সারসংক্ষেপ
বর্তমানে রাজনীতিতে অর্থের প্রভাব ব্যাপক হওয়ায় রাজনৈতিক দলীয় অর্থায়ন বিশ্বের সর্বত্র গুরুত্বপূর্ণ। দলীয় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে দলীয় সুশাসন, জবাবদিহি এবং গণতন্ত্র বিনির্মাণের ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে, যা প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোতে দৃশ্যমান। বাংলাদেশে গণতন্ত্র চালু থাকলেও সুষ্ঠু দলীয় কোনো অর্থায়ন ব্যবস্থা অনুসরণ করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট বিধিবিধানের প্রকৃত অনুসরণ নেই এবং যথাযথ তদারকের অভাব রয়েছে। এ প্রবন্ধে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অর্থায়ন, দলীয় অর্থায়নের পর্যালোচনা ও প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ যুক্ত করা হয়েছে।
মুখ্য শব্দগুচ্ছ: রাজনৈতিক অর্থায়ন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, গণপ্রতিনিধিত্বশীল আদেশ/ আরপিও, তহবিল সংগ্রহ, মনোনয়ন-বাণিজ্য, কাঠামোগত সংস্কার।
ভূমিকা
বিশ্বজুড়ে দলীয় রাজনীতি এবং নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক অর্থায়ন এক বহুল আলোচিত বিষয়। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ-নির্বিশেষে সব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক অর্থায়নের দৃষ্টান্ত লক্ষ করা যায়। গণতন্ত্র ও সুশাসনের স্বার্থে রাজনৈতিক অর্থায়নের প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, অবাধ এবং যথার্থ তদারকির আওতায় আনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বস্তুত, রাজনীতিতে অর্থের প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। তাই এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে এবং রাজনীতিবিদদের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমিয়ে দেয়।
প্রতিষ্ঠিত উদারনৈতিক পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর দলীয় ব্যবস্থায় মনোনয়ন-প্রক্রিয়া, প্রচারণা ও আর্থিক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ লক্ষণীয়। যেমন নিবন্ধীকরণ, যথাযথ নির্বাচনী বিধিমালা ও পাবলিক অর্থায়ন। গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশক থেকে ওই দেশগুলোর রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারণাসহ দৈনন্দিন ব্যয়ে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা চালু হওয়ার পর ইতিবাচক ফলাফলের দৃষ্টান্ত প্রণিধানযোগ্য। যার মধ্যে রয়েছে দলীয় সাংগঠনিক সবলতা প্রতিষ্ঠা, আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক সুবিধাবাদ কমানো, দলীয় মনোনয়ন-প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্রায়ণ ঘটানো ইত্যাদি। বৈধ সূত্রে অর্থায়নের শর্তাবলির মধ্যে থাকে বিশেষত সম্পদের হিসাব দাখিল এবং আয়-ব্যয় নিরীক্ষণ, দলীয় মনোনয়ন-প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক করা ইত্যাদি।
সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর তহবিল ও অর্থ সংগ্রহে কোনো নিয়ন্ত্রণ লক্ষ করা যায়নি বা ছিল না। এসব দলের আর্থিক বিষয়াদি সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে থেকে যায়। কারণ, দলীয় আয়ের উত্স, আয়-ব্যয় ও হিসাব বিবরণী সম্পর্কে আলোচনা বা উন্মুক্ত নিরীক্ষা করা হয়নি। স্বচ্ছ দলীয় অর্থায়নের অভাবে যেকোনো উত্স থেকে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে যায়। এভাবে অযৌক্তিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হতে থাকে এবং অর্থ ও পেশিশক্তির রাজনীতিতে নির্বাচনী ব্যয়ের নির্ধারিত সীমা প্রায়ই লঙ্ঘিত হয়। ১৯৯১-পরবর্তী সংসদীয় নির্বাচনগুলোতে মনোনয়ন-প্রক্রিয়া ‘মনোনয়ন-বাণিজ্যে’ পরিণত হয় এবং দলীয় তহবিলে অর্থের জোগান দিয়ে প্রার্থিতা লাভের প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায়। এভাবে দলীয় রাজনীতিতে অর্থের প্রভাব ক্রমাগতভাবে শক্তিশালী হতে থাকে।