Thank you for trying Sticky AMP!!

আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র হাতে নেতা-কর্মীদের মহড়া। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া বাজারে

বিজয় দিবসে পাকুন্দিয়ায় আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ, বাসে আগুন

বিজয় দিবসে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় উপজেলা শহর। আহত হন অন্তত ১০ জন। একপর্যায়ে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সাংসদ নূর মোহাম্মদ ও সাবেক সাংসদ মো. সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে সাংসদ নূর মোহাম্মদ পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। পরে বিজয় শোভাযাত্রায় তিনি নেতৃত্ব দেন। শোভাযাত্রাটি পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালায় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে অভিবাদন মঞ্চে সালাম গ্রহণ ও প্যারেড পরিদর্শন করেন সাংসদ নূর মোহাম্মদ, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরী ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সারোয়ার জাহান। সেখানে অনুষ্ঠান চলাকালেই পাকুন্দিয়া পৌর সদরের প্রধান সড়ক দুই পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকেই সাংসদ নূর মোহাম্মদের অনুসারী নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাকুন্দিয়া পৌর সদরের প্রধান সড়ক নিজেদের দখলে রাখেন। উপজেলা পরিষদ ফটক, থানার সামনেসহ পৌর সদরের গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টে তাঁদের মহড়া দিতে দেখা যায়। এ পরিস্থিতিতে সদর বাজারজুড়ে আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রাখেন।

আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাকুন্দিয়া উপজেলার মরুরা এলাকায়

সকাল সোয়া নয়টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাবেক সাংসদ মো. সোহরাব উদ্দিনের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা বড়বাড়ি চৌরাস্তা হয়ে উপজেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান। তাঁদের মিছিলটি পৌর সদরের ছাত্রবন্ধু লাইব্রেরি মোড়ে পৌঁছালে বর্তমান সাংসদের সমর্থকদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। কিন্তু এর মধ্যেও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।

সাবেক সাংসদ সোহরাবের সমর্থক ও নেতা-কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে একপর্যায়ে পিছু হটতে বাধ্য হন বর্তমান সাংসদের সমর্থকেরা। এ সময় পাকুন্দিয়ায় প্রধান সড়ক কার্যত সোহরাবের সমর্থকদের দখলে চলে যায়। এরপর সকাল পৌনে ১০টার দিকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন সোহরাব উদ্দিন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মিছিল নিয়ে তিনি একই সড়ক ধরে বড়বাড়ি চৌরাস্তা মোড়ে গিয়ে সমাবেশ করেন।

সোহরাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মাহাবুবুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সামছুদ্দোহা ও মো. ফরিদ উদ্দিন, সদস্য মো. আকরাম হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।

পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া বাজারে

এদিকে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাকুন্দিয়া উপজেলার মির্জাপুর রোডে মরুরা এলাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্বৃত্তরা অনন্যা পরিবহনের বাসটি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে আগুন দেয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে বাসটির দরজা, জানালা, সিটসহ বেশির ভাগ অংশ পুড়ে যায়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জুলাই মো. সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ। এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বর্তমান সাংসদ নূর মোহাম্মদের সমর্থকেরা সোহরাব উদ্দিনের অব্যাহতি চেয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এরপরও ৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬৭ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা আওয়ামী লীগ। বিজয় দিবসে সোহরাব উদ্দিনের নেতৃত্বে বিজয় শোভাযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে পুনরায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কমিটি ঘোষণার প্রায় পাঁচ মাস পর প্রথমবারের মতো পাকুন্দিয়ায় কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন সোহরাব।

সংঘর্ষের একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা বাসে আগুন দেয়। পুলিশ দুটি টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মো. সারোয়ার জাহান , পাকুন্দিয়া থানার ওসি

এ বিষয়ে মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, শত বাধা পেরিয়ে তিনি বিজয় দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়েছেন। বিজয় দিবসে পাকুন্দিয়া আওয়ামী লীগের জন্য এটাও একটা বিজয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে বর্তমান সাংসদ নূর মোহাম্মদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি।

পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. সারোয়ার জাহান বলেন, ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে বর্তমান ও সাবেক সাংসদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা বাসে আগুন দেয়। পুলিশ দুটি টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

Also Read: পাকুন্দিয়ায় আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ, অস্ত্র নিয়ে মহড়া