Thank you for trying Sticky AMP!!

বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি, আটক ৮

নীলফামারী জেলার মানচিত্র

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনী সহিংসতায় বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির সদস্যরা আজ সোমবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটজনকে আটক করেছে পুলিশ। বিজিবির নিহত ল্যান্স নায়েক রুবেল হোসেন মণ্ডলের (৩৭) ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলমান আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গতকাল রোববার ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনায় দায়িত্বরত বিজিবি সদস্য রুবেল হোসেন মণ্ডল (৩৭) নিহত হন। তিনি নীলফামারী ৫৬ বিজিবির সদস্য। তাঁর বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, রংপুর বিজিবির রিজিওনাল কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুবুর রহমান খান, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মো. ওয়ালিদ হোসেন ও নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মির্জা মুরাদ হাসান বেগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক যুগ্ম সচিব মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি, আমরা নিজেরা জানার চেষ্টা করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।’

হামলাকারীরা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। কর্তব্যরত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ নির্বাচনী কাজে নিয়েজিত অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন আহত হন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও নির্বাচন–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ ও গণনা শেষে ফল ঘোষণা করা হয়। ওই কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. জোনাব আলী বিজয়ী হন। এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন লাঙ্গল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মারুফ হোসেনের সমর্থকেরা। তাঁরা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত লোকজন ব্যালটসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে উপজেলা সদরে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে আসার সময় লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। এ হামলায় নিহত হন বিজিবি সদস্য রুবেল হোসেন। এ সময় পুলিশের গাড়ি ও ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালায় বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। আক্রমণ থেকে রক্ষায় কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরে রাত ১১টার দিকে পুলিশ এসে নিহত বিজিবি সদস্যের লাশ উদ্ধার করে।

ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ললিত চন্দ্র রায় বলেন, ফল ঘোষণার পর লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মারুফ হোসেন লোকজন নিয়ে এসে ওই কেন্দ্রে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণার দাবি জানান। ওই দাবি উপেক্ষা করায় উত্তেজিত লোকজন নির্বাচনী সরঞ্জাম নিতে বাধা দেয়। এ সময় আক্রমণ চালাতে শুরু করলে তিনি নিজে, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কয়েকজন পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্য আহত হন। নিহত হন বিজিবি সদস্য রুবেল হোসেন। কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে কয়েকটি গুলি ছোড়েন।

নীলফামারী স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আবদুর রহমান বলেন, হামলায় বিজিবির ল্যান্স নায়েক রুবেল হোসেন মণ্ডল নিহত হন। এ সময় হামলাকারীরা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। কর্তব্যরত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ নির্বাচনী কাজে নিয়েজিত অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে এ বিষয়ে নীলফামারীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, নিহত বিজিবি সদস্যের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আটজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত শুরু করেছে।

‘গ্রামোত মোর জীবনোত এমন ঘটনা দ্যাখো নাই’

নির্বাচনী সহিংসতায় বিজিবি সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকে পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া গ্রামের পুরুষ মানুষেরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সোমবার দুপুরে ওই গ্রামের ৭০ বছর বয়সী ফরিদা বেগমকে একা বাড়িতে পাওয়া যায়। এ সময় তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা পলাতক। নিরাপত্তার অভাবে শিশু এবং নারী সদস্যরা অন্য গ্রামের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, ‘গ্রামোত মোর জীবনোত এমন ঘটনা দ্যাখো নাই। এমন ঘটনা ঘটিল যার জন্য হামাক বাড়ি ছাড়ি পালে থাকির নাগেছে।’

সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, কিছু কিছু বাড়িতে শিশু, বয়স্ক ও মধ্যবয়সী নারীরা অবস্থান করছেন। বেশিরভাগ বাড়ি জনশূন্য।

একই গ্রামের জাহানারা বেগম (২৮) বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটিল গ্রামের সোগ মাইনষি এলা আতঙ্কোত আছে। হামরা গরিব মাইনষি কারও সাত-পাঁচোত থাকি না। কিন্তু কাইলকার ঘটনার পর থাকি পালে থাকির নাগেছে। বাড়ির কামাইদার মাইনষিলা পালে থাকিলে হামরা চলিমো কেমন করি?’

আরেক নারী তহুরা বেগম (২৮) বলেন, ‘আইতের (রাতের) ঘটনার পর থাকি গ্রামের পুরুষ মাইনষিলা বাড়ি ছাড়িছে। মানুষ কয়ছে পুলিশ আসি হামাক ধরি নিগাইবে। হামরা চাই দোষী মাইনষিলার শাস্তি হোক। ওমার জন্য হামরা কেনে পালে থাকিমো।’

Also Read: নীলফামারীতে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিজিবি সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা