Thank you for trying Sticky AMP!!

ডিম নিরাপদ করতে মুরগিকে নিরাপদ খাদ্য দিতে হবে

ডিমের মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণ ও ঢাকা নগরীর মানুষের সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি পরিমাপ শীর্ষক একটি গবেষণা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় গবেষক। গবেষণায় ঢাকার ছয়টি বাজারের ডিমে মাত্রাতিরিক্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন অন্যতম গবেষক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক দোলন রায়। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক সাইফুল সামিন

দোলন রায়, অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশ্ন

ডিমের মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণ শীর্ষক গবেষণার ধারণাটি কীভাবে এল? গবেষণাটির প্রেক্ষাপট যদি বলতেন।

দোলন রায়: আসলে আমরা অনেক দিন ধরেই দূষণ, দূষক ও তার প্রভাব নিয়ে কাজ করছি। এর আগে আমি মাছ ও মাছের খাদ্যদূষক নিয়ে গবেষণা করেছি। সবাই কমবেশি ডিম খায়। এ কারণে ডিমের মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণ শীর্ষক গবেষণা করার বিষয়ে আমাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়।

Also Read: ঢাকার ছয় বাজারের ডিমে মাত্রাতিরিক্ত ভারী ধাতু

প্রশ্ন

গবেষণার জন্য শুধু ঢাকা শহরকেই কেন বেছে নিলেন?

দোলন রায়: ঢাকা জনবহুল শহর। ঢাকা দূষণেরও শহর। এই শহরে খাদ্যে দূষণ-ভেজালের অনেক প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তা ছাড়া আমাদের গবেষক দলটির বেশির ভাগ সদস্যই ঢাকায় থাকেন। সবকিছু মিলিয়ে গবেষণার নমুনা সংগ্রহের জন্য আমরা ঢাকাকে বেছে নিই।

প্রশ্ন

গবেষণার জন্য ঢাকার ছয়টি বাজার থেকে খামারে উৎপাদিত ডিম সংগ্রহ করেছেন আপনারা। কোন পদ্ধতিতে বাজারগুলো নির্বাচন করলেন?

দোলন রায়: আমরা অনেকটা দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বাজার ছয়টি নির্বাচন করেছি। তবে ঢাকার যে বাজারগুলোয় ডিমের জোগান বেশি, সেখান থেকেই নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে আমাদের অগ্রাধিকার ছিল।

Also Read: ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশিয়ে পোলট্রি ও মাছের খাদ্য তৈরি, দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

প্রশ্ন

ঢাকার ৬ বাজার থেকে ১২টি করে মোট ৭২টি ডিম সংগ্রহ করেছিলেন আপনারা। নমুনার এই সংখ্যাকে কি যথেষ্ট মনে করেন?

দোলন রায়: বলা যায়, আমরা একটা প্রাথমিক গবেষণা করেছি। সে হিসেবে আমরা ৭২টি নমুনা নিয়ে গবেষণা করেছি। তবে নমুনা বেশি হলে ভালো। কিন্তু এ বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে যে একেকটা নমুনায় (ডিম) এতগুলো ধাতু বিশ্লেষণ করা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।

প্রশ্ন

গবেষণায় ডিমে ১০টি ভারী ধাতুর উপস্থিতি খোঁজা হয়। বিষয়টি কিসের ভিত্তিতে ঠিক করলেন? এই ১০টির বাইরে ডিমে আরও কোনো ভারী ধাতু কি থাকতে পারে?

দোলন রায়: যে ধাতুগুলো ক্ষতিকর বলে বিবেচিত, সেগুলোর উপস্থিতি দেখার জন্যই আমরা ১০টি ধাতু নির্বাচন করি। এই ১০টির বাইরে আর কোনো ধাতুর উপস্থিতি ডিমে আছে কি না, তা জানার জন্য পরীক্ষা করে দেখা দরকার।

Also Read: খাদ্যে ক্ষতিকর ভারী ধাতু জনস্বাস্থ্যের জরুরি বিষয় 

প্রশ্ন

ডিমে ১০টি ভারী ধাতুর সব কটিরই উপস্থিতি পাওয়া গেছে গবেষণায়। এর মধ্যে ছয়টির উপস্থিতি সর্বোচ্চ অনুমোদিত মাত্রার (এমপিএল) মধ্যে রয়েছে। বাকি চারটির উপস্থিতি এমপিএলের চেয়ে বেশি। এই ফলাফল কী ইঙ্গিত দিচ্ছে? এটা কতটা বিপদের বার্তা দিচ্ছে?

দোলন রায়: খাদ্যে মাত্রাতিরিক্ত যেকোনো ধাতুর উপস্থিতিই খারাপ। এর কারণে হৃদ্‌যন্ত্র, কিডনি ও যকৃৎ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। ফলে ডিমে চারটি ভারী ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতির যে তথ্য আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, তা অবশ্যই উদ্বেগের কারণ।

ডিম
প্রশ্ন

দস্তা, তামা, সিসা ও লৌহ—এই চার ভারী ধাতুর উপস্থিতি ডিমে মাত্রাতিরিক্ত পাওয়া গেছে। এই ধাতুযুক্ত ডিম খেলে তা মানুষের জন্য কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে?

দোলন রায়: মাত্রাতিরিক্ত দস্তায় রক্তশূন্যতা ও ক্ষুধামান্দ্য হয়। অতিরিক্ত তামার উপস্থিতিতে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, পেটে অস্বস্তি ইত্যাদি হয়। অতিরিক্ত সিসা কার্ডিওভাসকুলার ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করে, উচ্চ রক্তচাপ বাড়ায়। অতিরিক্ত লোহা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, শ্বাসপ্রশ্বাসে জটিলতা, খিঁচুনি, বিষণ্নতা ইত্যাদির জন্য দায়ী।

প্রশ্ন

ডিমে এসব ভারী ধাতু এল কী করে? ডিমে ভারী ধাতুর উৎস নিয়ে আপনাদের কোনো পর্যবেক্ষণ বা গবেষণা আছে?

দোলন রায়: ডিমে এসব ভারী ধাতুর মূল উৎস পোলট্রি ফিড। এ ছাড়া বিভিন্ন ফিড অ্যাডিটিভসও (পশু-প্রাণীর পুষ্টিতে ব্যবহৃত উপকরণ) এসব ভারী ধাতুর উপস্থিতির কারণ। মাছের খাবার নিয়ে আমাদের একটি গবেষণা আছে। সেখানে বিষয়টি উঠে এসেছে।

প্রশ্ন

ডিমকে গরিবের আমিষ বলে। তবে গরিব-ধনীনির্বিশেষে সবাই কমবেশি ডিম খায়। এ অবস্থায় ডিমকে নিরাপদ করার জন্য আপনার পরামর্শ কী?

দোলন রায়: ডিমকে নিরাপদ করার জন্য প্রথমে মুরগিকে নিরাপদ খাদ্য দিতে হবে। পাশাপাশি মুরগির জন্য নিরাপদ আবাসের ব্যবস্থা করাও জরুরি। এ নিয়ে ভবিষ্যতে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।