স বলেছিলেন, ‘আমি টেলিভিশনকে জীবনে খুবই শিক্ষণীয় উপকরণ হিসেবে দেখি। কারণ, যখনই কেউ টেলিভিশন চালু করে, আমি অন্য রুমে গিয়ে একটি বই পড়ার সুযোগ পাই।
৫. অমাহার ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাস্কার অপরাধতত্ত্বের (criminology) অধ্যাপক জোসেফ শোয়ার্জ এবং ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির কেভিন বেভারের গবেষণা মতে, আক্রমণাত্মক শিশুরা অন্য শিশুদের সঙ্গে টেলিভিশন দেখতে পছন্দ করে।
৬. হতাশ মানুষেরা অন্যদের নিয়ে টেলিভিশন দেখতে পছন্দ করেন। আশাবাদী মানুষের বই পড়েন ও অন্যকে বই পড়তে উৎসাহী করেন।
৭. কয়েকটি গবেষণা মতে, বই পড়লে মানুষের স্ট্রেস কমে এবং চিন্তা ও বোধশক্তি বাড়ে।
৮. বই পড়া মানুষের ভালো ঘুম হয় এবং বই পড়লে মানুষের আলঝেইমার (Alzheimer) বা ‘স্মৃতিশক্তি লোপ’ নামক মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
৯. বই পড়া মানুষ সচল/কর্মঠ থাকেন। অন্যদিকে, টেলিভিশন দেখলে মানুষ অলস হয়ে যান।
১০. বইপড়া মানুষের চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে, টেলিভিশন মানুষের চিন্তাশক্তি কমিয়ে দেয়।
১১. বইপড়া মানুষের জ্ঞান বাড়ায়। টেলিভিশন মানুষের মস্তিষ্কের কোষকে ধ্বংস করে।
১২. ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের গবেষণা মতে, ৬ মিনিট বই পড়লে মানুষের স্ট্রেস ৬৮ ভাগ কমে। টেলিভিশন দেখলে স্ট্রেস লেভেলের এত তারতম্য আসে না।
১৩. টেলিভিশনে কোন দৃশ্য/চরিত্রের বাহ্যিক দিক দেখে সে চরিত্র সম্পর্কে শুধু ধারণা করা যায়। সেখানে বিস্তারিত ভাবার সময় ও সুযোগ থাকে না এবং কল্পনা করা যায় না। অন্যদিকে বইয়ে সেসব চরিত্রের বিস্তারিত লেখা থাকে যা সময় নিয়ে পড়া যায়, ভাবা যায় ও কল্পনা করা যায়।
১৪. বই মানুষের মস্তিষ্ককে সচল রাখতে ব্যায়াম হিসেবে কাজ করে। টেলিভিশন তা পারে না।
১৫. বই পড়ে লেখকের সঙ্গে কল্পনায় কথোপকথন করা যায়, ভাব বিনিময় করা যায়। টেলিভিশনে বা নাটক/সিনেমায় তা সম্ভব হয় না।
১৬. বই পড়া মানুষকে লেখক/গবেষক হিসেবে তৈরি করে। টেলিভিশন তা করতে পারে এমনটি কোন গবেষণায় তা এখনো প্রমাণিত হয়নি।
১৭. মানব জীবনে বইয়ের গুরুত্বের কথা স্মরণ করে টলস্টয় বলেছেন, ‘জীবনে মাত্র তিনটি জিনিসের প্রয়োজন। বই, বই এবং বই।’
১৮. বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, ‘বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেওয়া সাঁকো।’
১৯. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘বই পড়াকে যথার্থ হিসেবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে, তার জীবনের দুঃখ কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়।’
২০. প্রতিভা বসুর মতে, ‘বই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ আত্মীয়, যার সঙ্গে কোনো দিন ঝগড়া হয় না, কোনো দিন মনোমালিন্য হয় না।’
২১. সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, ‘রুটি, মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়তমার নীল চোখ ঘোলা হয়ে যাবে, কিন্তু বই অনন্ত যৌবনা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বই কিনে কেউ কোনো দিন দেউলিয়া হয় না।’
২২. দেকার্তের মতে, ‘ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সঙ্গে কথা বলা।’
২৩. সিডনি স্মিথের মতে, ‘গৃহের কোন আসবাবপত্র বইয়ের চেয়ে সুন্দর নয়।’
২৪. স্পিনোজা বলেন, ‘ভালো খাদ্য বস্তু পেট ভরে কিন্তু ভালো বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে।’
২৫. পরিশেষে আমাদের মনে রাখতে হবে, রাসুল (সা.)–এর প্রতি আল্লাহর প্রথম বাণী ছিল- ‘পড়, তোমার প্রভুর নামে।’