পূজার ক্ষণ ঘনিয়ে এলেও অনিশ্চয়তায় প্রতিমাশিল্পীরা

প্রতিমা তৈরীর কাজ করছেন কারিগরেরা। আজ মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরতলির শাপলাবাগেপ্রথম আলো

দুর্গাপূজার আর দেড় মাসও বাকি নেই। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মনে তাদের প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব ঘিরে এরই মধ্যে ঢাক গুড়গুড় আর শাঁখের ধ্বনি বাজতে শুরু করলেও করোনার আবহে এ বছর পূজার জৌলুশ ঘিরে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। করোনার প্রকোপে অর্থনীতিতে মন্দার কালো মেঘ ঘনিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস আর স্বাস্থ্য বিধিনিষেধের কথা মাথায় রেখে পূজার বড় আয়োজন দিকে যাচ্ছেন না পাড়া-মহল্লার আয়োজকেরা। এ কারণে কাটছাঁট চলছে পূজার প্রতিমার বাজেটেও। আর এতে বিপদে পড়েছেন প্রতিমা নির্মাণের কারিগরেরা।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রতিমা নির্মাণের কাজে হনু পাল একজন প্রবীণ মৃৎশিল্পী। দুর্গাপূজা এলেই বিভিন্ন জায়গায় প্রতিমা নির্মাণের ডাক পড়ে এই পঞ্চাশোর্ধ্ব শিল্পীর। প্রতিবছরই বিশাল বিশাল প্রতিমা তৈরির কাজ পান তিনি। দুর্গাপূজার প্রতিমা তৈরির টাকা দিয়েই কর্মচারী ও নিজের পরিবারের সারা বছরের খরচ চালিয়ে আসছেন তিনি। তবে এ বছর তাঁর কাছে একটু ভিন্নভাবেই এল দুর্গাপূজার কাজ। প্রতিবছর যেখানে লাখ টাকা মূল্যে প্রতিমার কাজ পান, সেখানে এ বছর ১০-১৫ হাজার টাকার ওপরের প্রতিমা বানানোরই অর্ডার আসছে না।

এই পরিস্থিতির সম্মুখীন শুধু হনু পালই নন, এবার প্রতিমা তৈরির কারিগরের সবাই এ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। পূজা ঘনিয়ে এলেও বেশি সংখ্যায় বা তেমন বড় অঙ্কের প্রতিমা তৈরির কাজই পাচ্ছেন না তাঁরা।

গতবার এই সময়ে এসে প্রচুর কাজ পেয়েছিলাম। বিভিন্ন মণ্ডপে একসঙ্গে প্রতিমা নির্মাণের কাজ চলছিল। গতবার ৩০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা মূল্যের প্রতিমা তৈরি করে দিয়েছি। এ বছর করোনার কারণে আয়োজকেরা কোনো রকমে পূজাটা সারার কথা ভাবছেন। বেশির ভাগ পূজারি এসে ১০-১৫ হাজার টাকার প্রতিমার খোঁজ করছেন।
হনু পাল, প্রবীণ প্রতিমাশিল্পী

আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরতলির শাপলাবাগ এলাকায় হনু পালের প্রতিমা তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, হনু পাল ও তাঁর তিন সহযোগী মিলে ছোট ছোট কয়েকটি প্রতিমার কাজ করছেন। প্রতিমার মুখমণ্ডল, অবয়ব ও বাঁশের ফ্রেম তৈরি করে আলাদা আলাদা করে রাখছেন। অর্ডার পেলেই এসব জোড়া দিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিমা তৈরি করবেন তাঁরা।

প্রতিমা তৈরীর কাজ করছেন মৃৎশিল্পী। আজ মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরতলির শাপলাবাগে।
প্রথম আলো

হনু পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতবার এই সময়ে এসে প্রচুর কাজ পেয়েছিলাম। বিভিন্ন মণ্ডপে একসঙ্গে প্রতিমা নির্মাণের কাজ চলছিল। গতবার ৩০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা মূল্যের প্রতিমা তৈরি করে দিয়েছি। এ বছর করোনার কারণে আয়োজকেরা কোনো রকমে পূজাটা সারার কথা ভাবছেন। বেশির ভাগ পূজারি এসে ১০-১৫ হাজার টাকার প্রতিমার খোঁজ করছেন। আমরা এ বছর কাজও আগের মতো পাচ্ছি না। যে দুই-চারটা কাজের অর্ডার নিয়েছি, সেগুলো অনেক কম মূল্যের। কারখানার খরচ, কর্মচারীদের বেতন দিয়ে আমাদের কিছুই থাকবে না। এখন সারা বছর কীভাবে যাবে, সে চিন্তায় রয়েছি।’

আরেক প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ বলেন, ‘খড়, বাঁশ, মাটি সবকিছুরই দাম বেড়েছে। কর্মচারীদের বেতনও বেড়েছে। কিন্তু আমাদের আয় বাড়েনি। এবার করোনার কারণে আমাদের আয় অনেক কমে যাচ্ছে। গত বছর এক জায়গায় কাজ করে যত লাভ হয়েছে, এ বছর ১০ জায়গায় কাজ করেও সে পরিমাণ লাভ হবে না। সরকার যদি আমাদের মতো প্রতিমাশিল্পীদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা না করে, তাহলে আমরা বড় বিপদে পড়ে যাব।’

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুশীল শীল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের পক্ষ থেকে আমাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবার সীমিত আকারে সবকিছু করে পূজা-অর্চনা করা হবে। বিশাল বিশাল প্রতিমা, মণ্ডপ, সাউন্ড, লাইটিং ইত্যাদি হবে না। ছোট পরিসরে মূল পূজার কাজটি শুধু করা হবে।’

এ বছর পূজার সংখ্যায় হেরফের হচ্ছে কি না, প্রশ্নে সুশীল শীল জানান, গতবার শ্রীমঙ্গলে ১৬৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ বছর করোনার কারণে হয়তো দু-একটা মণ্ডপে পূজা কমতে পারে।