এক মাসের বন্যায় বিপর্যস্ত জীবন

জামালপুরে বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গত সোমবার ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের বৌশেরগড় গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
জামালপুরে বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গত সোমবার ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের বৌশেরগড় গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী ও সাপধরী ইউনিয়নের মানুষের কাছে বন্যা নতুন কিছু নয়। যমুনা নদীবেষ্টিত এ জনপদে প্রায় প্রতিবছরই বান আসে। তবে এবার করোনা পরিস্থিতিতে রোজগারহীন হওয়া মানুষ বন্যার সঙ্গে আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। তা–ও পরপর তিন দফায় প্রায় এক মাস থেকে বন্যা চলছে। এলাকাগুলোতে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। 

তিন দফা বন্যায় বিপর্যস্ত ফকির আলীর জীবন। দুর্ঘটনায় তিনি একটি পা হারানোর পর ছেলেদের ওপর নির্ভর করে সংসারে থাকছেন। ফসলের মাঠে কাজ করে, দিনমজুরি করে যা উপার্জন হতো, তা দিয়েই ছেলেদের সংসার চলছিল। করোনাকালে আয় কমে যায়। প্রায় এক মাস দীর্ঘ বন্যায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এখন হাতে টাকা নেই, ঘরে খাবার নেই। 

গত সোমবার দুর্গম বৌশেরগড় গ্রামের একটি চরে চিনাডুলী ও সাপধরী ইউনিয়নের ১০০টি বানভাসি পরিবারকে প্রথম আলো
ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়। সেখানে নাতনির সহায়তায় ত্রাণ নিতে এসেছিলেন পঙ্গু ফকির আলী।

চিনাডুলী ও সাপধরী ইউনিয়নের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলের মাঠসহ সব জায়গায় থই থই পানি। অনেক রাস্তাঘাট ভেঙে পানির স্রোত বইছে। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তার পাশে, উঁচু স্থানে, সেতুর ওপর আশ্রয় নিয়েছে। খাবারসহ নানা সংকটে সেখানেও জীবন দুবির্ষহ হয়ে উঠেছে। 

নৌকায় করে চিনাডুলী এলাকার দেওয়ানপাড়া গ্রাম থেকে ত্রাণ নিতে এসেছিলেন ৫৫ বছরের সূর্যবান। বন্যার কারণে তাঁর ছেলেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। কাজকর্ম নেই। সব জায়গাতেই পানি আর পানি। আগে তিনি মাঝেমধ্যে গ্রামে ভিক্ষা করতেন। চারদিকে পানি থাকায় এখন সেটাও বন্ধ। চরম সমস্যায় পড়েছেন এই নারী। ত্রাণ পেয়ে সোমবার তিনি বলেন, ‘বানে কত কষ্ট। খাউনদাউন নাই। কোঠাই যাই। ঘরে ঘরে বান। কোঠাও ভিক্ষাও চাইতে পারি না। তুমগরে ইলিপগুলো পাইয়া উপুকার হইল।’

বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে দেওয়া ব্যাগে ছিল চাল, তেল, ডাল, আলু ও পেঁয়াজ। জামালপুরের প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা এর আগেই এলাকায় ঘুরে ত্রাণ পাননি—এমন ১০০টি পরিবারের তালিকা করে চিরকুট (স্লিপ) দিয়ে আসেন। গতকাল তাঁদের ত্রাণ দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামালপুর বন্ধুসভা সভাপতি এস এম সিফাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল হাদী প্রমুখ।

ত্রাণ পেয়ে সাপধরী এলাকার আলেছা বেগম বলেন, ‘বুড়া মানুষ পাড়াপাড়ি করে ত্রাণ লইতে পারি না। তুমাগো ত্রাণে কোনো পাড়াপাড়ি হইল না। যেটুকু পাইছি, তা দিয়ে কইডা দিন চলব।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর : ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।