Thank you for trying Sticky AMP!!

মায়ের তালাকের প্রতিশোধ নিতেই সৎছেলেকে হত্যা করেন ফজলুল: পুলিশ

শিশু সামিউল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার সৎ বাবা ফজলুল হক ও তাঁর সহযোগী অনিতা রানী। আজ বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে

আগের পক্ষের শিশুসন্তান সামিউল ইসলাম ওরফে সাব্বিরকে নিয়ে ফজলুল হকের (৩৬) সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে করেন মা সালেহা বেগম। কিন্তু দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই সন্তান নিয়ে বিরোধ বাধে সৎবাবা ফজলুল হকের সঙ্গে। এ নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ফজলুল হককে তালাক দেন সালেহা। স্ত্রীর ওপর প্রতিশোধ নিতে সামিউলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ফজলুল হক। মায়ের কথা বলে তিনি মাদ্রাসা থেকে সামিউলকে নির্জন স্থানে নিয়ে যান। সেখানে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন সামিউলকে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে মুঠোফোনে মায়ের পরিচয় দিয়ে সামিউল হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেন অনিতা রানী (৩৫) নামের এক নারী।

আজ বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মানিকদীপা গ্রামের লাউখেত থেকে লাশ উদ্ধার হওয়া মাদ্রাসাশিক্ষার্থী সামিউল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি করে পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্ত্তী এসব তথ্য তুলে ধরেন।

Also Read: বগুড়ায় লাউখেত থেকে আট বছরের শিশুর লাশ উদ্ধার

পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফজলুল হক ও অনিতা রানীকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনিতা রানী হত্যাকাণ্ডে সহায়তার কথা স্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তার ফজলুল হক শাজাহানপুর উপজেলার খরনা ইউনিয়নের কলমাচাপড় ও অনিতা রানী গোহাইল ইউনিয়নের চেলো গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা উভয়ই দিনমজুর।

সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর কাগজিপাড়া গ্রামের আবু তালেবের মেয়ে সালেহা বেগমের (২৮) প্রায় ১০ বছর আগে মাঝিড়াপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের (৩০) সঙ্গে বিয়ে হয়। তাঁদের সংসারে সামিউলের জন্ম হয়। সামিউলকে গত বছর সাজাপুর পূর্বপাড়া তালিমুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়। জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সালেহার বনিবনা না হওয়ায় দেড় মাস আগে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর ছেলে সামিউলকে সঙ্গে নিয়ে সালেহা দিনমজুর ফজলুল হককে বিয়ে করেন।

পুলিশ সুপার বলেন, বিয়ের পর শিশুসন্তানকে নিয়ে স্বামী ফজলুল হকের বাড়িতে ওঠেন সালেহা। কিন্তু সৎছেলে সামিউলকে কোনোভাবেই মেনে নিতে রাজি ছিলেন না ফজলুল হক। শিশুটিকে সহ্যও করতে পারতেন না। ফজলুল শিশুটিকে নির্যাতনও করতেন। সন্তানের প্রতি এমন আচরণের কারণে ১১ মে ফজলুল হককে তালাক দেন সালেহা। ১৪ মে সামিউলকে মাদ্রাসায় রেখে আসেন তিনি।

প্রেস ব্রিফিংয়ে সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, স্ত্রীর তালাক দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে সৎছেলে সামিউলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ফজলুল হক। পরিকল্পনা অনুসারে গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফজলুল হক মাদ্রাসায় গিয়ে সামিউলকে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মায়ের অনুমতি ছাড়া সামিউলকে অন্য কারও সঙ্গে দিতে রাজি ছিলেন না। পরিকল্পনা অনুযায়ী, অনিতা রানীকে মা সাজিয়ে মুঠোফোনে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে ধরিয়ে দেন ফজলুল হক। অনিতা নিজেকে শিশুটির মা পরিচয় দিয়ে ফজলুল হকের সঙ্গে শিশুটিকে দিতে বলেন। সামিউলকে বাড়ি নেওয়ার কথা বলে মানিকদীপা উত্তরপাড়া গ্রামের একটি লাউখেতে নিয়ে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন ফজলুল হক।

সামিউলের মা সালেহা বেগমের দাবি, ‘তালাক দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে ফজলুল আমার নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করেছে।’

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মা সালেহা বেগম বাদী হয়ে তাঁর তালাকপ্রাপ্ত স্বামী ফজলুল হক ও অনিতা রানীকে আসামি করে শাজাহানপুর থানায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুই আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অনিতা রানী হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন। মূল হোতা ফজলুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।