অ্যাসিড-সন্ত্রাস ও একটি আশা

.
.

প্রায় ৩০ বছর আগে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে রেজিস্ট্রার হিসেবে কাজ করতাম। সে সময়ই প্রথম অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার এক মেয়েকে দেখি। আমার জানামতে, তখনই অ্যাসিড-সন্ত্রাস শুরু হয় আমাদের দেশে। আমাদের দেশে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যখন শুরু হয়, তখন একজন চিকিৎসক হিসেবে অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার অসহায় মানুষকে দেখেছি খুব কাছ থেকে। মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি ওদের মনের কষ্ট।
এরপর সাংবাদিক, নারী নেত্রী ও সমাজসেবীদের সহায়তায় অ্যাসিডের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু হলো।
পরবর্তীকালে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের নেতৃত্বে ২০০০ সালের ১৯ এপ্রিল গঠিত হলো ‘প্রথম আলো অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য সহায়ক তহবিল’। বর্তমানে মোট পুনর্বাসিত নারীর সংখ্যা ২৯০ জন। ট্রাস্টের উদ্যোগে অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের চিকিৎসা সহায়তা, আইনি সহায়তা ও শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। এখানে সামিট গ্রুপের আজিজ খানের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। প্রথম আলোর সব কর্মী তাঁদের এক দিনের বেতনের টাকা এই তহবিলে দিয়েছিলেন—এটি আমার তখন খুব ভালো লেগেছিল। দেশের অনেক মানুষের কাছ থেকেও অনেক সাহায্য এসেছিল তহবিলে। এই তহবিলের উদ্যোগে এ সময়
সারা দেশে অ্যাসিডে আক্রান্ত বহু রোগীর সাহায্য এবং বিভিন্ন জেলায় সচেতনতামূলক সভা করা হয়।
চিকিৎসার মাধ্যমে অ্যাসিডদগ্ধ রোগীদের আগের চেহারা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই পুনর্বাসন খুবই জরুরি। এই পুনর্বাসনের কাজটি প্রথম আলো ট্রাস্ট অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট অচিরেই পূর্ণাঙ্গ বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হিসেবে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। আশার কথা, সবার একান্ত চেষ্টা ও সহযোগিতায় আমরা ইতিমধ্যেই অ্যাসিড-সন্ত্রাস অনেকটা কমিয়ে আনতে পেরেছি। তবু বলতে চাই শেষ কথাটি, আমাদের আর একটিও অ্যাসিড-সন্ত্রাসের রোগীকে যেন চিকিৎসা না করতে হয়।
ডা. সামন্তলাল সেন
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, বার্ন ইউনিট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল