থেমে যায়নি হাবীব

হাবীবের এক হাত নেই, আরেক হাতের কনুই পর্যন্ত নেই। তবুও অদম্য সে। এই সীমাবদ্ধতা নিয়েও এইচএসসি পরীক্ষা দিতে এসেছে। গতকাল বেলা ১১টায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর রাঙ্গুনিয়া ডিগ্রি কলেজকেন্দ্রে।  প্রথম আলো
হাবীবের এক হাত নেই, আরেক হাতের কনুই পর্যন্ত নেই। তবুও অদম্য সে। এই সীমাবদ্ধতা নিয়েও এইচএসসি পরীক্ষা দিতে এসেছে। গতকাল বেলা ১১টায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর রাঙ্গুনিয়া ডিগ্রি কলেজকেন্দ্রে। প্রথম আলো

এক হাত পুরো নেই। অন্য হাত কনুই পর্যন্ত। এমন শারীরিক পরিস্থিতির মধ্যেও থেমে নেই হাবীবুর রহমান। প্রাথমিক, জুনিয়র ও মাধ্যমিক পেরিয়ে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার টেবিলে বসেছে সে।

গতকাল সোমবার এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে বাংলা বিষয়ের প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিয়েছে সে। বেলা ১১টার দিকে উত্তর রাঙ্গুনিয়া ডিগ্রি কলেজ পরীক্ষাকেন্দ্রের ভবনের চতুর্থতলার ৪০১ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, একেবারে শেষ বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে হাবীব। অন্য স্বাভাবিক পরীক্ষার্থীদের মতোই সে লিখছে।

জানতে চাইলে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জহির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সে স্বাভাবিক ছেলেদের মতো পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। বাড়তি কোনো সময় দেওয়ার নিয়ম নেই। তবে তাঁর অসুবিধা হচ্ছে কিনা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি।’

কেন্দ্রের পাশে উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শান্তনু বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাভাবিক থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে না পেরে ঝরে পড়ছে। হাবীব তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে অদম্য ইচ্ছা থাকলে যে সফল হওয়া যায়।’

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুর গ্রামের অটোরিকশাচালক রমজান আলী ও রাশেদা বেগম দম্পতির সন্তান হাবীবুর রহমান।

পরীক্ষা শেষে হাবীব বলে, অস্বাভাবিকভাবে লিখতে একটু অসুবিধা হয়। তবুও এগিয়ে যেতে চায় সে। মা-বাবা, শিক্ষক ও সবার আন্তরিক সহযোগিতায় সে এত দূর এসেছে। কারও বোঝা হয়ে না থেকে সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। ভবিষ্যতে সে প্রকৌশলী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

হাবীবের পরিবার জানায়, হাবিবের বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন রাঙ্গুনিয়া থেকে খাগড়াছড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর একটি হাত সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ও অন্যটি থেঁতলে যায়। থেঁতলে যাওয়ার কারণে এক হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। তার দুই হাত না থাকলেও ছোটবেলা থেকে সে সবকিছু নিজে করার চেষ্টা করত। এখন অন্য স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের মতো সে-ও নিয়মিত কলেজে যায়, কম্পিউটার ব্যবহার করে, মুঠোফোন চালায়, নিজ হাতে খাওয়া, এমনকি ক্রিকেট-ফুটবলসহ শারীরিক কসরতপূর্ণ খেলাধুলায় নৈপুণ্য দেখায়।

তাঁর কলেজের অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, হাবীব বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এসএসসিতে ৪ দশমিক ৮৬ পেয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছিল। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং জেএসসি পরীক্ষায় ৪ দশমিক ৬৭ পায়। তাঁকে উপবৃত্তিসহ সব সুযোগ-সুবিধা কলেজ কর্তৃপক্ষ দিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, হাবীব অন্য স্বাভাবিক ছেলেদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাধা পেরিয়ে এত দূর আসা তার জন্য বিরাট সফলতা। উচ্চশিক্ষায় বা যেকোনো প্রয়োজনে তাকে সহযোগিতা করা হবে।