Thank you for trying Sticky AMP!!

আইএমএফের শর্ত পূরণ অনিশ্চিত

  • জ্বালানি মন্ত্রণালয় তিন মাস নয়, এখন প্রতি মাসে দাম নির্ধারণের চিন্তা করছে।

  • বিপিসি দাম ঠিক করার  একটি সূত্র তৈরি করেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)

ডিজেল, পেট্রল, অকটেনসহ জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে নিয়মিত সমন্বয় করতে চায় সরকার। শুরুতে এটি তিন মাস পরপর নির্ধারণের পরিকল্পনা ছিল। এখন প্রতি মাসে দাম নির্ধারণের চিন্তা চলছে।

অবশ্য দাম নির্ধারণের সূত্র এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তাই সেপ্টেম্বর থেকে এটি না-ও শুরু হতে পারে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগামী মাস সেপ্টেম্বর থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বালানি তেলের দাম নিয়মিত সমন্বয়ের শর্ত দিয়েছিল।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দাম নির্ধারণের একটি সূত্র তৈরি করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো নির্দেশনা এখনো দেয়নি জ্বালানি বিভাগ।

ভোক্তারাও দাম সমন্বয় চায়। কিন্তু এভাবে দাম নির্ধারণের সঙ্গে তো ভোক্তার সংশ্লিষ্টতা নেই। নিজেদের মতো দাম নির্ধারণ করবে, তা-ই কার্যকর হবে। তিনি বলেন, বিপিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এসব ধরা পড়ার ভয়ে তারা বিইআরসিতে (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) আসে না।
এম শামসুল আলম, ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

বিপিসির তিনজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের অনেক রাজ্যে প্রতিদিন দাম সমন্বয় করা হয়। সব পেট্রলস্টেশনকে যুক্ত করে তাদের এমন অনলাইন কাঠামো তৈরি করা আছে। কিন্তু দেশে হুট করে এটি করা সম্ভব নয়। বিশ্ববাজারে দাম দ্রুত পরিবর্তিত হয়। তাই দাম তিন মাস পরপর নির্ধারণ করা হলে ভোক্তা বা বিপিসি দুই পক্ষেরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই দুই মাস বা এক মাস পরপর দাম নির্ধারণের চিন্তা করা হচ্ছে।

আবার এ-ও হতে পারে যে শুরুতে দুই মাস পরপর দাম নির্ধারিত হবে। পরে তা এক মাসে নামিয়ে আনা হবে।

Also Read: জ্বালানি সরবরাহ ও সংকটের তথ্য নিচ্ছে আইএমএফ 

দেশে জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহের একমাত্র সংস্থা হলো বিপিসি। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা ফার্নেস তেল ও উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েলের মতো তেলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করে বিপিসি। তবে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম নির্বাহী আদেশে নির্ধারণ করে জ্বালানি বিভাগ।

সর্বশেষ গত বছরের আগস্টের শুরুতে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম এক লাফে গড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয়। এ নিয়ে সমালোচনা হলে ২৩ দিনের মাথায় দাম ৫ শতাংশের মতো কমায় সরকার।

জ্বালানি তেল

এরপরও মুনাফায় ফিরতে কয়েক মাস লেগে যায় বিপিসির। বিশ্ববাজারে দাম কমার পর জানুয়ারি থেকে মুনাফা করতে থাকে সংস্থাটি। মুনাফার টাকায় আগের ঘাটতি সমন্বয় করা হয়। এরপর গত মাসে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু বিশ্ববাজারে আবার দাম বেড়ে যাওয়ায় তা আর হয়নি।

বিপিসি এখন পেট্রল ও অকটেন বিক্রিতে মুনাফা করছে। তবে ডিজেলে লোকসান হচ্ছে। দেশে ব্যবহৃত মোট জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশই ডিজেল।

স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ নিয়ে গত সপ্তাহে জ্বালানি বিভাগে একটি বৈঠক করে বিপিসি। এতে তারা দাম নির্ধারণের সূত্র তুলে ধরে। লভ্যাংশ, উন্নয়ন তহবিলসহ কয়েকটি খাত মিলে জ্বালানি তেলে প্রায় ১০ শতাংশ মুনাফা ধরে দাম হিসাব করেছে বিপিসি। এটি নিয়ে ওই বৈঠকে আপত্তি জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, সময়মতো সবকিছু এগোচ্ছে। দাম নির্ধারণের একটি সূত্র তৈরি করে জ্বালানি বিভাগের কাছে দেওয়া হয়েছে। এটি বিপিসির প্রস্তাব। এ নিয়ে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। তিন মাসের বদলে প্রতি মাসে দাম নির্ধারণ করার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

Also Read: আগের মতো সস্তায় রাশিয়ার জ্বালানি তেল পাচ্ছে না ভারত

বিপিসি সূত্র বলছে, দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারের দাম ও মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান হিসাব করা হবে। প্রতি মাসে দাম নির্ধারণ করা হলে আগের মাসের জ্বালানি তেলের দাম গড় করা হবে। আর তিন মাস পরপর করা হলে আগের তিন মাসের দাম গড় করে হিসাব করা হবে। এর বাইরে আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে আমদানি শুল্ক। বর্তমানে আমদানি করা জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে ট্যারিফ মূল্য (শুল্ক আরোপের জন্য নির্ধারিত দর) ধরে শুল্ক হিসাব করা হয়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বা কমলেও এটি পরিবর্তন হয় না।

জ্বালানি তেলে ট্যারিফ মূল্য সাধারণত কেনা দামের চেয়ে কম ধরা হয়। এতে শুল্ক কম আসে। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কেনা দামে শুল্ক নির্ধারণের কথা জানিয়েছে। সেটা হলে জ্বালানি তেলে বিপিসির খরচ বেড়ে যাবে। যদিও এ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি সরকার। তাই ট্যারিফ মূল্য ধরেই দাম নির্ধারণের সূত্র তৈরি করেছে বিপিসি।

এর আগে গত এপ্রিলে জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসির সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। এ সময় ওই দলকে বিপিসি জানায়, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণে বিশ্বব্যাংকের একজন পরামর্শকের অধীনে একটি কমিটি কাজ করছে। এটি সেপ্টেম্বর থেকে চালু করার বিষয়টিও জানানো হয় ওই বৈঠকে।

বাংলাদেশের জন্য গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে আইএমএফ। এই ঋণের একটি শর্ত হলো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে ফেলতে হবে। আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি দিয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে ঋণের শর্ত পূরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করতে আগামী অক্টোবরে আইএমএফের একটি দল আসার কথা রয়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ভোক্তারাও দাম সমন্বয় চায়। কিন্তু এভাবে দাম নির্ধারণের সঙ্গে তো ভোক্তার সংশ্লিষ্টতা নেই। নিজেদের মতো দাম নির্ধারণ করবে, তা-ই কার্যকর হবে। তিনি বলেন, বিপিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এসব ধরা পড়ার ভয়ে তারা বিইআরসিতে (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) আসে না।