Thank you for trying Sticky AMP!!

মুক্তিযোদ্ধার ভাতাভোগী গ্রেপ্তারের পর হতবাক এলাকার মানুষ

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার তারা মিয়া

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. তারা মিয়া (৭০) গ্রেপ্তার হয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়। অথচ তিনি এলাকায় পরিচয় গড়ে তুলেছিলেন ‘যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে। সেই পরিচয়ে সরকারের ভাতাও পেতেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি কীভাবে এত দিন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে পারলেন, তা নিয়ে এলাকার মানুষ হতবাক।

আঠারবাড়ী ইউনিয়নের ইটাউলিয়া গ্রামের মো. মিলন মিয়া বলেন, ‘তারা মিয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে একটি মূল্যবান হুইলচেয়ারে বসে চলাফেরা করতেন। অসুখ-বিসুখ হলে তাঁর ফোনে ডাক্তার ছুটে আসতেন। সবই যে ফাঁপা বুলি ছিল, তা গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর বুঝতে পেরেছি।’

তারা মিয়া রায়েরবাজারের যে বাসায় বসবাস করেন, সেই গলির মাঝখানে হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী মো. মাহবুবের (৬০) দোকান। মাহবুব বলেন, তিনি তারা মিয়াকে এই গলি দিয়ে চলাফেরা করতে দেখেছেন। পাড়ার লোকজনের মতো তিনিও তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা বলে জানতেন। কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর ভুল ভাঙে।

বাসার সামনে একটি দোকানের মালিক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা তো এত দিন জেনে এসেছি তারা মিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর তাঁর সম্পর্কে যা জানতে পারছি, তা লোমহর্ষক।’

আজ শুক্রবার আঠারবাড়ী ইউনিয়নের রায়েরবাজারে সরেজমিন ঘুরে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। এলাকার লোকজনের ভাষ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তি কী করে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। যাঁরা তাঁকে এ ধরনের প্রতারণামূলক কাজে সহায়তা করেছেন, এলাকাবাসী তাঁদের নাম-পরিচয় জানতে চান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা মনে করে তিনি তারা মিয়াকে অনেকবার সালাম দিয়েছেন। মনে মনে শ্রদ্ধাও করেছেন। এখন আমার সালাম ও শ্রদ্ধা ফেরত পাব কী করে।’

আঠারবাড়ী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জন ঘোষ বলেন, পাশের গৌরীপুর উপজেলার ভাতাভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা মিয়ার বাবার নাম হচ্ছে শমসের আলী। তাঁর ভারতীয় প্রামাণ্য দলিল নম্বর ৯৭৯৩ (ঈশ্বরগঞ্জ খণ্ড ২) লাল মুক্তিবার্তা নম্বর ০১১৫১১০২৪৩। আঠারবাড়ীর তারা মিয়া গৌরীপুর উপজেলার তারা মিয়ার নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া তারা মিয়ারা চার ভাই। তিন ভাই বাবার নাম হিসেবে শাহনেওয়াজ নামটি ব্যবহার করেন। কেবল তারা মিয়া শমসের আলী নামটি ব্যবহার করে থাকেন। সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের তদন্তদল এলাকায় এসে যাচাইকালে তথ্যটি পেয়েছে বলে জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জন ঘোষ।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ব্যবহার করে তারা মিয়া সরকারের কাছ থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চার কক্ষের একটি ফ্ল্যাট ও আঠারবাড়ী ইউনিয়নের রায়েরবাজারে কোটি টাকা মূল্যের ১০ শতক খাসজমি বাগিয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রতি মাসে তিনি ৩০ হাজার টাকা ভাতা পেতেন। চলাফেরা করতেন রাজার হালে।

বাড়িতে গেলে তারা মিয়ার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন দাবি করেন, তাঁর শ্বশুরের নাম শাহনেওয়াজ ও শমসের আলী দুটিই। তাঁর স্বামী একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র আছে। তাঁর স্বামী এখন বাক্‌শক্তি হারিয়েছেন বলে পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো. তাফাজ্জল হাসেন বলেন, ‘তারা মিয়াকে বঙ্গভবনে দেখেছি। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে একজন রাজাকার কী না করেছে, তা ভাবতেও অবাক লাগে।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সমন্বয়কারী মো. আবদুর রহিম মুঠোফোনে বলেন, তারা মিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে জারি করা পরোয়ানা মূলে তারা মিয়াসহ ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সাতজনকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Also Read: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মুক্তিযোদ্ধার ভাতাভোগীসহ তিনজন গ্রেপ্তার