পাকুন্দিয়ায় আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ, অস্ত্র নিয়ে মহড়া

দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় শর্টগান নিয়ে মহড়া দেন জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাকুন্দিয়া থানার পাশে।
তাফসিলুল আজিজ

দলীয় কোন্দলের জের ধরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্র নিয়ে উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় কয়েকটি যানবাহনও ভাঙচুর করা হয়। পাকুন্দিয়া উপজেলার অপসারণ করা চেয়ারম্যানের সমর্থক ও স্থানীয় সাংসদের অনুসারী শ্রমিক লীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও বহিষ্কৃত উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম দলীয় সমর্থকদের নিয়ে উপজেলা সদরে আসছিলেন। থানা গেট পর্যন্ত আসতেই কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের সাংসদ সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত শ্রমিক লীগের নেতা–কর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁদের ধাওয়া করেন। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। থানার পাশেই প্রায় ঘণ্টাব্যাপী পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে পুরো বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ উভয় পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সংঘর্ষে উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ের পিয়ন হাবিবুর রহমান, সোহেল মিয়া, রহমতুল্লাহসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের সময় জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ ওরফে টাওয়ার মাসুদকে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র শটগান নিয়ে এবং পাকুন্দিয়া উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি নাজমুল হক দেওয়ানকে রামদা নিয়ে থানার পাশে মহড়া দিতে দেখা যায়। সংঘর্ষের সময় একটি বাস, তিনটি মোটরসাইকেলসহ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়।

সংঘর্ষের সময় রাম–দা নিয়ে ধাওয়া দিচ্ছেন পাকুন্দিয়া উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি নাজমুল হক। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাকুন্দিয়া থানার পাশে।
প্রথম আলো

প্রসঙ্গত, গত ৬ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা-২ শাখা থেকে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলামকে অপসারণ করে পদটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সংঘর্ষের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তাঁকে অন্যায়ভাবে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। শুনানি শেষে আদালত তাঁর পক্ষে রায় দেন। তিনি রোববার উপজেলা পরিষদে যাচ্ছিলেন। এ সময় স্বাভাবিকভাবেই সমর্থকেরা তাঁর সঙ্গে ছিল। তবে প্রতিপক্ষ সাংসদের লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁদের লোকজনকে ধাওয়া দেন।

সংঘর্ষে আরেক পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ বলেন, বহিষ্কৃত উপজেলা চেয়ারম্যান অস্ত্রশস্ত্রসহ দলবল নিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করেন। রফিকুল সাংসদকে সহযোগিতা না করে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও কুৎসা রটনা করে আসছেন। আজকেও তিনি (রফিকুল) পাকুন্দিয়ায় তাঁর গুন্ডা বাহিনীসহ অস্ত্র নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন।
সাংসদ নূর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, রফিকুল ইসলাম একজন বহিষ্কৃত উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি কী কারণে দলবল নিয়ে উপজেলা পরিষদে আসছিলেন? এখানে তো তাঁর কোনো কাজ নেই। এরপরও নিজেকে জাহির করার জন্য অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছেন। সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি পারতাম বাধা দিতে, কিন্তু দেইনি। তবে হয়তো রফিকুলের লোকজন আসার পথে আমার সমর্থকদের মুখোমুখি হওয়ায় কিছুটা ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে।’
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের দ্বন্দ্বে কিছুটা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, কোনো অস্ত্র তাঁদের চোখে পড়েনি। তবে যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।