আগের মতো সস্তায় রাশিয়ার জ্বালানি তেল পাচ্ছে না ভারত

গত এক বছরে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনে অনেক বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় করেছে ভারত। এতে তাদের মূল্যস্ফীতির হারও সহনীয় পর্যায়ে আছে। কিন্তু রাশিয়ার তেল কেনার সেই আকর্ষণ কমে আসছে, কারণ ব্যারেলপ্রতি আগে যেখানে ২৫ থেকে ৩০ ডলারের সুবিধা পেত ভারত, এখন সেটা ৪ ডলারে নেমে এসেছে।

সংবাদ সংস্থা টিএনএনের সূত্রে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ধনী দেশগুলোর জোট রাশিয়ার তেলের দর ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে বেঁধে দিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দর এখন ৭৪ থেকে ৭৫ ডলারের ঘরে। কিন্তু রাশিয়ার তেল পরিবহনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারের সঙ্গে দামের তেমন একটা পার্থক্য থাকছে না।

ভারতের তেল পরিশোধনাগার কোম্পানিগুলো সরবরাহ পাওয়ার ভিত্তিতে রাশিয়ার তেল কিনছে। বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো আবার নিষেধাজ্ঞা না ভেঙে জাহাজ ও বিমা জোগাড় করে এই তেল ভারতে পাঠাচ্ছে। জি–৭ রাশিয়ার তেলের দাম ৬০ ডলারে বেঁধে দেওয়ার পর বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ওই দামের ওপরে গেলে জাহাজ ও বিমা পাওয়া কঠিন হয়ে যায়, কারণ এসব ব্যবসায় ইউরোপীয়দের একচেটিয়া প্রাধান্য।

এ ছাড়া ভারতের তেল পরিশোধনাগারগুলো ভেঙে ভেঙে রাশিয়ার তেল কিনে থাকে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার তেল বিক্রেতারা ঠিক এ পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। রাশিয়ার তেল বিক্রেতারা বাল্টিক ও কৃষ্ণসাগর থেকে তেল পরিবহনে ব্যারেলপ্রতি ১১ থেকে ১৯ ডলার করে নিচ্ছে, যা স্বাভাবিকের প্রায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া অপরিশোধিত তেলের দর ধরছে তারা জি–৭-এর বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ব্যারেলে এক থেকে দুই ডলার কম।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও কিছুটা কমলে ভারত আর কার্যত ছাড়ের সুবিধা পাবে না। রাশিয়া থেকে ভারতে তেল পরিবহনের জন্য জাহাজ ও বিমার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছে তিনটি স্বল্প পরিচিত সংস্থা, যেগুলো ঠিক বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তারা সহজেই ফাঁকফোকরগুলো বের করে তার সুযোগ নিতে পারে, তাতে রাশিয়ার তোলের দাম বিশ্ববাজারের দামের সমপর্যায়ে চলে যাবে।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর তেল ব্যবসায়ীরা পুরোনো ট্যাংকার কিনে তেল পরিবহন শুরু করেন। মূলত, নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রাশিয়ার তেল পরিবহনে এসব ট্যাংকার ব্যবহৃত হচ্ছে। এর আগে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পরিবহনে এসব ট্যাংকার ব্যবহৃত হয়েছে। এগুলো ডার্ক ফ্লিট নামে পরিচিত—মস্কো বেশ বড় ডার্ক ফ্লিট তৈরি করেছে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নতুন করে দর-কষাকষি করা ছাড়া ভারতের পক্ষে আর কম দামের তেলের সুবিধা নেওয়া সম্ভব হবে না। চীনের বাজার রাশিয়ার তেলে ছেয়ে গেছে। কিন্তু দেশটির প্রবৃদ্ধির গতি থমকে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ছে না। ভারতে তেলের ব্যবহার প্রতিবছরই ৫ থেকে ৬ শতাংশ করে বাড়ছে—এ বাস্তবতায় ভারত দর-কষাকষি করার মতো জায়গায় আছে।

তবে ভারত ইতিমধ্যে কিছু লাভজনক চুক্তি করেছে, যেমন রাশিয়ার রসনেফটের কাছ থেকে ভারতের রাষ্ট্রীয় সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল ব্যারেলপ্রতি ৮ ডলার ছাড়ে ৬০ লাখ ব্যারেল তেল কিনছে।

ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানির ৪০ শতাংশই এখন আসছে রাশিয়া থেকে। সোয়া এক বছর আগে এই হার ছিল মাত্র ২।