কক্সবাজারে বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, সাংবাদিকদের ওপর দখলদারের হামলা

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনায় উচ্ছেদ অভিযান। মঙ্গলবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার শহরের প্রাচীন নদী বাঁকখালীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল। নির্দেশনা অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নদীর কস্তুরাঘাট অংশে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (এডিএম) নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী। বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রায় ২৫০টি অবৈধ ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হয়। পাশাপাশি নদীতে সৃজিত প্যারাবন কেটে দখল করে ঘিরে রাখা টিনের ঘের ও চারপাশের কয়েক শ খুঁটি তুলে ফেলা হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত এই উচ্ছেদ অভিযান চলে।

বেলা দুইটার দিকে উচ্ছেদ অভিযানের ভিডিও চিত্র ধারণ ও ছবি তুলতে গিয়ে দখলদারের হামলার শিকার হন কয়েকজন সাংবাদিক। ১০-১২ জন দখলদার লাঠি হাতে সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে আসেন এবং হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। এ সময় সাংবাদিকদের মারধর করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার ধৃষ্টতা দেখান কয়েকজন দখলদার। দখলদার আবদুল খালেক সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

হামলার শিকার সাংবাদিকেরা হলেন ডিবিসি নিউজ ও বিডিনিউজের জেলা প্রতিনিধি শংকর বড়ুয়া রুমি, আজকের পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মাঈন উদ্দিন হাসান শাহেদ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন ক্যামেরাপারসন। দখলদারেরা সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভিডিও চিত্র ধারণ করতে নিষেধ করতে থাকেন।

হামলার শিকার সাংবাদিক মাঈন উদ্দিন হাসান শাহেদ প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ভিডিও চিত্র ধারণ ও ছবি তুলতে গেলে দখলদারের লোকজন সাংবাদিকদের গালমন্দ শুরু করেন। এসব থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করলে দখলদারেরা ক্ষিপ্ত হয়ে চিৎকার করে গালমন্দ এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে করতে সাংবাদিকদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু করেন। এ সময় কয়েকজন দখলদার লাঠি হাতে সাংবাদিকদের পেটানোর ধৃষ্টতা দেখান। পুলিশ আসায় তা করতে পারেননি দখলদারেরা। ১০-১২ জনের দখলদারের নেতৃত্ব দেন আবদুল খালেক নামের আরেক দখলদার ও তাঁর ছেলে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিক নুপা আলম প্রথম আলোকে বলেন, নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় দখলদার ও মহেশখালীর বাসিন্দা আবদুল খালেক পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেন। কয়েক মাস আগে ভবনের উত্তর পাশে নদীর জায়গা দখল করে তৈরি করেন কয়েকটি টিনশেড ঘর। দুপুরে টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করতে গেলে দখলদারের সঙ্গে সাংবাদিকের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় দখলদারের লাঠি উঁচিয়ে সাংবাদিকদের মারধরের ধৃষ্টতা দেখান। এ সময় আবদুল খালেকের হাতে পিস্তল দেখা গেছে।

অস্ত্র প্রদর্শনের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে আবদুল খালেক বলেন, কস্তুরাঘাটের খতিয়ানভুক্ত জমিতে তিনি ভবন নির্মাণ করেন। টিনশেডের ঘরগুলোও তাঁর নিজের খতিয়ানভুক্ত জমিতে নির্মাণ করা হয়। এসব ঘরবাড়ি উচ্ছেদ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কতিপয় যুবকের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

সাংবাদিক শংকর বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা সেখানে গিয়েছিলাম সংবাদ সংগ্রহ করতে। কিন্তু দখলদার আবদুল খালেক উচ্ছেদ অভিযান বানচাল করতে সাংবাদিকের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। আমরা সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

যৌথ অভিযানে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে অংশ নেয় পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ–সহ বিভিন্ন দপ্তর। বিকেল চারটা পর্যন্ত দুই–আড়াই শ ছোট–বড় অবৈধ স্থাপনা (ঘরবাড়ি-দোকানপাট) উচ্ছেদ হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযান সন্ধ্যা পর্যন্ত চালানো হবে। নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ বন্ধ করার চেষ্টা অনেকবার হয়েছে, এখনো হচ্ছে। কিন্তু আমরা থামব না। উচ্চ আদালতের আদেশে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।’

সাংবাদিকদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, ‘এটা ভুল–বোঝাবুঝি। এ ব্যাপারে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, দেরিতে হলেও বাঁকখালী নদী দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করায় শহরের মানুষ খুশি। তবে অভিযানে পুরো জায়গা উদ্ধার করে নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় দখলদার চক্র সুযোগ নেবে এবং অভিযান নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হবে।

রাশেদুল মজিদ বলেন, গত দুই বছরে নদীর কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম থেকে পেশকারপাড়া পর্যন্ত পাঁচটি দাগে নদী, খাল ও বালুচর শ্রেণির ১৪৬ একর সরকারি জমি দখল করে তাতে ১ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে। তাতে উজাড় করা হয়েছে ২১০ একরের বেশি প্যারাবন। ধ্বংস করা হয়েছে পাখির আবাসস্থলসহ জীববৈচিত্র্য।