'এই ক্রাইসিস টাইমে কেউ এ্যাতো করে না'

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার ১০৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার।  ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার ১০৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রথম আলো

‘করোনার মইদ্দ্যে আবার আম্পান আইস্যা আমাগো ব্যাপক ক্ষতি করছে। খুব কষ্টে চলতাছি। এর মইদ্দ্যে আমার মাইয়ারে যে সাহায্য-সহযোগিতা করছে, এই ক্রাইসিস টাইমে কেউ এ্যাতো করে না।’

ভোলার দৌলতখানের চর মদনপুরের পান্না বেগম খাদ্যসহায়তা পেয়ে এভাবেই কৃতজ্ঞতা জানালেন। পান্না বেগমের মেয়ে মদনপুরের প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত আলোর পাঠশালায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। গত সোমবার এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলোকে দ্বিতীয় দফায় খাদ্যসহায়তা দেওয়া হলো। সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় প্রথম আলো ট্রাস্ট দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ছয়টি আলোর পাঠশালার ১ হাজার ২০ জন শিক্ষার্থীকে দুই দফায় খাদ্যসহায়তা দিয়েছে।

নদীভাঙা মানুষের ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত এই চর মদনপুর। এটি মূলত মেঘনা নদীর মধ্যে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। করোনার প্রভাবের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে এই চরের অনেক মানুষেরই না খেয়ে থাকার অবস্থা হয়েছে।

করোনার কারণে এমনিতেই কাজকর্ম ছিল না, এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

খাদ্যসহায়তা নিতে আসা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মনির হোসেন বলে, সে মাছ ধরে। কিন্তু মার্চ-এপ্রিল মাস মেঘনা নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এখন আবার সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এই সময়ের মধ্যে দিনমজুরি করে সে সংসার চালানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সব কাজ বন্ধ। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে খেতের সব ফসল ভেসে গেছে। এ সময়ে কাজের খোঁজে ঢাকা-চট্টগ্রামেও যেতে পারেনি। সব মিলিয়ে খুব কষ্টে আধপেটা খেয়ে চলতে হচ্ছিল। এই অবস্থায় খাদ্যসহায়তা পেয়ে তার খুব উপকার হয়েছে।

গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালা

নওগাঁর নিয়ামতপুরের গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলোকে গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়া মারীয়া পেরেরা। 

বিদ্যালয়ের ১০৭ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি আটা, এক লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি মসুর ডাল, আধা কেজি লবণ এবং একটি সাবান দেওয়া হয়।

এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘প্রথম আলো ট্রাস্টের এই মহান উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। আজকে সরকারের পাশে আপনারা দাঁড়িয়েছেন, এই জন্য আমি আপনাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’

নিয়ামতপুরের ইউএনও জয়া মারীয়া পেরেরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের এই স্কুলের নাম হচ্ছে আলোর পাঠশালা। তোমরা নিজেরা আলো হয়ে অন্ধকার দূর করবে। তোমরা পড়াশোনা শিখে মানবতার সেবায় এগিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাই প্রথম আলো ট্রাস্টকে এবং গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালা কর্তৃপক্ষকে।’