Thank you for trying Sticky AMP!!

কবিরাজি থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তি

>

স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য শারীরিক সুস্থতা জরুরি। সৃষ্টির পর থেকে মানবদেহের অসুস্থতা ও তা নিরাময়ের পথ মানুষ নিজেই খুঁজে নিয়েছে। ধাপে ধাপে নানা বাঁকে এগিয়ে চিকিৎসাব্যবস্থা আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে। কী সেই বাঁকগুলো, কত দূরইবা এগিয়েছে আধুনিক চিকিৎসা—লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব

প্রতীকী ছবি (রয়টার্স)

মানবজাতির অগ্রগতির সঙ্গে চিকিৎসাব্যবস্থাও এগিয়েছে নানাভাবে। এই এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে নানা সমালোচনাও সঙ্গী হয়েছে তার। কিন্তু সেইকাল থেকেই রোগব্যাধি তো সকলেরই হয়েছে। একালে রোগ বাঁধালে যেতেই হয় হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকের কাছে। কিন্তু সেই তো গাদা গাদা টেস্ট, এ ফ্লোর ও ফ্লোর ঘুরে তার রিপোর্ট সংগ্রহ করো, চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য লাইনে দাঁড়াও, নয়তো কদিন আগে থেকেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করে রাখো—চিকিৎসাসেবা পাওয়া কী চাট্টিখানি কথা! চিকিৎসকের ছুরি-কাঁচির নিচে যাওয়ার কথা নাই–বা বললাম। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যও চিকিৎসাব্যবস্থার ঝক্কি নিতান্ত বাধ্য না হলে খুব কম লোকই পোহাতে চায়।

এখানে চিকিৎসাব্যবস্থার যেসব চিত্র বলা হলো, সেগুলো দরিদ্র দেশের নয়, আমেরিকার মতো ধনী দেশেরই চিকিৎসাব্যবস্থার বর্তমান চিত্র এটি। ইউরোপের চিত্রও খুব আলাদা কিছু নয়। আর বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থার কথা তো আমাদের জানাই। এককালে কবিরাজি চিকিৎসা বেশ জনপ্রিয় ছিল এ দেশে। চিকিৎসাব্যবস্থার বিবর্তনের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এককালের কবিরাজ বা হেকিম থেকে হালের ‘বায়োমেডিসিন’ এক দিনের অর্জন নয়। বায়োমেডিসিনের আজকের এই জয়জয়কারের সঙ্গে ইতিহাসবিদেরা কলোনি বিস্তারের সম্পর্কও খুঁজে পেয়েছেন। বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ বিস্তারের সূত্রে নতুন নতুন চিকিৎসাপদ্ধতির সম্প্রসারণ যেমন হয়েছে, তেমনি লুপ্ত হয়েছে স্থানিকভাবে প্রচলিত বিভিন্ন চিকিৎসাপদ্ধতি। আর এখন তো বিশ্বায়নের যুগ। আর এই যুগের চাহিদা মেনেই চিকিৎসাব্যবস্থা মোড় নিচ্ছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যব্যবস্থার দিকে।

আয়ূর্বেদ থেকে হোমিওপ্যাথ কিংবা হোমিওপ্যাথ থেকে আজকের বায়োমেডিসিনের যে বিবর্তন - সেখানে চিকিৎসাব্যবস্থা এবার সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক নিতে যাচ্ছে । নাহ, বায়োমেডিসিনও থাকছেই। তবে এই চিকিৎসাও মানুষের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার প্রচলিত ব্যবস্থায় আসছে বড় পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তনে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিচ্ছে বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। দৈনন্দিন জীবনে ডিজিটাল বিপ্লবের রূপকার গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যাপল, ফেসবুক, আমাজনের মতো প্রযুক্তি–মোগলদের সবার দৃষ্টি এখন ‘ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা’র দিকে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা বিষয়টি কী? একটু খোলাসা করা যাক। চিকিৎসকের জায়গায় আপনার আইফোনটিই যখন রোগ নির্ণয় করছে, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জায়গায় আপনার স্মার্টওয়াচই যখন ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, রক্তে সুগারের পরিমাণ, হৃৎস্পন্দনের মাত্রা কিংবা সম্ভাব্য ভয়াবহ রোগের লক্ষণ শনাক্ত করে ফেলছে, বুঝবেন আপনি ডিজিটাল চিকিৎসাব্যবস্থার সাক্ষাৎ দর্শন পেয়েছেন। সে অনুযায়ী তখন দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে পারবেন। ভাববেন না গালগল্প দিচ্ছি। সত্যিই, ডিজিটাল চিকিৎসাব্যবস্থার আওতায় সে রকমই কিছু ঘটতে যাচ্ছে আগত দিনে। তাই বলে সব রোগের দাওয়াই দেবে স্মার্টফোন বা স্মার্টঘড়ি, তা আগ বাড়িয়ে ভেবে পরে হতাশায় মুখ ভার করতে যাবেন না আবার। মোটামুটিভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে শনাক্ত করা যায়—এমন রোগগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনায়াসেই সামলাবে এই নতুন চিকিৎসাব্যবস্থা। আরও অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের উপায় নিয়ে বিস্তর গবেষণা তো চলছেই।

ফলে, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবায় কথায় কথায় চিকিৎসকের কাছে ছুটে যাও, এই টেস্ট সেই টেস্ট করিয়ে আনো—সেসব ভোগান্তি কিছুটা হলেও লাঘব হবে। তবে চিকিৎসা–সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা কর্মহীন হয়ে যাবেন, তেমনটিও নয়। চিকিৎসায় ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগে চিকিৎসকেরা বরং আরও নির্ভুলভাবে, আরও সহজ পন্থায় রোগ নির্ণয় ও দ্রুত চিকিৎসা দিতে সক্ষম হবেন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি, তা হলো চিকিৎসা খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। এতে নিম্নবিত্তরাও মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবার আওতায় আসতে পারবে, যা সারা বিশ্বের সবার জন্য চিকিৎসা নিশ্চিতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে বেগবান করবে বলেই আশা করা হচ্ছে। (চলবে)

আরও পড়ুন:
অ্যাপল, অ্যালফাবেট, আমাজন যা করছে
চিকিৎসকের বিকল্প তৈরি হচ্ছে!