করোনায় গুজবে কান দেবেন না

করোনাভাইরাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা রকম গুজব! কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল, তা যাচাই না করেই অনেকে শেয়ার করছেন। ফলে ভুল ও গুজবের আড়ালে মানুষ সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না এবং বিভ্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। তাই, কোন তথ্য ভুল/গুজব এবং কোনটি সঠিক তা তুলে ধরতে এই লেখা। কাজেই, যেকোন তথ্য শেয়ার করতে আগে যাচাই করুন। আর, আপনি যদি সমাজে একজন যোগ্য শিক্ষক, চিকিৎসক, ব্যাংকার, সমাজসেবী বা যেকোনো জ্ঞানী–গুণী বা প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি হন মনে রাখবেন, আপনার কাছ থেকে কোন তথ্য শেয়ার হলে মানুষ তা বেশি বিশ্বাস করবে। তাই, এ ক্ষেত্রে একটু বেশি দায়িত্ববান হন।
ভুল/গুজব করোনাভাইরাস গরম তাপমাত্রায় (যেমন বাংলাদেশ) ছড়ায় না, বরং মারা যায়।
সঠিক তথ্য: করোনাভাইরাস যেকোনো তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার অঞ্চলে ছড়াতে এবং মানুষকে আক্রান্ত করতে সক্ষম।
ভুল/গুজব: গোমূত্র পান করলে করোনাভাইরাস আক্রান্ত করতে পারবে না।
সঠিক তথ্য: এ রকম কোনো প্রমাণ নাই। বরং গোমূত্র পান করলে মানুষ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
ভুল/গুজব: বরফ বা অতিরিক্ত ঠান্ডা তাপমাত্রায় করোনাভাইরাস মারা যায়।
সঠিক তথ্য: বাইরের তাপমাত্রা যাই থাকুক না কেন, সাধারণ মানুষের শরীরের তাপমাত্রা থাকে ৩৫-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই, মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস থাকলে অতিরিক্ত ঠান্ডা তাপমাত্রায় এ ভাইরাস মরবে না।
ভুল/গুজব: খুব গরম/ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে করোনাভাইরাস মারা যায়।
সঠিক তথ্য: পানির তাপমাত্রা যাই থাকুক না কেন, সাধারণ মানুষের শরীরের তাপমাত্রা থাকে ৩৫-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই, খুব গরম/ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে করোনা ভাইরাস মরে না। বরং শরীর পুড়ে যাওয়া বা ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনাই বেশি।
ভুল/গুজব: করোনাভাইরাস মশার কামড়ে সংক্রামিত হতে পারে।
সঠিক তথ্য: করোনাভাইরাস মশার কামড়ে সংক্রামিত হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। তবে, অন্যান্য রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে মশা মুক্ত থাকুন।
ভুল/গুজব: হ্যান্ড ড্রয়ার বা হাত শুকানোর মেশিনে হাত শুকালে করোনাভাইরাস মারা যায়।
সঠিক তথ্য: এভাবে হাত শুকালে করোনাভাইরাস মরে না। বরং সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করলে হাত ভাইরাসমুক্ত হয়। পরে শুকনো পরিষ্কার কাপড় বা টিস্যু বা হ্যান্ড ড্রায়ার দিয়ে হাত শুকাতে পারেন।
ভুল/গুজব: আলট্রা-ভায়োলেট বা অতিবেগুনি রশ্মি দিয়ে করোনাভাইরাস মারা যায়।
সঠিক তথ্য: এভাবে করোনাভাইরাস মরে না। বরং এটা করলে আপনার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
ভুল/গুজব: থার্মাল স্ক্যানার করোনাভাইরাস ধরতে পারে।
সঠিক তথ্য: থার্মাল স্ক্যানার আমাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার থার্মোমিটারের মতো। এটি ব্যবহার করে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়। সহজ কথায় জ্বর আছে কিনা, তা দেখা হয়। যদিও জ্বর করোনাভাইরাসে আক্রান্তের একটি লক্ষণ, তবে শুধু জ্বর থাকলেই যে করোনাভাইরাস থাকবে এমন কোন কথা নয়।
ভুল/গুজব: শরীরে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন ব্যবহারে করোনাভাইরাস মারা যাবে।
সঠিক তথ্য: এভাবে করোনা ভাইরাস মরে না। বরং এটা করলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। তবে, ঘরের জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত রাখতে সতর্কতার সঙ্গে এগুলো ঘরের জিনিসপত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভুল/গুজব: নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিনে করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
সঠিক তথ্য: নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে না। তবে, ফুসফুসের সংক্রমণ ঠেকাতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিউমোনিয়ার জন্য এই ভ্যাকসিন নেওয়া যেতে পারে।
ভুল/গুজব: স্যালাইনের পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
সঠিক তথ্য: এর কোনো প্রমাণ নাই। তবে, সঠিকভাবে নাকে স্যালাইনের পানি ব্যবহারে সর্দি-কাশি থেকে উপশম হয়।
ভুল/গুজব: রসুন খেলে করোনাভাইরাসের আক্রমণ ঠেকানো যায়।
সঠিক তথ্য: রসুন একটি স্বাস্থ্যকর ও জীবাণুনাশক খাবার হলেও করোনাভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে এখনো পর্যন্ত রসুনের কোন কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ভুল/গুজব: করোনাভাইরাস শুধু বয়স্কদের আক্রমণ করে।
সঠিক তথ্য: করোনাভাইরাস যেকোনো বয়সী মানুষকে আক্রমণ করতে পারে। তবে, বয়স্কদের বা যাঁরা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত (ডায়াবেটিস, ক্যানসার), তাঁদের জন্য এই ভাইরাসের ঝুঁকি বেশি।
ভুল/গুজব: অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা যাবে।
সঠিক তথ্য: অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া মারতে পারে, ভাইরাস নয়। তবে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য চিকিৎসক প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে পারেন (অন্য ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য)।

তাহলে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে আপনি কী করতে পারেন—
সঠিক তথ্য: হাত পরিষ্কার রাখুন। চোখে, মুখে, নাকে বা কানে হাত দেবেন না। হাঁচি-কাশিতে কাপড়/টিস্যু দিয়ে নাক–মুখ ঢাকুন। অসুস্থ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন ও অন্যদের থেকে আলাদা থাকুন।
করোনা ভাইরাসের কোন টীকা/ওষুধ আছে কি?
সঠিক তথ্য: না, এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে, আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকগণ উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ দিতে পারেন।
আরও কোন প্রশ্ন থাকলে সঠিক তথ্য কোথায় জানা যাবে?
সঠিক তথ্য: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবপেজে (who.int) সঠিক তথ্য জানা যাবে।
তথ্যসূত্র: who.int