Thank you for trying Sticky AMP!!

‘কম্বল কোনা গাওত দিয়্যা আরাম পানু’

কম্বল পেয়ে ৭৫ বছর বয়সী ফুলবি বেগমের চোখেমুখে হাসির ঝিলিক। এদিন প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ২০০ শীতার্ত মানুষের হাতে কম্বল তুলে দেওয়া হয়। রোববার তারাগঞ্জের ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে

জীবনের পড়ন্ত বেলায় আম্বিয়া বেগমের (৮০) কাজ করার সামর্থ্য নেই। প্রতিবেশীরাই তাঁর ভরসা। তাঁরা কিছু দিলে পেটে পড়ে। নয়তো উপোস কাটাতে হয়। পুরোনো পাতলা ছেঁড়াফাড়া শাড়ি পরে লাঠি হাতে ঠকঠক করে কাঁপছিলেন। কম্বল পেয়ে চোখেমুখে খুশির ঝিলিক।

পরম যত্নে গায়ে কম্বল জড়িয়ে আম্বিয়া বেগম ভাঙা কণ্ঠে বলেন, ‘মোর কায়ও নাই। ঠিকমতোন চলিবার পারোং না। কাঁথা-কম্বলও নাই। জারোতে জীবনটা বাহির হয়্যা যাবার নাগছিল। কম্বল কোনা গাওত দিয়্যা আরাম পানু, শান্তিতে ঘুমাইম।’

Also Read: ‘মোর জারের কষ্ট দূর করলেন বাহে’

আম্বিয়া বেগমের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার মেনানগর হাজিপাড়া গ্রামে। ৩০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে পেট চালালেও এখন আর বয়সের ভারে পারেন না। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় চলে তাঁর জীবন।

আজ রোববার সকালে ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে কম্বল নিতে এসেছিলেন তিনি। সেখানে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ২০০ শীতার্তকে কম্বল দেওয়া হয়েছে।

Also Read: হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় কম্বল পেলেন শীতার্তরা

কম্বল পেয়ে শীতার্ত মানুষের চোখেমুখে হাসির ঝিলিক। কেউ লাঠিতে ভর করে, কেউ বা হেঁটে এসেছিলেন। কম্বল পেয়ে যেন কারও চোখের কোণে আনন্দের অশ্রু।

লাঠিতে ভর দিয়ে এসেছিলেন ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ফুলবি বেগম। তাঁরও স্বামী-সন্তান নেই। ভিক্ষা করে জীবন চলে। থাকেন ভাঙাচোরা বাঁশের বেড়ার পুরোনো ঘরে। কম্বল পেয়ে ফুলবি বললেন, ‘মোর মোটা কাপড় নাই। ঘরের ভাঙা দিয়া হু হু করি বাতাস ঢুকে। ঠান্ডাতে সারা রাইত জাগি আছনু। চুলার আগুনোত গাও সেঁকি (তাপ দিয়ে) দিন-রাইত কাটাছুন। এল্যা তোমার নয়া কম্বল কোনা গাওত দিয়া ঠান্ডা থাকি বাঁচিম। দোয়া করিম।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ২০০ শীতার্ত মানুষের হাতে কম্বল তুলে দেন বন্ধুসভার সদস্যরা। রোববার তারাগঞ্জের ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে

কম্বল পেয়ে জগদীশপুর গ্রামের দিনমজুর তফেল উদ্দিনের (৭৫) মুখেও হাসির ঝিলিক। তিনি বলেন, ‘বুড়া হছি, নিত্যাও কাম করির পাই না। যেকনা কামাই করি, তাক দিয়া দুই বেলার খাবার হয় না। উপাসকাপস থাকি দিন পার করুছি। তার ওপর মরণের ঠান্ডা। কম্বল-জাম্পার কিনমো কী দিয়া? তোমরা ডাকে আনি কম্বল দিনেন। খুব উপকার হইল।’

যমুনেশ্বরী নদীঘেঁষা জয়বাংলা গ্রামের গৃহবধূ মালতী রানী কম্বল গায়ে জড়িয়ে বলেন, ‘যার আনা শীতের কাপড় নাই, তায় বুঝে কী কষ্ট। তোমার কম্বল কোনো আমার কাছোত সোনার মতো। গাওত দিয়া নদীর হিয়াল বাতাস থাকি বাঁচিম। ভগবান তোমার ভালো করুক।’

Also Read: ‘কম্বলখানা গাওত দিয়ে ক্যানক্যানা জারত থ্যাকে অ্যানা রক্ষা পামুনি’

ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে শীতবস্ত্র (কম্বল) তুলে দেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন, প্রথম আলো বন্ধুসভা তারাগঞ্জের আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম, বন্ধুসভার সদস্য আবদুর রহিম, মিহাদ সরকার, মেহেদী হাসান, মোলেমা খাতুন, জান্নাতুল ইসলাম, স্মৃতি আক্তার, নাঈম ইসলাম, খাদিজা আক্তার, রোমানা আক্তার এবং প্রথম আলোর তারাগঞ্জ প্রতিনিধি রহিদুল মিয়া।

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।

অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।