ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফর

দুপুর ১২টায় গ্রামের প্রবেশ পথে আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীরা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুযায়ী অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান।
দুপুর ১২টায় গ্রামের প্রবেশ পথে আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীরা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুযায়ী অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান।

গ্রামীণ সমাজতত্ত্ব বিষয়ে শিক্ষা সফরের অংশ হিসেবে ঢাকার ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বেছে নেন আলোর পাঠশালাকে। গত শুক্রবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালা ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কোলদের গ্রাম বাবুডাইং পরিদর্শন করেছেন তাঁরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অতিথি শিক্ষক মাহবুব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এ শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়। এ শিক্ষা সফরে সহায়তা করেন গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিমুল আকতার। অনুষ্ঠানে অংশ নেয় বাবুডাইং গ্রামসহ আশেপাশের আরও সাতটি কোল জাতিসত্তার মানুষজন ও আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীরা।

এ উপলক্ষে আলোর পাঠশালা প্রাঙ্গণে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোল নারী-পুরুষদের সঙ্গে তাঁদের জীবনযাপন, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

দুপুর ১২টায় গ্রামের প্রবেশ পথে আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীরা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুযায়ী অতিথিদের অভ্যর্থনা জানায়। এরপর বিদ্যালয় মাঠে অতিথিদের শাপলা ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেয় শিক্ষার্থীরা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, গোদাগাড়ীর ইউএনও শিমুল আকতার, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন, এনজিও কর্মী নিকোলাস মুরমু, বাবুডাইং গ্রামের মোড়ল কার্তিক কোল টুডু, আলোর পাঠশালার অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কানাই চন্দ্র দাস, প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর প্রমূখ।

কোল জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন গ্রামের সাংস্কৃতিক দল তাঁদের ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান ও নাটক পরিবেশন করেন।
কোল জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন গ্রামের সাংস্কৃতিক দল তাঁদের ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান ও নাটক পরিবেশন করেন।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৃতীয় বর্ষের মধ্যে আলামিন খান, প্রথম বর্ষের মার্জিয়া হক, তাজমীম হক ও আয়শা খাতুন প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। শিক্ষার্থীরা কোল জাতিসত্তার মানুষদের জীবন ধারা, উপার্জনব্যবস্থা, আবাসস্থল, বিয়ে, সামাজিক ব্যবস্থা, পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ধর্মীয় সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক জীবনধারা, ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিসহ বিষয়ে জানতে চান। উত্তরপর্বে কোল জাতিসত্তার নারী নেত্রী কল্পনা কোল মুরমু, গ্রামের মোড়ল কার্তিক কোল টুডু, আলোর পাঠশালার সহকারী শিক্ষক নির্মল কোল সরেন অংশ নেন।

এরপর কোল জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন গ্রামের সাংস্কৃতিক দল তাঁদের ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান ও নাটক পরিবেশন করেন। শেষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গোদাগাড়ী উপজেলার তিনটি কোল গ্রামের ১২০টি পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। 

মাঠ গবেষণার কাজে শিক্ষার্থী ও তথ্যদাতারা।
মাঠ গবেষণার কাজে শিক্ষার্থী ও তথ্যদাতারা।

শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থী মার্সিয়া চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়ি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের তুলনায় সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরা সবদিক থেকেই অনেক পিছিয়ে। বিশেষ করে শিক্ষার দিক থেকে।

আয়শা খাতুন বলেন, আমরা যতটুকু ভেবেছিলাম, তার চেয়ে বেশি জানতে পেরেছি এ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের। এরা অনেক কুসংস্কারে (ভূত-প্রেত) বিশ্বাসী হলেও সামনে এগিয়ে যেতে চায়। এদের নারীরা অনেক পরিশ্রমী। আমরা এদের আতিথেয়তায় খুব খুশি।

অধ্যাপক মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রামীণ সমাজতত্ত্ব বিষয়ে একটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের জীবনধারা কিছুটা হলেও জানতে পেরেছে শিক্ষার্থীরা। আমাদের প্রত্যাশা অনেকটাই পূরণ হয়েছে। সহযোগিতার জন্য বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

ইউএনও শিমুল আকতার এ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ, গ্রামের রাস্তা সংস্কার, ভূমিহীনদের খাস জমি বন্দোবস্তের আশ্বাস দেন।