ভারতে হত্যা করে লাশ ফেলা হয় বাংলাদেশে

ভারত আর বাংলাদেশের গ্রামগুলো আলাদা করা নেই। অনায়াসে হায়দ্রাবাদ গ্রাম দিয়ে ভারতের নগর গ্রামে ঢুকতে পারেন যে কেউ।

লাশ
প্রতীকী ছবি

কুমিল্লার সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকারকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বক্সনগর এলাকার নগর গ্রামে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ ভারতীয় সীমান্তের শূন্যরেখার পশ্চিম পাশের জমিতে বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার রাজাপুর ইউনিয়নের হায়দ্রাবাদ গ্রামে লাশ ফেলে রাখা হয়।

সরেজমিনে ৬০ বিজিবির আওতাধীন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার শংকুচাইল বিওপির (বর্ডার অপারেশন পোস্ট) সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পিলার নম্বর ২০৬৩-৬ এস–এর পূর্ব দিকে ভারতের নগর গ্রাম। পশ্চিমে বাংলাদেশের হায়দ্রাবাদ গ্রাম। উত্তরে পুকুর ও বাগান। দক্ষিণে ফসলি জমি। এর ফাঁকে ফাঁকে বসতভিটা।

স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষ্য অনুযায়ী, গত বুধবার সীমান্ত পিলারের ২ থেকে ৩ গজ অদূরে সাংবাদিক মহিউদ্দিনের লাশ ফেলা হয়। খবর পেয়ে বিজিবির সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে মহিউদ্দিনকে উদ্ধার করেন। এ সময় হায়দ্রাবাদের লাগোয়া পাচোঁড়া গ্রামের দুই যুবক তাঁকে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। বিজিবি মহিউদ্দিনকে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে সরিয়ে আনার কিছুক্ষণের মধ্যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সদস্য ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা এসে জানতে পারেন লাশটি বাংলাদেশ সীমান্তে পড়ে ছিল। পরে তাঁরা চলে যান।

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও সীমান্তের এই গ্রামগুলোর কিছু মানুষ মাদক কারবারি, চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখন সীমান্ত দিয়ে কাপড়, থ্রি–পিস ও চিনির বস্তা আগের মতো তেমন আসে না। তবে ফেনসিডিলের প্রবেশ বন্ধ হয়নি। সীমান্তের একেকটি বাড়ির কারবারিরা ফেনসিডিল মজুত রাখেন। প্রতিদিন বিকেলে ওই ফেনসিডিল সেবনে শত শত তরুণ-যুবক সেখানে যান। এ ক্ষেত্রে বিজিবি ও পুলিশ প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হায়দ্রাবাদ গ্রামের তিন ব্যক্তি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই এলাকা দিয়ে ফেনসিডিল সেবন করতে মোটরসাইকেলে করে তরুণেরা আসেন। বুধবার রাতে খুন হওয়া মহিউদ্দিনও মোটরসাইকেলে করে সেখানে এসেছিলেন।

সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা চাকরিজীবী আলাউদ্দিন বলেন, এখানে ভারত আর বাংলাদেশের গ্রামগুলো আলাদা করা নেই। আন্তর্জাতিক সীমারেখা কাঁটাতারের বেড়া আরও ১৫০ গজ দূরে, পূর্ব দিকে। এ অবস্থায় অনায়াসে হায়দ্রাবাদ গ্রাম দিয়ে ভারতের নগর গ্রামে ঢুকতে পারেন যে কেউ।

বিজিবির শংকুচাইল বিওপির প্রধান ও নায়েব সুবেদার কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের একেকটি বিওপির আওতাধীন এলাকা চার থেকে সাত কিলোমিটারের মধ্যে। একটি বিওপিতে ২০ থেকে ২২ জন লোক থাকেন। টহলে ছিল বলেই তাত্ক্ষণিক বিজিবি মহিউদ্দিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাতে পেরেছে। এখান দিয়ে কোনো ধরনের ভারতীয় মালামাল ঢোকে না। তবে কেউ যদি ফসলি জমি দিয়ে পালিয়ে ভারতে যান, সে ক্ষেত্রে আমাদের কী করার আছে? এখন সীমান্তে সাংবাদিক ও পুলিশ মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। সীমান্ত এলাকার লোকজনেরও মোটরসাইকেল আছে। আমরা কাকে ধরব?’

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘সীমান্তে মাদক ঠেকাতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে। মোটরসাইকেলে যাঁরা সীমান্তবর্তী এলাকায় যাচ্ছেন, তাঁরা কী কাজে যাচ্ছেন, কাদের কাছে যাচ্ছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রিমান্ডের শুনানি পেছাল: সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামির রিমান্ডের আবেদনের শুনানির তারিখ পিছিয়েছে। কাল বুধবার রিমান্ডের আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত এই মামলার প্রয়োজনীয় সব নথি আদালতে উপস্থাপনের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বুড়িচং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শরীফুর রহমান গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সিপিবির সমবেদনা: মহিউদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল। গতকাল দুপুরে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অলুয়া গ্রামে যান সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ আল ক্বাফি রতনের নেতৃত্বে ওই ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল।