Thank you for trying Sticky AMP!!

কনুই দিয়ে লিখেই হাবীবের বাজিমাত

হাবীবের এক হাত নেই, আরেক হাতের কনুই পর্যন্ত নেই। এই সীমাবদ্ধতা নিয়েও হাবীব এইচএসসি পরীক্ষায় সফল। প্রথম আলো ফাইল ছবি।

কোনো বাধাই দমিয়ে রাখতে পারেনি হাবীবকে। এক হাত নেই। অন্য হাত কনুই পর্যন্ত। এভাবেই বসেছিলেন এবারের এইচএসসি পরীক্ষায়। ঠিকই ছিনিয়ে এনেছেন সাফল্য।

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছিলেন এই তরুণ। আজ বুধবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জানা যায়, হাবীব জিপিএ ৩.৮৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হাবীবুর রহমান বলেন, এই ফলাফলে তিনি সন্তুষ্ট। লিখতে তাঁর একটু অসুবিধা হয়। তবে এ জন্য পরীক্ষায় কোনো বাড়তি সময় নেননি। স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি।

হাবীব বলেন, মা-বাবা, শিক্ষক ও সবার আন্তরিক সহযোগিতায় তাঁর এই সফলতা। কারও বোঝা হয়ে থাকতে চান না তিনি। দাঁড়াতে চান নিজের পায়ে। তিনি আরও পড়াশোনা করতে চান।

হাবীবের কলেজের অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, হাবীবের এমন সাফল্যে কলেজ গর্বিত। তিনি বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ হাবীবকে ভবিষ্যতেও সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাবে।

হাবীব এর আগে এসএসসিতে ৪.৮৬ পেয়েছিলেন। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় তিনি জিপিএ-৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও জেএসসি পরীক্ষায় ৪ দশমিক ৬৭ পেয়েছিলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘স্বাভাবিক থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে না পেরে ঝরে পড়ে। হাবীব তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন, অদম্য ইচ্ছা থাকলে সফল হওয়া যায়।’ তিনি বলেন, হাবীব অন্য স্বাভাবিক ছেলেদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাধা পেরিয়ে এত দূর আসা তাঁর জন্য বিরাট সফলতা। উচ্চশিক্ষা বা যেকোনো প্রয়োজনে তাঁকে সহযোগিতা করা হবে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুর গ্রামের বাসিন্দা হাবীব। অটোরিকশাচালক রমজান আলী ও রাশেদা বেগম দম্পতির সন্তান তিনি।

হাবীবের পরিবার জানায়, পাঁচ বছর বয়সে হাবীব রাঙ্গুনিয়া থেকে খাগড়াছড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সে সময় সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর একটি হাত সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ও অন্যটি থেঁতলে যায়। থেঁতলে যাওয়ার কারণে অন্য হাতটাও কেটে ফেলতে হয়। দুই হাত না থাকলেও ছোটবেলা থেকে তিনি সবকিছু নিজে করার চেষ্টা করতেন। এখন অন্য স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের মতো হাবীব নিয়মিত কলেজে যান, কম্পিউটার ব্যবহার করেন, মুঠোফোন চালান। এমনকি ক্রিকেট-ফুটবলসহ শারীরিক কসরতপূর্ণ খেলাধুলায় নৈপুণ্য দেখিয়েছেন হাবীব।

এর আগে ‘থেমে নেই হাবীব’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের নজরে আসে। এরপর মন্ত্রী হাবীবকে বাসায় ডেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা শিক্ষা অনুদান দেন। সেই সময় ভবিষ্যতে হাবীবের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী।