Thank you for trying Sticky AMP!!

মাটি দিয়ে প্রতিমা গড়া শেষ, রং করার আগে এখন চলছে শুকানোর কাজ ও পরিচর্যা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌর সদরের বড়বাড়ি এলাকায় একটি প্রতিমা তৈরির কারখানায়।

মলমাসের ফেরে পূজা পেছালেও প্রতিমাশিল্পীদের মাথায় হাত

মলমাসের ফেরে এবার মহালয়ার ৩৫ দিন পর কাঠি পড়তে যাচ্ছে ষষ্ঠীপূজার ঢাকে। সাধারণত মহালয়া ও মহাষষ্ঠীর মধ্যে ছয় দিনের ব্যবধান থাকে। বাঙালি হিন্দুদের মনে তাঁদের প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব ঘিরে এরই মধ্যে ঢাক গুড়গুড় আর শাঁখের ধ্বনি বাজতে শুরু করলেও করোনার আবহে এ বছর পূজার জৌলুশ ঘিরে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। পূজার বাজেট কাটছাঁটে বিপদে পড়েছেন প্রতিমা কারিগরেরা।

করোনার আবহেই এবার এল দুর্গাপূজা। পূজার আর এক মাস বাকি থাকলেও মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এবার করোনার থাবা পড়েছে পূজার বাজেট থেকে শুরু করে প্রতিমার দামে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অন্যান্য বারের তুলনায় এ বছর প্রতিমার দাম অর্ধেকের কমে নেমেছে। ফলে হতাশ প্রতিমার কারিগরেরা।

মলমাসের ফেরে এবার মহালয়ার এক মাস পর হচ্ছে দুর্গাপূজা। মহালয়া ছিল গত বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর)। সাধারণত মহালয়া ও মহাষষ্ঠীর মধ্যে ছয় দিনের ব্যবধান থাকে। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন হতেই মূলত পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ফলে মহালয়া থেকেই দুর্গাপূজার কাউন্টডাউন (ক্ষণগণনা) শুরু হয়ে যায়। এবার এই ক্ষণগণনা চালিয়ে যেতে হচ্ছে এক মাস। মহালয়ার ৩৫ দিন পর কাঠি পড়বে ষষ্ঠীপূজার ঢাকে।

মলমাসে কোনো শুভকাজ, পূজা বা উৎসব নিষিদ্ধ। ফলে দুর্গাপূজাও এ মাসকে এড়িয়ে চলে গেছে কার্তিক মাসে। প্রতি ১৯ বছর অন্তর আশ্বিন মাস মল-মাস হয়। সেই হিসাবে ২০০১ সালে আশ্বিন ছিল মলমাস। এরও আগে ১৯৮২ সালে। হিসাব মতো, আগামী ২০৩৯ সালের আশ্বিন মাস আবার মলমাস হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

হিন্দুধর্মে পূজা হয় সাধারণত তিথি-নক্ষত্র মেনে। সেই তিথি-নক্ষত্রের হিসাব রাখে যে পঞ্জিকা, সেখানে আশ্বিন মাসকে এবার ‘মলমাস’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক মাসে দুটো অমাবস্যা হলে তাকে মলমাস বলে। এই মলমাস আসে দুটো ভিন্ন পদ্ধতির বছর গণনার হিসাব সমন্বয় করার প্রয়োজনে। সরলভাবে বললে, সৌরবছর ৩৬৫ দিনে এবং চান্দ্রবছর ৩৫৫ দিনে গণনা করে ১২ মাসে এক বছর। চান্দ্রমাস অনুযায়ী হিন্দুধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। তাই সৌর ও চান্দ্রবছরের সমন্বয়ের জন্য প্রতি তিন বছর পরপর যে এক মাস (৩০ দিন) অতিরিক্ত হয়, সেটিই মলমাস বা অধিমাস।

এবারের মূল পূজা হবে ২২ থেকে ২৬ অক্টোবর। জাঁকজমকবিহীন পূজা অনুষ্ঠানের আয়োজন ও আগত ভক্তদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য পূজামণ্ডপ কমিটিগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
হারাধন চৌধুরী, আহ্বায়ক, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ সীতাকুণ্ড উপজেলা শাখা

মলমাসে কোনো শুভকাজ, পূজা বা উৎসব নিষিদ্ধ। ফলে দুর্গাপূজাও এ মাসকে এড়িয়ে চলে গেছে কার্তিক মাসে। প্রতি ১৯ বছর অন্তর আশ্বিন মাস মল-মাস হয়। সেই হিসাবে ২০০১ সালে আশ্বিন ছিল মলমাস। এরও আগে ১৯৮২ সালে। প্রতিবারই দুর্গাপূজা হয়েছিল কার্তিক মাসে। হিসাব মতো, আগামী ২০৩৯ সালের আশ্বিন মাস আবার মলমাস হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

যাহোক, এবার মূল পূজা শুরু হচ্ছে ২২ অক্টোবর। ওই দিনই বেজে উঠবে বোধনের ঢাক। ওই দিন কৈলাস ছেড়ে বাপের বাড়ি পা রাখবেন উমা। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাঙালি হিন্দুদের দুর্গাপূজার শুভারম্ভ। ওই দিন ষষ্ঠীপূজা থেকে ২৬ অক্টোবর বিজয় দশমীর মাধ্যমে সমাপ্ত হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।

পূজা এলেই মণ্ডপগুলো একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামে, কার প্রতিমা কত সুন্দর। কার মণ্ডপ কত বড় বা কত নতুনত্ব বহন করে। প্রতিমার গড়নে কোথাও ডাকের সাজ, তো কোথাও আবার সাবেকিয়ানা, আবার কোথাও থিমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিমার সাজে রাখা হয় একেবারে নতুনত্বের চমক। এর পেছনে সবটাই কৃতিত্ব প্রতিমার কারিগরদের মেধা আর সৃষ্টিশীলতার। এর জন্য আয়োজকদের বাজেটও রাখতে হয় ভালো।

গত বছর যে প্রতিমা সেট বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, এ বছর তা ৬০ হাজার টাকাও বলছে না।

এ বছর সীতাকুণ্ডের প্রতিমা কারিগরেরা জানান, করোনার প্রভাবের কারণে খরচ তুলতে না পারার ভয়ে পূজামণ্ডপ কমিটি বেশি দামের প্রতিমা কিনতে চাইছে না। ছোট আকারের এক সেট প্রতিমার দাম গত বছরের অর্ধেক মূল্যে দাঁড়িয়েছে। বড় আকারের কারুকাজ করা প্রতিমার দাম এক-তৃতীয়াংশও বলছে না। এদিকে কারিগরদের বেতনও বেড়েছে। তাই এবার ব্যাপক আকারে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা তাঁদের।

সরেজমিনে সীতাকুণ্ড পৌর সদরের বড়বাড়ির কারিগর কৃষ্ণ চন্দ্র পালের কারখানায় দেখা যায়, চারজন কারিগর কাজ করছেন সেখানে। এর মধ্যে দুজন প্রতিমা রোদে শুকাতে নিয়ে যাচ্ছেন। বাকি দুজন ভেতরে থাকা প্রতিমাগুলোর পরিচর্যা করছেন।
কারিগর কৃষ্ণ চন্দ্র পাল বলেন, তিনি ৪৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করছেন। এ বছর করোনার কারণে মণ্ডপে না গিয়ে কারখানায় প্রতিমা তৈরি করছেন। এবার প্রতিমার চাহিদাও কম।

চট্টগ্রাম জেলা কারিগর অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, শুধু সীতাকুণ্ড উপজেলায় প্রতিমার কারখানা রয়েছে ৯টি। এর মধ্যে পৌরসভায় ৩টি। বাকি ৬টি কারখানা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে।

চট্টগ্রাম জলা কারিগর অ্যাসোসিয়েশনের সীতাকুণ্ড-মিরসরাই এলাকার প্রতিনিধি আদিত্য আচার্য প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এবার ২৬টি প্রতিমা তৈরির ফরমাশ পেয়েছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার ও সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা মূল্যের প্রতিমা রয়েছে। গত বছর যে প্রতিমা সেট বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, এ বছর তা ৬০ হাজার টাকাও বলছে না। তিনি আরও বলেন, দুর্গাপূজার মৌসুম মূলত তিন মাস। এ সময় কারিগর ও সহকারী মিলে তাঁরা ১০ জন কাজ করেন কারখানায়। মূল কারিগরের বেতন ৩০ হাজার টাকা করে। সহকারীদের বেতন ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সীতাকুণ্ড উপজেলা শাখার আহ্বায়ক ও সীতাকুণ্ড পৌরসভার প্যানেল মেয়র হারাধন চৌধুরী বলেন, এবারের মূল পূজা হবে ২২ থেকে ২৬ অক্টোবর। করোনাকাল হলেও গতবারের চেয়ে একটি পূজামণ্ডপ বেড়ে এবার ৬২টিতে দাঁড়িয়েছে। জাঁকজমকবিহীন পূজা অনুষ্ঠানের আয়োজন ও আগত ভক্তদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য পূজামণ্ডপ কমিটিগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Also Read: পূজার ক্ষণ ঘনিয়ে এলেও অনিশ্চয়তায় প্রতিমাশিল্পীরা