'শেষ বিদায়ের বন্ধু' হতে পারে একটি গ্লোবাল সংগঠন

চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকা থেকে যাত্রা শুরু করেছে 'শেষ বিদায়ের বন্ধু' নামে একটি সংগঠন। করোনা মহামারির সময়েই তাদের আত্মপ্রকাশ। সংগঠনটির কার্যক্রমের মূলে রয়েছে কোনো লোক মারা গেলে তাদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা। এ ক্ষেত্রে তাদের খবর দিলেই সংগঠনটির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে নিজ খরচায় সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়।
শেষ বিদায়ের এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংগঠনটি একটি অস্থায়ী অফিসও খুলেছে। সেখানে সংরক্ষিত আছে কাফনের সাদা কাপড়, কবর খননের সরঞ্জামাদি, কবর খননকারীদের জন্য পিপিইসহ নানা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার কয়েকজন তরুণের উদ্যোগে করোনাকালে সংগঠনটি যাত্রা করে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে দাফনে সহায়তা করেছে সংগঠনটি। এলাকায় ব্যাপারটি প্রশংসনীয় হয়ে উঠেছে।

করোনার এই ক্রান্তিকালে বাবা–মায়ের মৃত্যুর পর সন্তানেরা তাঁদের লাশের পাশে যেতে ভয় পাচ্ছে, দাফনে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, এলাকাবাসী লাশ বহনের খাটিয়া দিচ্ছে না। বেওয়ারিশ লাশ পড়ে থাকছে রাস্তার পাশে। অনেক সময় ঘরে মরে পড়ে থাকছে অনেকে; কেউ কাছে ঘেঁষছে না। এসব লাশ 'শেষ বিদায়ের বন্ধু'রা দাফন করবে।
বিষয়টি খুবই আশাব্যঞ্জক। অন্তত মৃত্যুর পর একজন মানুষকে যথাযথ মর্যাদায় বিদায় দেওয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়টি মর্যাদাপূর্ণ একটি কাজ। এ রীতি পৃথিবীর সব প্রান্তেই বিদ্যমান। কিন্তু মহামারির দুর্যোগকালে এ রীতি পালন করা সম্ভব হয়নি।
করোনাকালে নিউইয়র্কে একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর কয়েকটি লাশ একসঙ্গে ফেলে রাখা হয়েছিল। লাশবাহী গাড়ি থেকে গন্ধযুক্ত পানি বের হলে স্থানীয় এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। বিষয়টি তারা নগর কতৃপক্ষকে জানায়। কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে এসে মৃত ব্যক্তিদের মরদেহ অমর্যাদাকর অবস্থায় ফেলে রাখার কারণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে। 
করোনার সময় নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের হার্ট আইল্যান্ডে গণকবর দেওয়া হয় হাজার হাজার মানুষকে। বাংলাদেশি কমিউনিটির মৃত ব্যক্তিদের যথাযথ মর্যাদায় দাফন করা হয়। এতে ভূমিকা ছিল বিভিন্ন মসজিদের ইমাম এবং দু–একটি সামাজিক সংগঠনের। হিন্দু সম্প্রদায়ের মৃত ব্যক্তিদেরও যথাযথ মর্যাদায় দাহ করা হয়। দাফনকালে হাতেগোনা চার–পাঁচজন ব্যক্তি উপস্থিত থাকতেন। আবার কোনো কোনো সময় লোক পাওয়া কষ্টকর হতো। অনেককে পাওয়া যেত না। 'কিন্তু শেষ বিদায়ের বন্ধু'–এর মতো একটি সংগঠন থাকলে মৃত ব্যক্তির পরিবার সরাসরি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারত। কিন্তু এমনটি সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে যেন এমন একটি সংগঠন থাকে যাদের সঙ্গে অনায়াসে যোগাযোগ করা যায়, যাতে ভূক্তভোগীর পরিবার উপকৃত হতে পারে।
করোনা মহামারিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যথাযথ মর্যাদায় লাশ দাফন নিয়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। পরিবার–পরিজন আত্মীয়-স্বজন থাকা অবস্থায়ও লাশ দাফন হয়েছে গণকবরে। তাই পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে 'শেষ বিদায়ের বন্ধু'–এর মতো একটি সংগঠন জরুরি