Thank you for trying Sticky AMP!!

কাওসার আহমেদ চৌধুরীকে আর ফেরানো যাবে না

কাওসার আহমেদ চৌধুরী এখন ছবির মানুষ

‘আমায় ডেকো না, ফেরানো যাবে না....’। এটি গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা কালজয়ী একটি গান। গানের কথার মতোই বাস্তবে অনেক ডাকলেও আর কাওসার আহমেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে ৭৭ বছর বয়সে আজ মঙ্গলবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তিনি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরী কালজয়ী অনেক গান রচনা করেছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ছুটির দিনে-তে সাপ্তাহিক রাশিফল ‘আপনার রাশি’ লেখা শুরু করেন। তিনি প্রথাগত কোনো জ্যোতিষী ছিলেন না। নিজের লেখা রাশিফলের শুরুতেই তিনি লিখতেন, ‘নিজের ভাগ্য নিজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় শতকরা ৯০ থেকে ৯৬ ভাগ। বাকিটা ফেট বা নিয়তি।’ রাশিচক্রে ‘নিউমারলজি’ বা ‘সংখ্যা-জ্যোতিষ’ পদ্ধতি প্রয়োগ করতেন তিনি।

সৃজনশীল মানুষ হিসেবে কাওসার আহমেদ চৌধুরীর রাশিফল শুধু ভাগ্যগণনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সংগীত, কবিতার লাইন, রম্য—নানা কিছু মিলিয়ে একেকটা রাশির কথায় থাকত সাহিত্যগুণ। ১৯৯৯ সালে ছুটির দিনে ক্রোড়পত্রে ‘আপনার রাশিফল’ প্রকাশের পরই পাঠক এটি লুফে নেন।

Also Read: আমি শুধু ‘ছুটির দিনে’ই লিখি

সর্বশেষ গত ১ জানুয়ারি প্রকাশিত কাওসার আহমেদ চৌধুরীর ‘দৃষ্টিতে কেমন যাবে ২০২২’ পর্যন্ত তাঁর রাশিফলের জনপ্রিয়তা শুধুই বেড়েছে। কোনো শনিবার ‘আপনার রাশিফল’ প্রকাশিত না হলে অসংখ্য পাঠকের ফোন, ই-মেইল, ফেসবুক পেজের মন্তব্যে একটাই প্রশ্ন, ‘আজ আপনার রাশিফল কেন প্রকাশিত হলো না?’ ১ জানুয়ারির পরই নানা জটিলতায় অসুস্থ হয়ে পড়েন কাওসার আহমেদ চৌধুরী।

কাওসার আহমেদ চৌধুরীর একমাত্র সন্তান অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী আহমেদ সাফি চৌধুরী ঢাকায় এসে ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়াটিভ কেয়ার সেন্টারে তাঁকে ভর্তি করান। ১০ ফেব্রুয়ারি তাঁকে একটা বেসরকারি ক্লিনিকে স্থানান্তর করা হয়।

সেদিনই জানা যায় তিনি কোভিডে আক্রান্ত। কাওসার আহমেদ চৌধুরী কিডনি রোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। আহমেদ সাফি চৌধুরী বলেন, ‘আব্বার বিভিন্ন অঙ্গ ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে পড়ছিল। তবে কিছুটা চেতনা ছিল।’

কাওসার আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংগীতাঙ্গনে এবং প্রথম আলোর পাঠকমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। ক্লিনিকে ছুটে আসা সংগীত পরিচালক ফুয়াদ নাসের বাবু বলেন, ‘আমি জীবনে যে কটা গান গেয়েছি, সবই তাঁর লেখা। তাঁর মৃত্যু অপূরণীয় এক ক্ষতি।’ সংগীতায়োজক এজাজ খান স্বপন বলেন, ‘তিনি অনেক কালজয়ী গান লিখেছেন। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। কখনো পুরস্কারের পেছনে ছোটেননি।’

কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে আছে, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার, সেখানে বসন্ত আমার’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে রাতের নির্জনে’, ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে’, ‘এই রুপালি গিটার ফেলে’, ‘আমায় ডেকো না’ ইত্যাদি। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘ভাগ্য জানার উপায়’ বইটি লিখেছেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী। এ ছাড়া ‘ঘুম কিনে খাই’ নামে তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।

১৯৪৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর সিলেটে কাওসার আহমেদ চৌধুরীর জন্ম। তাঁর বাবা মোসাহেদ চৌধুরী। কাওসার আহমেদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। চারুকলায় পড়াশোনা করলেও সম্পন্ন করেননি। চলচ্চিত্রে নির্মাণে তাঁর আগ্রহ ছিল। একাধিক তথ্যচিত্রও তিনি নির্মাণ করেন। পেশাজীবনে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকরি করেছেন।

কাওসার আহমেদ চৌধুরীর জানাজা আগামীকাল সকাল নয়টায় ধানমন্ডির ত্বাকওয়া মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবার।