Thank you for trying Sticky AMP!!

কিছুতেই মশা কমছে না

দুই মাসে রাজধানীতে মশা বেড়েছে ৪০% 

উত্তর সিটিতে মশা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে উত্তরা ও দক্ষিণখান এলাকায় মশার প্রকোপ বেশি।

মশা মারতে কয়েল, অ্যারোসল, মশা তাড়ানোর বৈদ্যুতিক যন্ত্র—সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে কোনো কিছুর কমতি নেই। কিন্তু কিছুতেই মশা কমছে না। রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কে থাকেন চাকরিজীবী সিরাজুল ইসলাম। তাঁর কথা, ‘রাতে খাওয়ার সময় ডাইনিংয়ের নিচে কয়েল দিয়ে রাখতে হয়। বাসার কোথাও বসে একটু জিরোবার উপায় নেই। সকাল, সন্ধ্যা, রাত—সব সময় প্রায় একই অবস্থা। মশা তো কমে না।’ 

Also Read: বাড়ছে কিউলেক্স মশা, নতুন ঝুঁকির শঙ্কা

উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টর পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ শরীফুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব জায়গায় মশা। আমার ওয়ার্ডে মশকনিধনের জন্য ১০ জন কর্মী। প্রত্যেককে প্রতিদিন কাজে পাঠাচ্ছি। কিন্তু মশা কমছে না সেভাবে। চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ 

রাতে খাওয়ার সময় ডাইনিংয়ের নিচে কয়েল দিয়ে রাখতে হয়। বাসার কোথাও বসে একটু জিরোবার উপায় নেই। সকাল, সন্ধ্যা, রাত—সব সময় প্রায় একই অবস্থা। মশা তো কমে না।
চাকরিজীবী সিরাজুল ইসলাম

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন এলাকায় কিউলেক্স মশার প্রকোপ ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। এর মধ্যে উত্তর সিটিতে বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ঢাকার দুই সিটি এবং সাভার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত এক ধারাবাহিক জরিপে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি মার্চ মাসে কিউলেক্স মশার পরিমাণ ৪০ শতাংশ বেড়েছে।

এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরের অক্টোবর থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে মশার ওপর জরিপ করছি; এবং প্রতি মাসে আগের মাসের তুলনায় মশার বৃদ্ধি দেখছি।’

Also Read: ঢাকায় মশা কমছে না কেন

কীটতত্ত্ববিদেরা বলেন, দেশে প্রায় ১২৩ প্রজাতির মশা আছে। এর মধ্যে ১৬ প্রজাতির মশার প্রকোপ বেশি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বছরজুড়ে যে কয়েক প্রজাতির মশা থাকে, এর মধ্যে কিউলেক্স ৯৫ শতাংশের বেশি। কিউলেক্স মশার কামড়ে গোদ ও নানা ধরনের চর্মরোগ হতে পারে।

গত বছরের অক্টোবর থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে মশার ওপর জরিপ করছি; এবং প্রতি মাসে আগের মাসের তুলনায় মশার বৃদ্ধি দেখছি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার

যেভাবে গবেষণা

ঢাকা দক্ষিণ সিটির যাত্রাবাড়ী, উত্তর সিটির দক্ষিণখান, উত্তরার দুটি স্থান ও মিরপুর এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাভার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ফাঁদ পেতে মশা পর্যবেক্ষণ করছেন গবেষকেরা। মোট ১২টি ফাঁদ পাতা হয়েছে। দেখা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে এসব এলাকায় প্রতিটি ফাঁদে গড়ে মশা ছিল ৩০০টি। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৩৮৮ আর চলতি মার্চ মাসে তা হয়েছে ৪২০টি। গত ৭ থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত এবারের জরিপ হয়েছে।

জরিপ হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে উত্তরায় গড় মশার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, এই সংখ্যা ৬০০। এরপরই আছে দক্ষিণখান। উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরে সর্বাধিক মশা পাওয়া গেছে, সেটি ৬০০টির ওপরে।

Also Read: রাতে মশার কামড় থেকে বাঁচার ৬ উপায়

এই ১৭ নম্বর সেক্টর পড়েছে উত্তর সিটির ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ফরিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মশা নিয়ে বেকায়দায় আছি। চেষ্টা করেও কমাতে পারছি না।’ 

গবেষণায় দেখা গেছে, উত্তরের তুলনায় ঢাকা দক্ষিণে অপেক্ষাকৃত মশা কম। তারপরও যাত্রাবাড়ীতে গড় মশার সংখ্যা ৪০০টির ওপরে। এ গবেষণায় বিচ্ছিন্নভাবে আরও কিছু জায়গা দেখা হয়েছে। দেখা গেছে, দক্ষিণের হাজারীবাগ, শ্যামপুর ও মেরাদিয়ায় মশার আধিক্য আছে।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বছরজুড়ে যে কয়েক প্রজাতির মশা থাকে, এর মধ্যে কিউলেক্স ৯৫ শতাংশের বেশি। কিউলেক্স মশার কামড়ে গোদ ও নানা ধরনের চর্মরোগ হতে পারে।

দুই সিটি করপোরেশনের বক্তব্য

মশার উপদ্রব নিয়ে কথা হয় দুই সিটির দুই প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে। উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘উত্তরায় মশার প্রকোপ বৃদ্ধির মূল কারণ সেখানকার বেশ কিছু খাল রাজউকের নিয়ন্ত্রণাধীন। সেগুলোতে আমরা কাজ করতে পারি না। আবার মেট্রোরেলের লাইনের পাশে একটি নালা আছে। সেখানেও পানি জমে থাকে। এ ব্যাপারে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে আমরা জানিয়েছি। আর শুধু কিউলেক্স নিয়ে শিগগিরই আমরা জরিপ করছি। এরপর আরও কার্যকর ব্যবস্থার দিকে যাব।’

দক্ষিণ সিটিতে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করেন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির। তাঁর কাছে গবেষণায় পাওয়া কিছু এলাকার মশার ঘনত্বের উপাত্ত তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘বিচ্ছিন্নভাবে কিছু এলাকায় মশার উপদ্রব আছে, এটা আমরা জানি। যেমন হাজারীবাগ। এটা নিচু এলাকা। সেখানে ডোবা–নালা আছে।’

মশা নিয়ে বেকায়দায় আছি। চেষ্টা করেও কমাতে পারছি না।
৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ফরিদ আহমেদ

অধ্যাপক কবিরুল বাশারের গবেষণা দলের জরিপের ফল ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম আলোয়। তখন গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে মশার পরিমাণ ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। বাস্তবেও তা–ই হয়েছে। গবেষক কবিরুল বাশার বলেন, ‘দুই সিটি সেই সময়ে যদি সজাগ হতো, তবে এ মাসে হয়তো মশার উপদ্রব কমত।’

রাজধানীর আকার প্রসারিত হচ্ছে, লোক বাড়ছে; কিন্তু সে তুলনায় মশার নিয়ন্ত্রণ জোরালো নয় বলেই গবেষকদের অভিযোগ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতি মাসেই দুই সিটির মশা জরিপের ব্যবস্থা রাখা উচিত। বেশি ঘনত্বের জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

দুই সিটি সেই সময়ে যদি সজাগ হতো, তবে এ মাসে হয়তো মশার উপদ্রব কমত
গবেষক কবিরুল বাশার