মহামারির সময় অনৈতিক মুনাফা

গুদামে আগুন লাগার পর লবন দিয়ে আলু পোড়া খাওয়ার লোকের অভাব হয় না। সুযোগসন্ধানী লোক বোঝাতেই এমন উদাহরণ টানা হয়। বিপদের দিনে, বিশেষত বড় কোনো দুর্যোগের সময় এ ধরনের লোকের আসল চরিত্র প্রকাশিত হয়। এখন যেমনটা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯-কে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণার পর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আর একই সঙ্গে বেড়ে যায় সাধারণ মানুষের এই আতঙ্ককে পুঁজি করে উচ্চ মুনাফা করা ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও। আমেরিকাও এর বাইরে নয়। আমেরিকায় করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বিচারে নিউইয়র্কের অবস্থান ওপরের দিকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অঙ্গরাজ্যটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য ও নগর কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে গণজমায়েতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার মতো পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। পুরো অঞ্চলে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। আর এই পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্য মজুতের জন্য গ্রোসারিগুলোতে ভিড় করছে। সুযোগ বুঝে এক শ্রেণি অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে এই দুর্যোগকালে ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ ও কম্পট্রোলার জেনারেলের দপ্তর নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন এরই মধ্যে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় অত্যধিক দামে পণ্য বিক্রির দায়ে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
নিউইয়র্ক নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও নিত্যপণ্যের দাম অত্যধিক বৃদ্ধি করাকে ‘অবৈধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু এই অবৈধ কাজ থামাতে এখনো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ফলে ‘অবৈধ’ কাজটি বেশ ভালোভাবেই অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় নগর কর্তৃপক্ষ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, করোনাভাইরাসের সঙ্গে সঙ্গে আরও নানা ধরনের সংকটের সামনে পড়বে মানুষ। বিশেষত শিশুখাদ্য ও জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামের বাজার নিয়ন্ত্রণে না এলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতে পারে সবাইকে।
এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষদেরও করণীয় রয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে বাজার থেকে গাদা গাদা পণ্য কিনে আরেকটি সংকট তৈরির কোনো অর্থ হয় না। সরবরাহ চেন ও বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে এ ধরনের মজুত করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে এ ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে হবে।