Thank you for trying Sticky AMP!!

গ্রেপ্তারের পর শিক্ষানবিশ আইনজীবীর মৃত্যু: ডিবির এসআইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

রেজাউল করিম

বরিশালে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যদের হাতে গ্রেপ্তারের তিন দিন পর বরিশাল আদালতের শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিম ওরফে রেজার (৩০) মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে বরিশাল মেট্রোপলিটন আদালতে রেজাউলের বাবা ইউনুস মুনশি মামলাটি করেন।

মামলায় নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপপরিদর্শক মহিউদ্দিন আহমেদকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুজনকে আসামি করা হলেও তাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

মামলা দায়েরের পর মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আনিসুর রহমান বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।

এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত বরিশাল মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিনকে প্রত্যাহারের কথা ছড়িয়ে পড়ে। তবে মঙ্গলবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। পরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ–সংক্রান্ত কোনো আদেশ তিনি পাননি।

Also Read: গ্রেপ্তারের তিন দিন পর যুবকের মৃত্যু, পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ

আদালত সূত্র জানায়, আজ বেলা ১১টার দিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়, ২৯ ডিসেম্বর রাত আটটার দিকে নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে তাঁর ছেলে রেজাউলকে আটক করেন এসআই মহিউদ্দিন আহমেদ। রেজাউলের কাছে মহিউদ্দিন দুজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম জানতে চান। রেজাউল কিছু জানেন না বললে তাঁর পকেটে হাত দিয়ে নেশাজাতীয় ইনজেকশন পাওয়ার দাবি করে তাঁকে আটক করে নিয়ে যান। এরপর রেজাউলের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরে আহত রেজাউলকে থানার মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ জানুয়ারি বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২ জানুয়ারি রাতে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের কারণেই ছেলের মৃত্যু হয়েছে বলে ইউনুস মুনশি মামলায় অভিযোগ করেন।

মামলায় নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপপরিদর্শক মহিউদ্দিন আহমেদকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুজনকে আসামি করা হলেও তাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুলিশের নির্যাতন ও হেফাজতে রেজাউলের মৃত্যু হয়েছে বলে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় মামলা করে আদালতের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন বাদী।

ইউনুস মুনশি বলেন, সোমবার তিনি কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়েরের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছেন।

Also Read: লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ, এসআইয়ের বাড়িতে ইট নিক্ষেপ

এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় গঠন করা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার সকাল থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। মঙ্গলবার সকালে তাঁরা নিহত রেজাউল করিমের বাড়িতে যান এবং স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তদন্ত দলের প্রধান নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নিহত রেজাউলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আরও কথা বলব। যাতে এ ঘটনার প্রকৃত সত্য বের করে আনা যায়, সে জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হবে। যাতে উভয় পক্ষ ন্যায়বিচার পায়, তা নিশ্চিত করা হবে।’

অভিযুক্ত এসআই মহিউদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, ২৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে রেজাউলকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তাঁর সঙ্গে ১৩৬ গ্রাম গাঁজা ও ৪টি নেশাজাতীয় ইনজেকশন পাওয়া যায়। ওই দিন রাত পৌনে ১২টায় তাঁকে কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। রাতেই মামলা করা হয় এবং পরের দিন আদালত রেজাউলকে কারাগারে পাঠানো হয়। রেজাউলের বিরুদ্ধে আগে থেকেই মাদক মামলা আছে এবং তিনি মাদকাসক্ত। তাঁকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি।

Also Read: বরিশালে নির্যাতনে যুবকের মৃত্যুর বিচার দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশ

তবে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, রেজাউলকে ৩০ ডিসেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। তখন কারাগারে চিকিৎসক তাঁকে দেখে কিছুটা অসুস্থ মনে করে কারা হাসপাতালে পাঠান। তাঁকে কারাগারে পাঠানোর চিঠিতে পায়ের কুঁচকিতে জখম আছে বলে উল্লেখ ছিল। ১ জানুয়ারি তাঁর পায়ের আর্টারি (ধমনি) থেকে রক্তপাত শুরু হলে তাঁকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় এবং আত্মীয়স্বজনকে খবর দেওয়া হয়।

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হরে কৃষ্ণ সিকদার বলেন, রক্তক্ষরণের কারণে ১ জানুয়ারি ৯টা ৩৫ মিনিটে হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে রেজাউলকে ভর্তি করে কারা কর্তৃপক্ষ। তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কার্ডিওপালমোনারিক ফেইলিয়র’, ‘হেমোরেজিক শক’। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হেমোরেজিক শক অর্থ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং কার্ডিওপালমোনারিক ফেইলিয়র অর্থ আকস্মিক হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া।