দুর্যোগে সরকারি সহযোগিতা

বৈশ্বিক মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস এক ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিয়েই এ বিপর্যয় বোঝা যাবে না। এই সংকট এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সূচনা ঘটিয়েছে। মহামারি থেকে বাঁচতে এবং এর সংক্রমণ ঠেকাতে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া এই মুহূর্তে মানুষের হাতে অন্য কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এই বিকল্প বিপুলসংখ্যক মানুষকে ফেলছে আরেক ভয়াবহ সংকটে।

ঘরবন্দী থাকার দাওয়াই দীর্ঘদিন মেনে চলতে হলে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কারণ, এই সময়ে বেকারত্ব বাড়ছে হু হু করে। শুধু আমেরিকাতেই মার্চের শেষ নাগাদ ৩০ লাখ লোক বেকার ভাতা চেয়ে আবেদন করেছে। অথচ তার আগের সপ্তাহেই এমন আবেদনের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৮১ হাজার। বেকার ভাতা চেয়ে এত আবেদন এর আগে করা হয়নি আমেরিকায়। এই পরিস্থিতি আরও বাজে আকার ধারণ করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুধু চাকরিজীবীরাই নন, বিপাকে রয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একটি বড় অংশই এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। এ অবস্থায় মার্কিন প্রশাসন ঘোষিত সরকারি সহায়তা তহবিল মানুষকে আশার আলো দেখাচ্ছে। হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেসের দুই কক্ষে আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নাগরিক সহযোগিতার সমঝোতা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ সিনেটে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের এই নাগরিক সহযোগিতা বিল পাস হয়।

কর্মহীন মানুষ, কোম্পানি ও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য সরকার এই সহযোগিতা তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা পাবে। এর আওতায় বার্ষিক ৭৫ হাজার ডলারের কম আয় করা ব্যক্তিরা জনপ্রতি ১ হাজার ২০০ ডলারের এককালীন চেক পাবেন। চার মাসের জন্য দেওয়া হবে বেকার ভাতা। স্বামী-স্ত্রী বা দম্পতি মিলে পাবেন ২ হাজার ৪০০ ডলার। আর ১৭ বছর পর্যন্ত প্রতি সন্তান পাবে ৫০০ ডলার করে। বার্ষিক আয়ের পরিমাণ যত বেশি, সহায়তার পরিমাণ তত কম। আর এককভাবে বছরে ৯৯ হাজার ডলার আয় করা ব্যক্তিরা কোনো সহযোগিতা পাবেন না। একই সঙ্গে স্থগিত করা হয়েছে শিক্ষাঋণের পেমেন্ট ও দু মাসের জন্য মর্টগেজের বিলম্ব ফি। ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ঋণসুবিধা, ফুড স্ট্যাম্পসহ নানা সুবিধার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে।

সবচেয়ে আশার কথা হলো, এই সরকারি সহযোগিতা কাগজপত্রহীন অভিবাসীরাও বিভিন্ন চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিতে পারবেন। এ জন্য তাঁদের অভিবাসন সম্পর্কিত কোনো তথ্য দিতে হবে না। ফলে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন অভিবাসী জনগোষ্ঠী বাঁচার পথ পাবে। পাশাপাশি এই দুর্যোগে নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে খোলা রাখা হয়েছে হেল্পলাইন। বিভিন্ন চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানও সহায়তা দিতে চালু রেখেছে বিশেষ নম্বর।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষদের মধ্যে যারা আর্থিক সংকটসহ নানা সংকটে রয়েছেন, তাঁদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে বাকিদের। আমেরিকায় বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকেই এরই মধ্যে সরকারি বিভিন্ন সহযোগিতা পেতে সহায়তা দিচ্ছেন। এ সহায়তার পরিসর আরও বাড়াতে হবে, যাতে ইংরেজি না জানার কারণে বা বৈধ কাগজ না থাকায় কেউ এ সরকারি সহযোগিতার আবেদন করা থেকে পিছপা না হয়। মানুষের দোরগোড়ায় এ সহযোগিতা পৌঁছে দিতে প্রশাসনের পাশাপাশি কমিউনিটির জানা-বোঝা ও তুলনামূলক বিত্তবান মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।