Thank you for trying Sticky AMP!!

‘ছেলে নাই, ঈদের কোনো আনন্দও নাই’

অশ্রুসজল চোখে সন্তানের স্মৃতিচারণ করছিলেন সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকারের মা–বাবা। পাশে তাঁর ছোট বোন। বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অলুয়া গ্রামে

‘একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। সে থাকে শ্বশুরবাড়িতে। ছোট ছেলে সালাউদ্দিন সরকার সৌদি আরবে। বছরখানেক আগে চাকরি থেকে অবসরে আসেন স্বামী। বড় ছেলে নাঈমই (মহিউদ্দিন সরকার) আমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিল। মা–ছেলে বাড়িতে থাকতাম। গল্প করতাম। ঈদের কেনাকাটাও একসঙ্গে করতাম। এটা–ওটা রান্না করতে বলত। সেই ছেলেই নাই, এবার ঈদের কোনো আনন্দও নাই। ছেলের কথা মনে কইরা রাইতে ঘুমাইতে পারি না। টগবগে তাজা ছেলেটা আমার নাই—এটা বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হয়।’

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার ওরফে নাঈমের মা নাজমা আক্তার গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এভাবেই ছেলের স্মৃতিচারণ করছিলেন। এ সময় মহিউদ্দিন যে কক্ষে থাকতেন, সেখানে বসেই তিনি ছেলের ছবি হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

১৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের শংকুচাইলসংলগ্ন হায়দ্রাবাদ এলাকায় ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত পিলারের কাছ থেকে (বাংলাদেশের অভ্যন্তরে) সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার ওরফে নাঈমের (২৮) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। পরের দিন বিকেলে বুড়িচং থানায় মামলা করেন মহিউদ্দিনের মা নাজমা আক্তার। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়।

মহিউদ্দিন সরকার কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত কুমিল্লার ডাক পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন। এর আগে তিনি আনন্দ টেলিভিশনের ব্রাহ্মণপাড়া-বুড়িচং প্রতিনিধি ছিলেন।
নাজমা আক্তারের ক্ষোভ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. ফরহাদ মৃধা ওরফে মনির হোসেন ও পলাশ মিয়ার প্রতি। তিনি বলেন, ‘ওরা আমার ছেলেকে ঘটনার দিন বেলা ১টা ৩০ মিনিটে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। ওরা এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে।’

Also Read: ভারতে হত্যা করে লাশ ফেলা হয় বাংলাদেশে

নাজমা আক্তারের সঙ্গে কথা বলার সময় মহিউদ্দিনের বাবা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এসআই) মোশারফ হোসেন সরকার ও মহিউদ্দিন সরকারের বোন শারমিন আক্তারও উপস্থিত ছিলেন। শারমিন আক্তার বলেন, ‘ভাইয়া আমাদের প্রতি খুবই যত্নবান ছিলেন। তিনি নাই, তাই এবার দুই সন্তানকে নিয়ে মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে চলে এসেছি। ঈদের আনন্দ আর হবে না। মা এবং অসুস্থ বাবাকে সান্ত্বনা দিতে এসেছি।’

এ সময় ছেলের কথা মনে করে হাহাকার করছিলেন মোশারফ হোসেন সরকার। তিনি বলেন, ‘আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। ছেলেটা আমার কাছে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের একটি মোটরসাইকেল কেনার বায়না ধরেছিল। আমি রাজি ছিলাম। কিন্তু আর দেওয়া হলো না। আমার ছেলে সাংবাদিকতার জন্য জীবন দিয়েছে। ও ভালো সাংবাদিক হতে চেয়েছিল। আহারে বাজান আমার! আমি কারে নিয়ে ঈদ করব?’

থানা–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহিউদ্দিন নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলার পর ১৫ এপ্রিল ভোরে বুড়িচং উপজেলার বিনন্দিয়ারচর গ্রামের মো. ফরহাদ মৃধা ওরফে মনির হোসেন (৩৮), কংসনগর গ্রামের মো. পলাশ মিয়া (৩৪), নুরু মিয়া (৩২) ও সুজন খানকে (২৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিনই এজাহারভুক্ত দুই আসামি মনির ও পলাশের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। কুমিল্লার আমলি আদালত-২–এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বেগম শারমিন পরে রিমান্ডের আবেদনের শুনানি করবেন বলে জানান। একই সঙ্গে চার আসামিকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ১৮ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য ছিল।

Also Read: সাংবাদিক মহিউদ্দিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি রাজু নিহত

পরে আদালতের বিচারক আরও নথি নিয়ে ২০ এপ্রিল আদালতে শুনানিতে উপস্থিত থাকার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এদিন দুই আসামি ফরহাদ মৃধা ও পলাশ মিয়ার দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।

২৩ এপ্রিল কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাঁদের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য বুড়িচং থানায় আনা হয়। দুই দিন রিমান্ডে নেওয়ার পর তাঁদের আবার কারাগারে পাঠানো হয়। ১৬ এপ্রিল রাত ২টায় হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. রাজু র‍্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান।

Also Read: সাংবাদিক মহিউদ্দিনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা, আটক ৪

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বুড়িচং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শরীফুর রহমান বলেন, ‘সাংবাদিক মহিউদ্দিন হত্যা মামলার দুই আসামি রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। এগুলো সন্নিবেশ করা হয়েছে। আমরা আরও কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। মামলার তদন্তের স্বার্থে এখন আর কিছু বলা যাচ্ছে না।’