'পানি কমছে কিন্তু কষ্ট কমে নাই'

শেরপুরে প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া ত্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বন্যার্ত মানুষ। গতকাল সদর উপজেলার বলাইয়েরচর ইউনিয়নের রামেরচর গ্রামে।  প্রথম আলো
শেরপুরে প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া ত্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বন্যার্ত মানুষ। গতকাল সদর উপজেলার বলাইয়েরচর ইউনিয়নের রামেরচর গ্রামে। প্রথম আলো

‘ঘরে বন্যার পানি উঠছিল। ১৫-১৬ দিন ঘরে পানি ছিল। দিনমজুরি কইরা সংসার চালাইতাম। সব জায়গায় পানি। তাই কোনো কাজকাম আছিল না। কেউ কোনো সাহায্যও দেয় নাই। অহন পানি কমছে। কিন্তু কষ্ট কমে নাই। কাজকাম না থাকায় অনেক কষ্ট কইরা খায়া, না খায়া দিন কাটাইতাছিলাম। ঠিক এই সময় আপনারা আমগরে ত্রাণ দিলেন। আল্লাহ আপনেগরে ভালো করুন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া ত্রাণ পেয়ে এসব কথা বলেন শেরপুর সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদসংলগ্ন বলাইয়েরচর ইউনিয়নের রামেরচর গ্রামের দিনমজুর এছাম উদ্দিন (৭০)।

রামেরচর গ্রামসহ এই ইউনিয়নের পাইকরতলা ও বলাইয়েরচর, লছমনপুর ইউনিয়নের নামাশেরিরচর এবং পৌরসভার পশ্চিমশেরী গ্রামের বন্যার্ত ১০০ মানুষের মধ্যে গতকাল ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এসব ত্রাণের মধ্যে ছিল চাল, ডাল, আলু, লবণ ও সয়াবিন তেল। প্রথম আলো বন্ধুসভার শেরপুর জেলা শাখার সদস্যরা বলাইয়েরচর ইউনিয়নের পাইকরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ও নামাশেরিরচর গ্রামের একটি খোলা স্থানে এসব ত্রাণ বিতরণ করেন।

ত্রাণ পেয়ে খুশি বলাইয়েরচর গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বৃদ্ধা হরবলা (৭০) বলেন, ‘আমার থাকার ঘর নাই। মাইনষের জায়গায় পলিথিন দিয়া ঘর তুইল্যা থাকতাম। হেইডাও বন্যার পানিতে ভাসাইয়া নিয়া গেছে। স্বামী অচল। একটা মাইয়ার অন্য জায়গায় বিয়া হইছে। অহন খুব কষ্টে আছি। আপনারা আইজ যে সাহায্য দিলেন, এইডা দিয়া কয়ডা দিন ভালোমতন খাইতে পারমু।’

শেরপুর পৌরসভার পশ্চিমশেরী গ্রামটি শেরপুর-জামালপুর সড়কের মৃগী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। এ গ্রামের কর্মক্ষম অধিকাংশ মানুষ দিনমজুর, কাঠমিস্ত্রি, মোটরশ্রমিক, খুদে ব্যবসা ও ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর্থিকভাবে তাঁরা খুবই অসচ্ছল। তাঁদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। সরকারি জমিতে ঘর তুলে থাকছেন। এ গ্রামের অন্তত ২৫টি ঘর বন্যায় নিমজ্জিত হয়। পানির তোড়ে অনেক ঘরের টিনের বেড়া ভেঙে গেছে। তাঁরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউ কেউ খেয়ে, না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

তাঁদেরই একজন ফেরিওয়ালা মমিনের স্ত্রী চাঁদনী বেগম (২৫) বলেন, তাঁদের বসতঘর বন্যার পানিতে বিধ্বস্ত হয়েছে। এখন অন্য একজনের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘরে খাবারের সংকট। এই সময়ে প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া ত্রাণে তাঁদের অনেক উপকার হবে।

বন্যার্তদের সহায়তায় যাঁরা এগিয়ে এসেছেন

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিলে ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া সেলিম খান জমা দিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা। ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন চেষ্টার সভাপতি সেলিনা বেগম।

 বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা