Thank you for trying Sticky AMP!!

‘দাদারে বাঘে খাইছে, এবার বাবাকে খাইল’

বাঘের থাবায় স্বামী হারানোর পর সন্তান কোলে নিয়ে মুর্শিদা খাতুনের আহাজারি

মধু সংগ্রহে গিয়ে আট বছর আগে বাঘের থাবায় প্রাণ যায় রেজাউল করিমের বাবা নূর ইসলাম সরদারের। এরপর থেকেই মেয়ে রিক্তা খাতুন চাইতেন না রেজাউল মধু সংগ্রহে যাক। কাঁদতে কাঁদতে রিক্তা খাতুন বলছিলেন, ‘কতবার কইছি বাবা বাদায় (বন) যেও না। বাবা শুনত না। বলত, “বাদায় আমাগো জীবন বাঁধা।” এখন আমাগো কী হবে।’

রিক্তার দাদার বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন-সংলগ্ন দ্বীপ এলাকা বলে পরিচিত গাবুরা ইউনিয়নের চকবারা গ্রামে। বাবা রেজাউল জমি কিনে বাড়ি করেছেন বুড়িগোয়ালিনী গ্রামে। মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার পশ্চিম সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের গোড়ার খাল এলাকায় বাঘের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন রেজাউল।

আট বছর আগে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে সুন্দরবনের একই এলাকায় রেজাউলের বাবা নূর ইসলাম সরদারও বাঘের হামলায় প্রাণ হারান।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বলেন, রেজাউলের মরদেহ নিয়ে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে লোকালয়ে ফেরার পর চকবারা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ মণ্ডল জানান, বেলা তিনটায় চকবারা গ্রামের তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বিকেল ৪টার দিকে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

বাবার পর ছেলের এমন করুণ মৃত্যুতে পুরো পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহত রেজাউলের মেয়ে আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘দাদাকে বাঘে খাইছে। এবার বাবাকে খাইল। আমাগে কপালই মন্দ। দাদাকে বাঘে খায়ার পর বাবা কত কষ্ট কুরে খাইয়ে না খাইয়ে সোজা হুয়ে দাঁড়াতি চেষ্টা করছিল। সব শেষ হুয়ে গেল।’

রেজাউল করিম

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রবীণ ইয়ার আলী জানান, রেজাউলসহ তাঁরা ৯ জন মৌয়াল মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে ৮ মে পাস (অনুমতি) নিয়ে সুন্দরবনে যান। তাঁরা মধু সংগ্রহ করতে করতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোড়ারখাল এলাকায় পৌঁছে সেখানে রাতযাপন করেন। ঠিক করেন ঈদের দিন শুক্রবার মধু কাটতে বনে নামবেন না। সকালে নৌকায় ঈদের নামাজ পড়ে পায়েস রান্না করে সবাই খেয়েছেন। দুপুরে খাওয়ার পর সবাই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

সন্ধ্যার আগে তাঁদের সঙ্গী জিয়াদ আলী ও রেজাউল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে নৌকা থেকে নেমে বনে যান। এরপর জিয়াদ আলী নৌকায় ফিরে এলেও হঠাৎ করে সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগার হামলে পড়ে রেজাউলের ওপর। মুহূর্তে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। তাঁরাও সঙ্গে সঙ্গে লাঠি ও বইঠা নিয়ে বাঘের ওপর হামলা করেন। একপর্যায়ে বাঘ তাঁকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। তবে ততক্ষণে তিনি মারা যান।

রেজাউলের স্ত্রী মুর্শিদা খাতুন বলেন, তাঁর শ্বশুরকে বাঘে খেয়েছে। আবার আট বছরের মাথায় তাঁর স্বামীকে বাঘে খেল। তাঁদের নিয়তিই এমন। এখন তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তাঁর বাকি জীবন কীভাবে কাটবে, তা নিয়ে তিনি চিন্তিত। তিনি সরকারের কাছে সহযোগিতা প্রার্থনা করেন।

শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউল হক জানান, বাঘের হাতে নিহত রেজাউলের পরিবারকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হবে। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত সহযোগিতাও পাবেন।

Also Read: বাবার ৮ বছর পর বাঘের থাবায় প্রাণ গেল ছেলেরও