ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের 'গ্র্যান্ড ওল্ড লেডি'

আমাদের বয়সী যাঁদের ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান দেশভাগের আগের জন্ম, তাদের স্কুল, কলেজের পাঠ্যপুস্তকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাহিত্যক্ষেত্রে মুসলমানদের অনেক ভূমিকা ও উপস্থিতি পরিলক্ষিত হতো। ধীরে ধীরে সিলেবাস বদল হতে হতে, বিশেষত ইতিহাস বারবার পুনর্লিখিত হওয়ার ফলে, ভারতের নানা ক্ষেত্রে মুসলমানদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদানের কথা একরকম ধামাচাপা পড়ে গেছে। এর ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে তা অজানা আর চোখে না পড়ার ফলে বয়স্কদের কাছেও সেসব স্মৃতিও আর বেঁচে নেই। ভারতের স্বাধীনতাপূর্ব, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা পরবর্তীকাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই মুসলমানদেরও যে অনেক মূল্যবান অবদান আছে, সে সম্পর্কে পাঠকদের জানাতে এই ধারাবাহিক লেখা
অরুণা আসাফ আলী
অরুণা আসাফ আলী

অরুণা আসাফ আলী ছিলেন একজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক কর্মী, প্রকাশক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। ১৯৪২ সালে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময় মুম্বাইয়ের গোয়ালিয়া ট্যাংক ময়দানে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালেও তিনি রাজনীতিতে যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন। অরুণা আসাফ আলী দিল্লির প্রথম মেয়র হন। তাঁর স্বামী আসাফ আলীও ভারতের একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন এবং তিনি একজন উঁচুমানের আইনজীবী ছিলেন। তিনি আমেরিকায় ভারতের প্রথম রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হয়েছিলেন।
প্রাথমিক জীবন: অরুণা আসাফ আলীর জন্মকালীন নাম ছিল অরুণা গঙ্গোপাধ্যায়। ১৯০৯ সালের ১৬ জুলাই তিনি ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবে (বর্তমান হরিয়ানা রাজ্যে) একটি বাঙালি ব্রাহ্ম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা উপেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি ছিলেন পূর্ব বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশের) বরিশাল জেলার বাসিন্দা। সেখান থেকে তিনি তখনকার ইউনাইটেড প্রভিন্সে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। স্বাধীনতার পর এই ইউনাইটেড প্রভিন্সের নাম হয় উত্তর প্রদেশ। অবশ্য আবার ভেঙে এর অন্য অংশের নাম হয়েছে উত্তরাখণ্ড। উপেন্দ্রনাথ বাবু এই নতুন বাসভূমি এলাকায় হোটেল ব্যবসা শুরু করেন। হোটেল মানে বিদেশের আন্দাজে আবাসিক কোন দালানকোঠা নয়, সহজ কথায় তিনি আসলে খুলেছিলেন একটি রেস্টুরেন্ট।
অরুণার মা অম্বালিকা দেবী ছিলেন বিখ্যাত ব্রাহ্ম নেতা ত্রৈলোক্যনাথ সান্যালের কন্যা। ত্রৈলোক্যনাথ বাবু উপাসনার জন্য বহু ব্রাহ্ম ভজন লিখেছিলেন। উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোট ভাই ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় (ডিজি) ছিলেন তখনকার নামকরা একজন গুণী প্রথম শ্রেণির চলচ্চিত্র পরিচালক। আর এক ভাই নগেন্দ্রনাথ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তিনি নোবেল পুরস্কারজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একমাত্র জীবিত কন্যা মীরা দেবীকে বিয়ে করেছিলেন। অরুণার বোন পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের গণপরিষদের একজন সদস্যা ছিলেন ।
শিক্ষা জীবন ও বিবাহ: অরুণা লাহোরের স্যাক্রেড হার্ট কনভেন্টে পড়াশোনা করার পর নৈনিতালের অল সেন্টস কলেজে শিক্ষালাভ করেন। সেখান থেকে গ্র্যাজুয়েশন করার পর তিনি কলকাতার গোখেল মেমোরিয়াল স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এক সময় এলাহাবাদে কংগ্রেস পার্টির নেতা আসাফ আলীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। এই পরিচয় ঘনিষ্ঠ হলে পিতামাতার প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও ১৯২৮ সালে তিনি আসাফ আলীর সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন। তাঁর পিতামাতার আপত্তির প্রধান দুটি কারণ ছিল—প্রথমত ছেলেটি মুসলমান ও দ্বিতীয় কারণ হল পাত্র অরুণার চেয়ে ২০ বছরের বেশি বড়।
অরুণার ভাষায়, ‘তখন আমার কাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রী নগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি, যিনি নিজেকে আমার অভিভাবক হিসেবে গণ্য করতেন, তিনি আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আমার বিয়েতে তাঁর উৎকণ্ঠা এতটাই হয়েছিল যে, তাঁর কাছে মনে হয়েছে যেন বিয়ে নয় আমি সত্যিই মারা গেছি এবং এভাবেই তিনি আমার শ্রাদ্ধের কাজটি সম্পন্ন করলেন মাত্র।’
ভারতের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা: আসাফ আলীকে বিয়ে করার পর স্বামীর অনুপ্রেরণায় অরুণা আসাফ আলি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হন। তিনি গান্ধীজির লবণ সত্যাগ্রহ চলাকালে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। বিয়ের মাত্র দুবছরের মাথায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৩১ সালে স্বাক্ষরিত হয় গান্ধী-আরউইন চুক্তি, যার পরিপ্রেক্ষিতে সব রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু অরুণা আসাফ আলীকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। তাদের যুক্তি ছিল, অরুণা একজন ভবঘুরে, যাযাবর ও সে কারণেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি অন্যদের মতো কোন রাজনৈতিক বন্দী ছিলেন না। এতে অন্যান্য সহ–বন্দী নারীরা তাঁকে সঙ্গে না নিয়ে ওই প্রাঙ্গণ ত্যাগ করতে অস্বীকার করেন, এমনকি তাঁরা সেখানে গণ-আন্দোলন শুরু করেন। এরপর মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। গান্ধীর হস্তক্ষেপ ও নারীদের যুগপৎ আন্দোলন, এসব মিলিয়ে জেল থেকে অরুণার মুক্তি নিশ্চিত করা হয়।
১৯৩২ সালে অরুণাকে আবার বন্দী করে তিহার জেলে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি রাজনৈতিক বন্দীদের প্রতি উদাসীন আচরণের প্রতিবাদে অনশন শুরু করেছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় তিহার জেলে বন্দীদের অবস্থার উন্নতি হয়েছিল বটে, কিন্তু তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে আম্বালায় পাঠানো হয় এবং কঠিন শাস্তি স্বরূপ নির্জন কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি রাজনৈতিক পরিসরে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না। কিন্তু ১৯৪২ সালের শেষ দিকে তিনি আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিকসে নিজেকে আচ্ছাদিত রাখেন এবং সেখান থেকে এই কাজে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
কর্মজীবন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন: ১৯৪২ সালের ৮ আগস্ট বোম্বাইয়ের (এখনকার মুম্বাই) অধিবেশনে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি ‘ভারত ছাড়ো’ প্রস্তাব পাশ করে। তখন ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসের প্রধান প্রধান নেতাদের এবং কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সব সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সভাকে বানচাল করার চেষ্টা করে। তা সত্ত্বেও পর দিন ৯ আগস্ট তরুণী অরুণা আসাফ আলী অধিবেশনের বাকি অংশের সভাপতিত্ব করেন এবং গোয়ালিয়া ট্যাংক ময়দানে কংগ্রেসের পতাকা উত্তোলন করেন। এই পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আন্দোলনের সূচনা চিহ্নিত করা হয়। জনসমাবেশের এই অধিবেশন চলাকালে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এত বড় বিপদের মুখে অরুণার এই সাহসিকতার জন্য তাঁকে ১৯৪২ সালের আন্দোলনের নায়িকা হিসেবে অভিহিত করা হয় এবং পরবর্তী বছরগুলোতে তাঁকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ‘গ্র্যান্ড ওল্ড লেডি’ বলা হতে থাকে।
এরপর সরাসরি কোনো নেতৃত্ব না থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতার লক্ষ্যে ভারতের তরুণদের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলতে থাকে। এ জন্য অরুণা আসাফ আলীর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। কিন্তু গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আত্মগোপনে চলে যান এবং ১৯৪২ সাল থেকে একটি গোপন রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করেন। এর শাস্তি হিসেবে তাঁর সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয় ।
এরই মধ্যে অরুণা রাম মনোহর লোহিয়ার সহযোগে কংগ্রেস দলের মাসিক পত্রিকা ‘ইনকিলাব’ সম্পাদনা করেন। ১৯৪৪ সালের একটি সংখ্যায় তিনি তরুণদের প্রতি ‘সহিংসতা না অহিংসা’ এ নিয়ে বৃথা আলোচনায় সময় নষ্ট না করে বিপ্লবে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। মজার ব্যাপার হল, জয়প্রকাশ নারায়ণ ও অরুণা আসাফ আলীর মতো নেতাদের বলা হতো ‘এরা গান্ধীর রাজনৈতিক সন্তান বটে, কিন্তু ইদানীং তাঁরা কার্ল মার্কসের ছাত্র’। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার হিসেবে ৫০০০ টাকা ঘোষণা করে। এ সময় তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দিল্লির করোল বাগে ডা. জোশীর হাসপাতালে আশ্রয় নিয়ে আত্মগোপন করে থাকেন।
মহাত্মা গান্ধী অরুণাকে একটি হাতে লেখা নোট পাঠান এবং তাতে লেখেন যে, অরুণার মিশন সম্পন্ন হয়েছে। তাই লুকানো অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে তিনি যেন নিজেকে সমর্পণ করেন এবং ওই পুরস্কারটি গ্রহণ করে টাকাটি হরিজনদের উপকারের জন্য ব্যবহার করেন। কিন্তু তখন তিনি আসেননি। পরে ১৯৪৬ সালে তাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হলে তিনি তাঁর গোপন আশ্রয় থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। অবশ্য মহাত্মার কাছ থেকে আসা ওই নোটপত্রটিকে তিনি অনেক সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন এবং যত্ন করে সেটি তাঁর ড্রয়িংরুমে রেখে, রুমের শোভা বৃদ্ধি করেছিলেন।
তবে ‘রয়্যাল ইন্ডিয়ান নৌবাহিনী বিদ্রোহ’ সমর্থনের জন্য অরুণা গান্ধীর সমালোচনার সম্মুখীন হন। এটি এমন একটি সময়োপযোগী আন্দোলন ছিল, যেটি সে সময়ে হিন্দু ও মুসলমানদের একত্র করার একটি সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হিসেবে তাঁর চোখে দেখা দিয়েছিল। ১৯৪৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বোম্বাইয়ে ব্রিটিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে দেশি নৌবাহিনীর সৈনিকদের এই বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। এর প্রধান কারণ ছিল দেশি সৈনিকদের সঙ্গে অফিসারদের দুর্ব্যবহার, ঠিকমতো খাবার না দেওয়া ও সর্বোপরি এক জাতকে অন্য জাতের প্রতি লেলিয়ে দেওয়া। সে সময় পাকিস্তান আন্দোলন বেশ ভালো মতো দানা বেঁধে গিয়েছিল। তাই অরুণা সেটাকে আর বাড়তে না দিয়ে দুই দলের সম্মিলিত বিদ্রোহকেই সাপোর্ট করেছিলেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী জীবন: অরুণা আসাফ কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য ছিলেন। সে সময় কংগ্রেস পার্টির মধ্যেই সমাজতান্ত্রিক আইডিয়া পোষণকারীদের একটা গ্রুপ ছিল। তিনি সেই গ্রুপেই যোগদান করেছিলেন। কিন্তু সমাজতন্ত্র নিয়ে কংগ্রেস দলের ঢিমে তেতালা অগ্রগতি ও অনীহা তাঁকে আশাহত করে। অতএব ১৯৪৮ সালে তিনি সমাজতান্ত্রিক দল নামে একটি নতুন দলে যোগ দেন। এখানেও সুবিধা না হওয়ায় তিনি ও এদাতাতা নারাওনান এক সঙ্গে পার্টি ছেড়ে চলে যান। তাঁরা দুজন ও রজনী পালমে দত্ত—এই তিনজন মিলে মস্কো সফরে যান। ফিরে এসে এদাতাতা ও অরুণা দুজনেই ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন । কিন্তু ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দিক থেকে ১৯৫৩ সালে আসাফ আলি সাহেব মারা গেলে সেই শোকে, তিনি একেবারে স্তব্ধ হয়ে যান।
১৯৫৪ সালে অরুণা ভারতীয় নারীদের জাতীয় ফেডারেশন (ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান উইমেন) গঠন করতে সহায়তা করেন। এটি আসলে ছিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মহিলা শাখা। কিন্তু ১৯৫৬ সালে নিকিতা ক্রুশ্চেভ যখন স্তালিনের অবদানকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন, তখন তার প্রতিবাদে তিনি এই দল ত্যাগ করেন।
১৯৫৮ সালে অরুণা দিল্লির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি দিল্লির সামাজিক কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য কৃষ্ণ মেনন, বিমলা কাপুর, গুরু রাধা কিষেণ, প্রেমসাগর গুপ্ত, রজনী পালমে জ্যোতি, সরলা শর্মা ও সুভদ্রা যোশীর মতো তাঁর যুগের সমাজকর্মী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে কাজ করেছিলেন।
অরুণা ও নারাওনান মিলে ‘লিংক পাবলিশিং হাউস’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা শুরু করেন এবং সেখান থেকে ‘প্যাট্রিয়ট’ নামে একটি দৈনিক সংবাদপত্র বের করা শুরু করেন। ওই একই বছরে তাঁরা ‘লিংক’ নামে একটি সাপ্তাহিকও বের করা শুরু করেছিলেন। জওহরলাল নেহরু, কৃষ্ণ মেনন ও বিজু পট্টনায়কের মতো নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান একটি মর্যাদাপূর্ণ সংস্থা হয়ে ওঠে। কিন্তু অতি নোংরা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে তিনি ওই প্রকাশনা সংস্থা থেকে সরে যান। আসলে তাঁর কমরেডদের অদম্য লোভ দেখে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি আবার কংগ্রেস পার্টিতে যোগ দেন। কিন্তু এবারে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় কোন ভূমিকা নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন, তাতে তাঁর সম্পূর্ণ অমত থাকলেও তিনি ইন্দিরা গান্ধী ও রাজিব গান্ধী উভয়ের ঘনিষ্ঠজন রয়ে গিয়েছিলেন।
মৃত্যু ও স্মৃতি: ১৯৯৬ সালের ২৯ জুলাই প্রায় ৮৭ বছর বয়সে এই মহীয়সী নারী নয়াদিল্লিতে মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৬৪ সালে অরুণা আসাফ আলী আন্তর্জাতিক লেনিন শান্তি পুরস্কার পান। ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক সমঝোতার (ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং) জন্য তিনি জওহরলাল নেহরু পুরস্কার পান। ১৯৯২ সালে তাঁর জীবদ্দশায় তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘পদ্মবিভূষণ’–এ ভূষিত হন। ১৯৯৭ সালে তিনি ভারতের মরণোত্তর সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ পুরস্কার পান।
১৯৯৮ সালে অরুণাকে স্মরণ করে ভারত সরকার একটি ডাকটিকিট (স্ট্যাম্প) বের করে। তাঁর সম্মানে নয়াদিল্লিতে ‘অরুণা আসাফ আলী মার্গ’ নামে আইআইটি, জেএনইউ এলাকায় একটি প্রধান সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।
অল ইন্ডিয়া মাইনরিটি ফ্রন্ট নামে সংখ্যালঘুদের একটি সংস্থা প্রতি বছর ‘ড. অরুণা আসাফ আলী সদ্ভাবনা পুরস্কার’ নামে একটি পুরস্কার বিতরণ করে।