গ্রেনেড হামলার দিনে আওয়ামী লীগের সমাবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ফটোসাংবাদিক বাপ্পির বাঁচার জন্য আকুতি। পাশে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সমাবেশ। ২০০৪ সালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে
গ্রেনেড হামলার দিনে আওয়ামী লীগের সমাবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ফটোসাংবাদিক বাপ্পির বাঁচার জন্য আকুতি। পাশে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সমাবেশ। ২০০৪ সালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে

আজও সেই দুঃসহ ক্ষণটি অপরাধী করে…

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সময়কার ছবিগুলো দেখতে গিয়ে বারবার কিছু দুঃসহ স্মৃতি তাড়াকরে ফেরে। গ্রেনেড হামলায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সহকর্মীদের ছবি দেখে ভাবি, একটি সুশৃঙ্খল সমাবেশ নিমেষেই কী করে রক্তস্রোতে পরিণত হয়?

হামলায় আহত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে ঘটনাস্থল থেকে নিজের মোটরসাইকেলে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক মীর মহিউদ্দিন সোহান


আর সব দিনের মতো ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংবাদকর্মীরা গিয়েছিলেন পেশাগত দায়িত্ব পালনে। কিন্তু বড় একটি অংশ বাড়ি ফিরেছিলেন রক্তাক্ত শরীর নিয়ে। গ্রেনেড হামলার পরপর ছিন্নভিন্ন মানবদেহ, আইভি রহমানের নিথর চাহনি, মানুষের বাঁচার আকুতি আজও বিবেককে নাড়া দেয়।

গ্রেনেড হামলা চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ট্রাকের ওপর নিচু হয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছেন এক ক্যামেরাপারসন

বুঝে উঠতে পারি না, কী এক ঘোরের মাঝে সেই মুহূর্তে ক্যামেরার সাটার টিপেছিলাম? নিজেও মানসিকভাবে স্বাভাবিক ছিলাম না। তার ওপর চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল নিথর রক্তাক্ত দেহ। কেউ জানাচ্ছিলেন বাঁচার আকুতি। অসহায় আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলাম। মনে পড়ে ফটোসাংবাদিক মীর মহিউদ্দিন সোহান ভাই রক্তাক্ত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে যখন মোটরসাইকেলে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই মুহূর্তে

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অসহায় দৃষ্টি। পুরোনো ছবিগুলো দেখে আঁতকে উঠি এই ভেবে, সেদিনের নারকীয় গ্রেনেড হামলার আগে গণমাধ্যমকর্মীসহ উপস্থিত জনতার সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে, সেটি কারও কল্পনাতেও ছিল না। গ্রেনেড হামলার পর আহত ব্যক্তিরা একটু সহযোগিতা পাওয়ার আশায় যেভাবে আকুতি জানাচ্ছিলেন, তাঁদের অনেককেই

হয়তো সেদিন সহযোগিতা করতে পারিনি। কিন্তু যখন জানতে পারলাম, গ্রেনেড হামলার তদন্তে ফটোসংবাদিকদের সেই ছবিগুলো ভূমিকা রেখেছে, তখন মনে খানিকটা স্বস্তি পেয়েছি।
একদিন নিশ্চয়ই পরিকল্পনাকারী ও হামলাকারীদের বিচার হবে। কিন্তু গ্রেনেড হামলায় হতাহতদের সেই আর্তনাদের, আকুতির দুঃসহ ক্ষণটি কি বেঁচে যাওয়াদের পিছু ছাড়বে?