বাউকাঠি গ্রাম যেন শোকের সাগর
নবজাতকের লাশ নিয়ে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ঝালকাঠি সদর উপজেলার একই পরিবারের চারজনের লাশ বৃহস্পতিবার দাফন করা হয়েছে। এ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসক মেজর শিউলি বেগমের (৩০) লাশ পটুয়াখালী শেখ হাসিনা সেনানিবাসের তত্ত্বাবধানে বরিশালে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে ঝালকাঠির বাউকাঠিতে দাফন করা হবে।
এক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। যার ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়। সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার রাত ৯টার দিকে বাড়িতে লাশ এসে পৌঁছানোমাত্র স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। একজন আর একজনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। গ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়তেই নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দুর্ঘটনায় নিহত চারজন ও নবজাতকের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। জানাজায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের জমায়েত হয়। দাফনের সময়ও এলাকার অনেক মানুষকে কান্না করতে দেখা যায়।
নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠি জেলার বাউকাঠি গ্রামের সেরাজুল রাঢ়ির ছেলে আরিফ হোসেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাঁর তিন দিনের নবজাতক মেয়ে তামান্নার লাশ নিয়ে ঢাকার উত্তরার শিন–শিন জাপান হাসপাতাল থেকে গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির উদ্দেশে বুধবার সকালে অ্যাম্বুলেন্সে রওনা হন। পথে তাঁরা দুর্ঘটনার শিকার হন। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা আরিফ হোসেন (৩৫), তাঁর ছোট ভাই তারেক হোসেন (২৫), মা কহিনুর বেগম (৬৫), ছোট বোন মেজর শিউলি বেগম (৩০), শ্যালক নজরুল ইসলাম (৩৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় নিহত অ্যাম্বুলেন্সচালক আলমগীরের বাড়ি কুমিল্লায়।
নিহত আরিফের মামাতো ভাই আনিচুর রহমান জানান, বিয়ের ৭ বছর পরে ঢাকার উত্তরার একটি হাসপাতালে আরিফের স্ত্রী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। অসুস্থ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার কন্যাশিশুটি মারা যায়। খবর পেয়ে ঝালকাঠি থেকে লাশ আনতে ঢাকা যান আরিফের মা কহিনুর বেগম। অন্যরা ঢাকাতেই থাকতেন। বুধবার সকালে তাঁরা একটি অ্যাম্বুলেন্সে শিশুটির লাশ নিয়ে ঝালকাঠি বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসক মেজর শিউলি বেগম। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী গ্রামে এলে অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের সংঘর্ষে তাঁরা সবাই ঘটনাস্থলে মারা যান। আরিফের স্ত্রী এখনো উত্তরার ওই হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
বাউকাঠি গ্রামের বাসিন্দারা জানান, নিহত আরিফের বাবা সেরাজুল রাঢ়ি বাউকাঠিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় অবাদান রেখেছেন। এই পরিবারের উদ্যোগে গ্রামে অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও স্থাপিত হয়েছে। তাঁরা এলাকার বনেদি পরিবার হিসেবে পরিচিত। এক দুর্ঘটনায় পরিবারটি একেবারে শেষ হয়ে গেল।
নবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান আকন্দ বলেন, পরিবারের ৪ জনের জানাজা শেষে বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। মেজর শিউলি বেগমের লাশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিকেলে দাফন করা হবে। সাংসদ আমির হোসেন আমু ও এলাকাবাসীর আয়োজনে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে পাঁচটি মসজিদে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হবে।