অধরা মাধুরী

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

বইমেলায় লেখকের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেওয়ার দৃশ্য দেখলেই অশোকের মেজাজ বিগড়ে যায়। তবুও আজ চৌধুরী প্যাভিলিয়নের সামনে এসে দাঁড়ায়। লেখিকার কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য তরুণ-তরুণীদের উচ্ছ্বাস দেখে অভিভূত হয়। লেখিকা অধরা মাধুরী সবার নাম জিজ্ঞাসা করে স্মিত হাসি দিচ্ছেন আর এক মনে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। পাশে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দুজন স্বনামধন্য বান্ধবী। একজন পূর্বা, মঞ্চে আবৃত্তি-নাটক করে বেশ নাম করেছে। অন্যজন সংগীত শিল্পী শতাব্দী। এই তিনজন বান্ধবীই বদরুন্নেসা কলেজ থেকে পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। এখন তিনজনই প্রবাসী। ভাবতে ভালো লাগে এই প্রখ্যাত লেখিকার নামটাও অশোকের দেওয়া। প্রথম পরিচয়ের দিনই মাধুরী মজুমদার নাম শুনে অশোক দুহাত প্রশস্ত করে গেয়ে উঠেছিল, ‘অধরা মাধুরী ধরেছি ছন্দ বন্ধনে’। বলেছিল, ‘ওসব মজুমদার টজুমদার চলবে না। আজ থেকে তোমার নাম অধরা মাধুরী।’
সেই থেকে মাধুরী নামের মেয়েটা বাকি বিশ্ববিদ্যালয় জীবন অশোকের ছন্দ বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। অশোকের প্রতিটা লেখার মুগ্ধ পাঠক ছিল মাধুরী। মাধুরী নিজে যা লিখত তা তাঁর নিজেরই পছন্দ হতো না। ওদের ডিপার্টমেন্টের প্রথম দেয়াল পত্রিকায় তার লেখা বাদ পড়ার পর অশোকের কাছে খুব কেঁদেছিল। অশোক বলেছিল, ‘এরপর থেকে সব পত্রিকায় তোমার লেখা যাবে শুধু নামটা হবে অধরা মাধুরী।’
—কিন্তু আমিতো তোমার মতো ভালো লিখতে পারি না। আমার লেখা আমারই পছন্দ হয় না, অন্যরা আমার লেখা সিলেক্ট করবে কেন?
—সে দায়িত্ব আমার ওপর ছেড়ে দাও।
এরপর থেকে ডিপার্টমেন্ট হোক আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে হোক সব প্রকাশনাতেই আধরা মাধুরীর লেখা প্রকাশ হয়েছে। ব্যাপক প্রশংসাও পেয়েছে। শুধু গোপন কথাটি গোপন ছিল দুজনের মাঝেই।
প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখক হিসেবে অশোক প্রচলিত পত্রিকায় লেখা পাঠাত না। লিটল ম্যাগাজিনই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। মাধুরী এসব ঠুনকো আদর্শের ধারে কাছেও ছিল না। অশোক রবি ঠাকুরের ভাষায় বলত, ‘ও যে সুদূর প্রাতের পাখি, গাহে সুদূর রাতের গান।’ সত্যি করেই একদিন মাধুরী সুদূরের পাখি হয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করার পর চৌধুরী মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের একমাত্র উত্তরাধিকারী অরিত্র চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল।
অশোক তখন চাকরি খোঁজা নিয়ে ব্যস্ত। গ্রামের সংসার চালানোর টাকা জোগাড় করতে হয় প্রাইভেট পড়িয়ে। এ রকম পরিস্থিতিতে লেখালেখিটা নেহাত বাহুল্য ছাড়া কিছুই না। তারপরও লেখালেখি চলে। লিখতে ভালো লাগে তাই লেখে। ভাঙা স্যুটকেসের মাঝে কাগজের স্তূপ জমে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যেমন কথায় কথায় বলত—কমিটমেন্ট। এখন সেখানে স্থান করে নিয়েছে অন্য একটি শব্দ-স্ট্রাগল। অন্যদিকে অধরা মাধুরীর একের পর এক বই প্রকাশ হচ্ছে চৌধুরী পাবলিকেশনস থেকে। অশোক বুঝতে পারে না মাধুরী কীভাবে এত লেখে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কোনো দিন তার হাত থেকে একটা ভালো লেখা বের হতে দেখেনি। অশোক মাধুরীর বেশ কিছু বই পড়ে দেখেছে। ভালো লিখছে। বিশেষ করে প্রতিটা লেখার মাঝে বৈচিত্র্য আছে। যেখানে বড় বড় লেখকদেরও হিমশিম খেতে হয় লেখার মাঝে বৈচিত্র্য আনতে। সব লেখকেরই লেখার একটা ফর্ম-একটা স্টাইল চলে আসে, লেখা পড়লেই বলে দেওয়া যায় এটা অমুক লেখকের লেখা। অথচ মাধুরীর প্রতিটি লেখাই আলাদা। বড় বড় পাঁচ তারা হোটেলে বিশিষ্ট সাহিত্য বোদ্ধাদের উপস্থিতিতে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়। বোদ্ধারা বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখকের প্রশংসা করে স্তুতি বাক্য লিখে ধন্য করে-নিজেরা ধন্য হয়। পত্রিকার প্রথম পাতায় নতুন বইয়ের খবর ছাপা হয়। অশোক ভাবে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠার একটি যোগসূত্র আছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিভার যোগসূত্রটা কী? ইচ্ছা করে একবার মাধুরীকে জিজ্ঞাসা করতে—তোমার হঠাৎ করে এমন প্রতিভা বিকাশের রহস্যটা কী? কিন্তু সেটা সম্ভব হয় না। সে এখন অনেক দূরের মানুষ। ‘ও যে সুদূর প্রাতের পাখি, গাহে সুদূর রাতের গান।’ কখনো কখনো এক ধরনের অপরাধ বোধ কাজ করে। তার অযাচিত অতিরিক্ত সহায়তার কারণেই কী মাধুরী বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়নি!
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনও গড়িয়ে চলে। কেউ নামে, কেউ ওঠে। অশোক একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছিল। বিয়ে করেছিল-আরও দশ জনের মতো সংসারী হওয়ার জন্য। কোনো সন্তান হয়নি। বউ বছরখানেক ক্যানসারে ভুগে অশোককে সর্বস্বান্ত করে মাস ছয়েক আগে মারা গেছে। এখন অশোকের কিছু নেই। বইয়ের পাণ্ডুলিপিগুলো নেহাতই পচা কাগজের বান্ডিল। গত বছর অশোকের বউ রিনা যখন খুব অসুস্থ তখন পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দেখে পাণ্ডুলিপি নিয়ে ছোটাছুটি করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি নাম গোপন রেখে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল, শ্রেষ্ঠ পাঁচজনের বই তারা প্রকাশ করবে বইমেলায়। অশোক একটা পাণ্ডুলিপি জমা দিয়েছিল। প্রথম স্থান অধিকার করার পর জানতে পারে সেটার আয়োজক ছিল চৌধুরী পাবলিকেশনস। তারা অফিসে ডেকে শর্ত জানাল—পাণ্ডুলিপিটি তারা টাকা দিয়ে কিনে নেবে। সে ক্ষেত্রে বই প্রকাশ হবে অন্য কারও নামে অথবা ছাপার জন্য টাকা বিনিয়োগ করতে হবে, সে ক্ষেত্রে প্রচার বিপণনের দায়িত্ব চৌধুরী পাবলিকেশনসের। বিক্রীত বইয়ের মূল্যের একটি অংশ লেখক পাবে। অশোকের টাকা খরচ করে বই প্রকাশ করার মতো সামর্থ্য নেই-সেটা সে চায়ও না। তখন রিনার চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন তাই বলে নিজের লেখা অন্যের নামে বিক্রি করতে হবে এটা অশোক মানতে পারে না। চৌধুরী পাবলিকেশনস কিছু কাগজে সিগনেচার নিয়ে তাকে ভাবার জন্য সময় দেয়।
রিনা বলেছিল, ‘আমি তো মারা যাবই তাই বলে কী তুমি তোমার সৃষ্টিকে অনৈতিকভাবে বিক্রি করে আমার চিকিৎসা করাবে? বই বিক্রির টাকায় আমার চিকিৎসার দরকার নেই।’ মাধুরী তখন নিউইয়র্কে। এ ছাড়া এ ধরনের বিষয় নিয়ে কারও করুণা ভিক্ষা করতেও ইচ্ছা করেনি।
অটোগ্রাফ প্রার্থীরা বিদায় হলে অশোক মাধুরীর টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মাধুরী মুখ তুলে বলে—কেমন আছ তুমি?
পাশ থেকে রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী শতাব্দী তাদের সেই বিখ্যাত ‘অধরা মাধুরী’ গানটির মাঝখান থেকে গেয়ে ওঠে—
‘ওগো বিদেশিনী,
তুমি ডাকো ওরে নাম ধরে,
ও যে তোমারই চেনা।...
নাচে তোমারই কঙ্কণেরই তালে॥’
যদিও অশোক এখন নাচেও না-কাউকে নাচায়ও না। সে এখন একজন মৃত লেখকের জীবাশ্ম মাত্র। মাধুরী নতুন বইটি এগিয়ে দেয়। বলে, বইটি পড়ে দেখো। হয়তো ভালো লাগবে। এরপর রিনার অসুখ, রিনার মারা যাওয়া, যোগাযোগ না রাখার অজুহাত, এমন কিছু প্রাণহীন, উচ্ছ্বাসহীন আলাপ শেষে অশোক বিদায় নেয়।
রাতে বিছানায় শুয়ে অশোক বইটি হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে। খুব সুন্দর প্রচ্ছদ। পড়া শুরু করতেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। বিছানায় উঠে বসে। এটা কীভাবে সম্ভব? আমি তো চৌধুরী পাবলিকেশনসের কাছে আমার পাণ্ডুলিপি বিক্রি করিনি। মাধুরীর সব বই কী তাহলে অন্যের লেখা?
অশোক সারা রাত ঘুমাতে পারে না। একবার ভেবেছে সরাসরি মাধুরীর সঙ্গে কথা বলি। পরক্ষণেই মনে হয়েছে যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। অযথা তাকে বিড়ম্বনায় ফেলে লাভ কী? সকালে উঠে ফোন দিল চৌধুরী পাবলিকেশনসে। সেখানে তাদের এক কর্মকর্তা কম্পিউটার থেকে তথ্য চেক করে বলল, আপনার নামে চেক রেডি আছে। যেকোনো সময় এসে অ্যাকাউন্ট সেকশন থেকে নিয়ে যেতে পারেন। অশোক যখন তাকে বিষয়টা বোঝানোর চেষ্টা করল, সে অন্যের নামে বই প্রকাশের কোনো অনুমতি দেয়নি। তখন সে বলল কম্পিউটার ডকুমেন্ট বলছে, আপনি অনুমতি পত্রে স্বাক্ষর করেছেন এবং নতুন লেখকের নামে কপি রাইট রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু জানতে চাইলে আমাদের ডিরেক্টর অরিত্র চৌধুরী স্যারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আপনি আমাদের অফিসে এসে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
অরিত্র চৌধুরী মাধুরীর স্বামী। মিডিয়া জগতে তাঁর বিশাল ক্ষমতা। তাঁর হাত ধরে দেশের বহু নায়ক নায়িকাই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। অনেকে তাঁকে বলেন বাংলাদেশের হার্ভে ওয়েনস্টিন। মাধুরী একদিন অশোকের কাছে দুঃখ করে বলেছিল, চৌধুরী মাল্টিমিডিয়াতে তাঁর একটি পদ আছে-চেম্বার আছে, অথচ অরিত্র তাঁর অফিসে যাওয়াটা পছন্দ করে না। এ জন্যই সে নানা রকম লেখিকা সংঘ, মহিলা সংঘের সভাপতি সেক্রেটারির কাজ করে সময় কাটায়। ইচ্ছা মতো ডোনেশান স্পনসরের পেছনে টাকা খরচ করে। তাতে অরিত্র চৌধুরীর কোনো আপত্তি নেই। হয়তো এসব টানা পোড়েনের কারণেই সে এখন বেশির ভাগ সময় বিদেশে কাটায়।
অশোক আজই প্রথম অরিত্র চৌধুরীর মুখোমুখি হলে। দেখতে সুদর্শন, খুব সরাসরি কথা বলা মানুষ। বললেন, ‘আমি শুনেছি আপনি অনেক ভালো লেখেন। আপনার এই চেকটা নিয়ে যান আর আরও কয়েকটি পাণ্ডুলিপি দিতে পারেন। এর থেকে যে টাকা পাবেন, তা দিয়ে আপনি আপনার নিজের নামে বই ছাপাতে পারবেন। এটি একটি সহজ বিজনেস পলিসি। আপনার পুঁজি নাই, পুঁজি সংগ্রহ করুন এবং নতুন বিজনেসে বিনিয়োগ করুন।’ অশোক বলার মতো কোনো কথা খুঁজে পায় না।
একটু বিরতি দিয়ে অরিত্র চৌধুরী বললেন, ‘আপনি লেখক মানুষ, নিশ্চয় আমার নামের অর্থ জানেন। অরিত্র কখনো কাউকে ভুল পথ দেখায় না।’ অশোক বুঝল অরিত্র চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে কোনো লাভ হবে না।
—আমি কী একবার মাধুরীর সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে পারি?
—হ্যাঁ, আমি জানতাম আপনি মাধুরীর সঙ্গে কথা বলতে চাইবেন। যে কারণে আমি তাকেও আজ অফিসে আসতে বলেছি। আমি জানি এক সময় আপনারা খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। তবে একটা বিষয় জেনে রাখুন, আপনারা লেখালেখি করেন আবেগ দিয়ে কিন্তু ব্যবসাটা অন্য জিনিস। এখানে বই আর দশটা পণ্যের মতোই একটি পণ্য। তার প্রমোশনের জন্য ব্র্যান্ডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
অশোক অরিত্র চৌধুরীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মাধুরীর চেম্বারে ঢোকে। বিশাল সাজানো গোছানো চেম্বার। মাধুরী চেম্বারের দরজা লক করে অশোকের হাত ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। বলে, ‘আমি সারা জীবন তোমার সঙ্গে শুধু প্রতারণাই করেছি। বিনিময়ে তোমাকে কিছুই দিইনি। আমি এর প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। আমি জানতাম না এই পাণ্ডুলিপিটা তোমার লেখা। আমি সাংবাদিক সম্মেলন করে সবাইকে জানিয়ে দেব এই বইয়ের লেখক তুমি। আর তোমার সব পাণ্ডুলিপিগুলো আমাকে দেবে। আমি প্রকাশ করব তোমার সব বই-তোমার নিজের নামে।
অশোক তার সাধ্য মতো চেষ্টা করে মাধুরীকে শান্ত করার। বলে, তোমার সাংবাদিক সম্মেলন করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি পাণ্ডুলিপিগুলো দিয়ে যাব। তুমি অধরা মাধুরী নামেই ছাপবে। লোকে ওই নামে তোমাকে চেনে কিন্তু ওটা তো তোমার নাম নয়। ওটা আমার দেওয়া নাম। যে নামে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও তো আমার কত লেখা ছাপা হয়েছে। রিনা বেঁচে থাকলেও একটা কথা ছিল। এখন আমি কার জন্য নিজের নামে বই ছাপব? আর সে বই কে কিনবে? এ ধরনের আবেগী যুক্তি তর্কের ভেতর দিয়ে দুজনেই একটা আপাত শান্তির আশ্রয় খোঁজে।
মাধুরীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অশোক রাস্তায় রাস্তায় উদ্‌ভ্রান্তের মতো হাঁটতে থাকে। বাসায় ফিরতে ইচ্ছা করে না। একটা পার্কে বসে ঝিমায়। রাতে না ঘুমানোর ক্লান্তি, মানসিক চাপ, সব মিলিয়ে সে পার্কেই ঘুমিয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখে, বাসার দরজা হাট করে খোলা। ঘরে যা কিছু তার সম্বল ছিল সব চুরি হয়ে গেছে। চুরি হয়ে গেছে তার টেলিভিশন, কম্পিউটার এমনকি পাণ্ডুলিপির ভাঙা স্যুটকেসটাও।
কিছু সময় ঘরের ভেতরে এটা-সেটা খোঁজাখুঁজি করে। তারপর মেঝেতে কিছু সময় শুয়ে থাকে। উঠে থানায় যায় জিডি করতে। পুলিশের হাজারো প্রশ্ন। তারপর ব্যক্তিগত আক্রমণ।
—স্যুটকেসে পাণ্ডুলিপি ছিল মানে আপনি কী কবি? দেখে তো মনে হচ্ছে নেশাখোর। পার্কে কী করেন? মেয়ে মানুষের দালালি?
পুলিশ অফিসার টেবিলের ওপর অধরা মাধুরীর বইটা দেখিয়ে বললেন, ‘এ রকম একটা বই যদি লিখতে পারতেন তবে পুলিশ আপনার পাণ্ডুলিপি খুঁজে পাওয়া যায় কিনা চেষ্টা করে দেখত। আপনাদের মতো মানুষদের ঘরে এসব ছ্যাচড়া চুরির পেছনে সময় দেওয়ার মতো সময় এখন পুলিশের নেই।’
অশোক রেগে গিয়ে বলল, ‘ওই বইটাও আমার লেখা। অধরা মাধুরী চুরি করে তার নামে ছেপেছে। ওই বইয়ের পাণ্ডুলিপিও আমার ওই স্যুটকেসে ছিল।’
এবার পুলিশ অফিসার হো হো করে হেসে ওঠে। সেই সঙ্গে উপস্থিত অন্য পুলিশ সদস্যরাও অফিসারের হাসির সঙ্গ দেয়। তাদের চোখে চোখে কথা হয় এবং এটা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, অশোক একটা বদ্ধ পাগল।
অশোক অসম্মানিত ভাবে থানা থেকে বিদায় নেয়।
কয়েক সপ্তাহ পরে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে অশোক বাসস্টপে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ দেখে একটা ছেলে অশোকের পাণ্ডুলিপির পাতা দিয়ে বানানো কাগজের ঠোঙায় করে বাদাম বিক্রি করছে। অশোক জিজ্ঞাসা করাতে সে জানায়, কয়েক দিন আগে নিমতলা রাস্তার মোড়ে ডাস্টবিনের পাশে একটা স্যুটকেসের ভেতর থেকে কাগজগুলো কুড়িয়ে পেয়েছিল। তার মা সে কাগজ দিয়ে ঠোঙা বানিয়ে বাজারে বিক্রি করেছে। সেখান থেকে সে কিছু ঠোঙা রেখেছিল, আজ শেষ হয়ে গেল।
বাসে যাওয়ার পথে অশোক জানালা দিয়ে নিমতলা রাস্তার মোড়ের ডাস্টবিনটার দিকে তাকিয়ে দেখে, সেখানে তখন ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্ট খাবারের দখল নিয়ে একটা কুকুরের সঙ্গে কয়েকটা কাকের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছে।
(এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক)