দুর্গম চরের কঠিন জীবনে করোনার মধ্যে বন্যার হানা

মানিকগঞ্জে বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরছেন গ্রামবাসী। গতকাল বিকেলে দৌলতপুরের বাচামারা ইউনিয়নের সুবুদ্ধি পাচুরিয়া চরে।  ছবি: প্রথম আলো
মানিকগঞ্জে বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরছেন গ্রামবাসী। গতকাল বিকেলে দৌলতপুরের বাচামারা ইউনিয়নের সুবুদ্ধি পাচুরিয়া চরে। ছবি: প্রথম আলো

সাত বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় বাঁ পা হারিয়েছেন তরুণ ইমামুল হোসেন (২২)। এরপর থেকেই প্রায় কর্মহীন। দিনমজুরি করে বাবা যা আয় করেন তাতেই এত দিন ধরে চলছিল সংসারটা। চার মাস ধরে করোনা পরিস্থিতিতে বাবার আয়রোজগার নেই বললেই চলে। এ রকম চরম অভাবের মধ্যেই বন্যার পানিতে ডুবেছে ফসলের জমিসহ বসতবাড়ি। অভাবে দিশেহারা উপার্জনহীন পরিবারটি।

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া চাল, ডাল, আলু পেয়ে আপাতস্বস্তি পেলেন ইমামুল। ক্রাচে ভর দিয়ে তিনি ত্রাণসহায়তা নিতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘নদীর মইধ্যে দুর্গম চর হওয়াত আমাগোরে কেউ খোঁজখবর নিবার আহে না। শুকনার সময়ই আহে না, আর এহন তো চারিদিহে খালি পানি আর পানি। আপনারা যে কষ্ট কইর‍্যা আইছেন ত্রাণ দিতে, আমরা খুশি অইচি। দুই-চারদিনের খাওন তো অইবো।’

ইমামুলের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার যমুনা নদীবেষ্টিত দুর্গম এলাকায় বাচামারা ইউনিয়নের সুবুদ্ধি পাচুরিয়া চরে। এই ইউনিয়নের চারদিকে কেবল পানি আর পানি। তার ওপরে নদীর ভাঙনে এই চরের আয়তন দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। গতকাল এই ইউনিয়নে ১০০ জন বানভাসির মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।

উপজেলা সদর থেকে ট্রলারে করে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এই চরে যেতে হয়। গতকাল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে বন্ধুরা ট্রাকে ও ঘোড়ার গাড়িতে করে খাদ্যসামগ্রী বৈন্যা খেয়াঘাটে নেন। সেখান থেকে ট্রলারে করে প্রায় দুই ঘণ্টায় যমুনার মধ্যে সুবুদ্ধি পাচুরিয়া চর।

নদীর তীরে সুবুদ্ধি পাচুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণ দেওয়া হয়। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম ওরফে রাজা, বন্ধুসভার সভাপতি মাহবুব আলম, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাগসাইট্টা গ্রামের হারুন সরকার (৬০) গ্রামে ঘোড়ার গাড়ি চালান। ত্রাণ পেয়ে তিনি বলেন, ‘চরে ঘোড়ার গাড়িত খ্যাপ দেই। পানিত পথঘাট সব তলায়া গ্যাছে। তাই কামকাজ নাই। হাতে ট্যাহা-পয়সা নাই, খাওন-টাওনে কষ্ট অইয়্যা গ্যাছে।’

বিথী বেগমের (৪৫) যুদ্ধটা অন্য রকম। ত্রাণ পেয়ে তিনি বলেন, ‘পোলাপানে বাপে অসুস্থ, কয়েক মাস ধইর‍্যা বিছনাত পড়া। কামাইরোজগার নাই, পোলাপান নিয়্যা না খাইয়া আছি।’