Thank you for trying Sticky AMP!!

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাঁকখালী নদীর ৩০০ একর জায়গা দখলমুক্ত

কক্সবাজারের প্রাচীন বাঁকখালী নদীর প্যারাবন দখল করে নির্মিত পাকা ঘরবাড়ি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। বুধবার বিকেলে

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীতে দ্বিতীয় দিনের অভিযানে ৪০টির বেশি পাকা বাড়িসহ ১৪৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের উচ্ছেদ অভিযান।

আগের দিন মঙ্গলবার উচ্ছেদ করা হয় ২৫৩টি অবৈধ স্থাপনা। উচ্চ আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার পৌরসভা, বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর এ অভিযান চালিয়েছে। এতে অংশ নেয় র‌্যাব, পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তর। দুই দিনের অভিযানে নদীর প্রায় ৩০০ একর জমির দখলমুক্ত হয়েছে।

আগের দিন উচ্ছেদ অভিযানের কথা জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছিল। অনেকে উচ্ছেদে নামার আগে ঘরবাড়ির মালামাল সরিয়ে রাখেন। স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় প্যারাবন উজাড় করে ৪০টির বেশি এক ও দোতলা ভবন এবং টিনশেডের পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়। জেলা প্রশাসনের চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পৃথক চারটি দল এক্সকাভেটর দিয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন অংশে গড়ে তোলা ভবনগুলো গুঁড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি ৭০-৮০ একরের মতো প্যারাবন ঘিরে রাখা টিনের বেড়া উচ্ছেদ করা হয় অভিযানে। এ সময় ঘরবাড়িতে থাকা লোকজন হইচই শুরু করেন। কেউ কেউ ঘরের মালামাল সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিল, বাঁকখালী নদীর প্যারাবন দখল করে তৈরি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে গত দুই দিন যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ করা স্থাপনাগুলোর মধ্যে ছিল একতলা, দোতলা পাকা ভবন, টিনশেডের পাকা বাড়ি, ঝুপড়ি ঘর, দোকানপাট, মৎস্য খামার ইত্যাদি। অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর।

বিকেলে নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এক্সকাভেটর দিয়ে পাকা ভবনগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর আগে ৭০-৮০ একরের মতো প্যারাবন কেটে তৈরি জায়গার শতাধিক ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হয়। বসতবাড়ির ভাড়াটে ও দখলদারের সেদিকে যেতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাধা দেন।

সামসুন্নাহার (৫০) নামের একজন গৃহবধূ বলেন, তিনি চার বছর আগে শহরের পেশকার পাড়ার জনৈক মোবারকের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকায় প্যারাবনের চার শতক জমি কেনেন নোটারির মাধ্যমে। সেখানে ছয় মাস আগে তিন লাখ টাকা খরচ করে তৈরি করেন টিনের পাকা বাড়ি। দেড় মাস ধরে সন্তান নিয়ে ওই বাড়িতে থাকছেন। আজ বাড়িটি ভেঙে দেওয়া হলো।

কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন সামসুন্নাহার। বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন হবে জানলে কষ্টের টাকায় প্যারাবনের জমি কিনতাম না। এখন সবকিছু হারিয়ে পথে বসতে হলো।’

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কস্তুরাঘাট এলাকার প্রায় ২৫০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বেলা দুইটার দিকে কস্তুরাঘাট এলাকার আবদুল খালেকের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে তিনি যৌথ বাহিনীকে বাধা দেন এবং স্থাপনাগুলো বৈধ দাবি করে কাগজপত্র দেখানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আবদুল খালেকের ছেলেসহ ১০ থেকে ১২ জন যুবক লাঠি নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান।

পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল-এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, দেরিতে হলেও বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করায় সাধারণ মানুষ খুশি। এখন নদীর অন্যান্য এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। একই সঙ্গে গত দুই দিনে যেসব জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে, সেসব স্থানে আবারও বনায়ন করতে হবে।

Also Read: কক্সবাজারে বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, সাংবাদিকদের ওপর দখলদারের হামলা