মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মুক্তিযোদ্ধার ভাতাভোগীসহ তিনজন গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার তারা মিয়া

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ‘যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা’র ভাতাভোগী এক ব্যক্তিও আছেন। তাঁর নাম মো. তারা মিয়া। তিনি উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের ইটাউলিয়া গ্রামে মৃত শাহনেওয়াজের ছেলে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল কাদের মিয়া বলেন, ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানা তামিল করার জন্য থানা-পুলিশ আজ বৃহস্পতিবার উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের রায়েরবাজার থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় বাজারে শত শত মানুষের ভিড় জমে ওঠে।

পুলিশ জানিয়েছে, একই সময় আঠারবাড়ি এলাকা থেকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় রুস্তম আলীকেও (৮১) গ্রেপ্তার করে ঈশ্বরগঞ্জ থানার পুলিশ। তিনি উপজেলার কালিয়ান গ্রামের মেফর আলীর ছেলে।

এদিকে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান (৭২) নামের একজনকে নগরীর এবি গুহ রোড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি ঈশ্বরগঞ্জের সোহাগী বাজারের বাসিন্দা প্রয়াত হোসাইন আহম্মেদের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তারা মিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তারা মিয়ার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর ব্যাপক ক্ষোভ থাকায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর এলাকায় ফিরে এসে এলাকাবাসীর গণপিটুনির শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করলেও তাঁর একটি পা অচল হয়ে যায়।

উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জন ঘোষ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, পাশের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামে তারা মিয়া নামের আরেকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তাঁর বাবার নাম শমসের আলী। একই নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে আঠারবাড়ি ইউনিয়নের শাহনেওয়াজের ছেলে তারা মিয়া যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বনে যান। এ পরিচয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলনের পাশপাশি ও সরকার থেকে নানা সুবিধা অর্জন করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জন ঘোষ আরও জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় আঠারবাড়ি এলাকার স্কুলশিক্ষক আবদুল লতিফকে প্রকাশ্যে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তারা মিয়ার বিরুদ্ধে। পরে ওই শিক্ষকের পরিবারের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তদন্ত চলার সময় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার ওসি শাহ্ কামাল আকন্দ ও ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল কাদের মিয়া বলেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। সংবাদ পাওয়ার পরই অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে ৫৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।