‘মোর জারের কষ্ট দূর করলেন বাহে’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও এডিসন ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা ২০০ শীতার্ত মানুষকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। শুক্রবার উপজেলার সরকারি হুজুর উদ্দিন বালিকা বিদ্যালয় মাঠেছবি: প্রথম আলো

উত্তরের হিমেল হাওয়ায় সাধারণ মানুষের জবুথবু অবস্থা। শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন দুস্থ ও অসহায় ছিন্নমূল মানুষ। এমনই একজন ৭০ বছর বয়সী আমিনা বেওয়া। কনকনে শীতে গরম কাপড়ের অভাবে তাঁর অবস্থা শোচনীয়। এমনই পরিস্থিতিতে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বৃদ্ধা আমিনার হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি কম্বল।

কম্বল পেয়ে আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে আমিনা বেওয়া প্রথম আলোকে বললেন, ‘কারোটে চাবারো (চাইতে) পাও না, জারোত (শীতে) মোর জীবনটা বেরে যায়ছোল। তোমারলার ডুশা (কম্বল) দিয়া মোর জারের কষ্ট দূর করলেন। এতে মোর শরীরটা গরম থাকবে বাহে (ছেলে)।’

এডিসন ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ও প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে আজ শুক্রবার সকালে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দুস্থ-অসহায়, প্রতিবন্ধী ও শীতার্ত মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ২০০ কম্বলের সিলিপ বিতরণ করেন প্রথম আলোর পাটগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরা।

বিকেলে উপজেলার সরকারি হুজুর উদ্দিন বালিকা বিদ্যালয় মাঠে ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে পাটগ্রাম পৌরসভার স্টেশনপাড়া, ঝাকুয়াটারি, মাসুয়াপাড়া, সোহাগপুর, ভান্ডারদহ, সাহেবডাঙ্গা পাড়া; পাটগ্রাম ইউনিয়নের জিমনাল, খানপাড়া, ধবলসুতি, রহমতপুর, মাস্টারের বাড়ি; কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের পানবাড়ি, কুচলিবাড়ি, লক্ষ্যনার্থের কামাত এবং বাউরা ইউনিয়নের স্টেশন এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তবর্তী গ্রামের ২০০ শীতার্ত নারী-পুরুষ উপস্থিত হন।

সীমান্তবর্তী গ্রাম লক্ষ্যনার্থের কামাতের বাসিন্দা বৃদ্ধ আবদুল গফুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামার (আমাদের) জমি-জায়গা নাই। মানষির জমিত ঘর করি থাকুন। খড়ের ঘর সেট আবার বর্ষার সময় পানি পড়ে। ঠান্ডার (শীত) সময় কুয়াশা আর বাতাস ঢোকে। কুয়াশা ও ঠান্ডাতে থাকিবার পারিই না। বুড়িটারও (স্ত্রী) অসুখ, চোখেও দেখে না। হামার এই সীমান্ত গ্রামতো আসি কাহোই খোঁজ নেয় না। এইবার তোমরায় ডুশা (কম্বল) খান দিলেন। এই জারোত বুড়িটার ভালো করি ঘুম পারির পাবে। এতে আমারলার খুব ভালোই হইল।’

জগতবেড় ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা বৃদ্ধা ইজাব উদ্দিন বলেন, তীব্র শীতের মধ্যে কম্বলটি পেয়ে তিনি খুবই উপকৃত হয়েছেন।

পাটগ্রাম উপজেলার ২০০ জন নারী–পুরুষকে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

কম্বল বিতরণের সময় পাটগ্রাম সরকারি জসমুদ্দিন কাজী আবদুল গণি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রথম আলো শুধু একটি পত্রিকা নয়, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি সমাজের নৈতিক দায়িত্ব পালন করে দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে প্রথম আলো। এই প্রচণ্ড শীতে শীতার্ত মানুষের হাতে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিচ্ছে। এটা ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। প্রথম আলোকে তিনি সাধুবাদ জানান।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মামুন অর রশিদ, প্রথম আলোর পাটগ্রাম প্রতিনিধি এ বি সফিউল আলম, পাটগ্রাম বন্ধুসভার সভাপতি অজিত রঞ্জন রায়, সদস্য আজিজুল হক, খলিলুর রহমান, আজাদি ইয়াসমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।

অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।