Thank you for trying Sticky AMP!!

‘এই স্কুল আমার রক্তে মিশে আছে’

বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতিকে কাছে পেয়ে এই স্মৃতি ফ্রেমবন্দী করলেন অন্যরা। শনিবার দুপুরে শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় চত্বরে

‘বন্ধু, এত দিন কোথায় ছিলি? কেমন আছিস? ছেলেমেয়েরা কেমন আছে?’ এসব প্রশ্ন শেরপুরের সদর উপজেলার শেখহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক প্রভা রানী সাহা করলেন তাঁর বাল্যবন্ধু সৈয়দা শাহনেওয়াজ লতিকাকে। সৈয়দা শাহনেওয়াজ ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম)। দুই বান্ধবীর দেখা দীর্ঘ সাত বছর পর। দুজনেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন।

এমন দৃশ্য দেখা যায় গতকাল শনিবার শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। গতকাল এই বিদ্যালয়ের ৭৫ বছর পূর্তি ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এটি শুধু উৎসব নয়, এ যেন ছিল বিদ্যালয়ের প্রায় এক হাজার প্রাক্তন ছাত্রীর মিলনমেলা।

দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি শেরপুর-১ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানুয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবদুল্লাহ আল খায়রুম।

Also Read: ৪৯ বছর পর বিদ্যাপীঠে এসে আবেগে ভাসলেন শামসাদ রেহেনা

শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ৭৫ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনী উৎসবে অংশ নেওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুরে বিদ্যালয় চত্বরে

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য ছানুয়ার হোসেনসহ আরও বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, পৌরসভার মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া, শেরপুর ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও সমাজসেবক রাজিয়া সামাদ, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও খুলনা জেলার সন্ত্রাস দমন স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) রোজিনা আক্তার, বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি, বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক এ্যানী সুরাইয়া মিলোজ, সাবেক প্রধান শিক্ষক জীবনকৃষ্ণ বসু, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা, সাংস্কৃতিক সংগঠক শ্যামলী মালাকার প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছানুয়ার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার শিক্ষার উন্নয়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে বালক ও বালিকা বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে। শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে অনেক শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এই বিদ্যালয়ে একটি ছয়তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

Also Read: অন্নদার প্রাঙ্গণে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ঈদ উৎসব

পুনর্মিলনী উৎসবে অংশ নেওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্মৃতি ধরে রাখলেন ছবি তুলে। শনিবার দুপুরে শেরপুর সরকারি বালিক উচ্চবিদ্যালয় চত্বরে

স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিশু কিডনি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফরোজা বেগম বলেন, ‘এই স্কুল থেকে আমি এসএসসি পাস করেছি। আমরা পাঁচ বোন এই স্কুলে পড়ালেখা করেছি। বর্তমানে বিএসএমএমইউতে শত শত শিশুকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করছি। এই স্কুলই আমার অনুপ্রেরণার উৎস। এখান থেকেই আমি মানবসেবায় ব্রত হয়েছি। এই স্কুল আমার রক্তে মিশে আছে। তাই এই স্কুলের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।’

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক আমাকে খেলাধুলা করতে উৎসাহ দিয়েছেন। শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা পেয়ে আমি ক্রিকেট খেলে আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আজ অনেক বছর পর আমার প্রাণপ্রিয় বিদ্যালয়ে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। দীর্ঘদিন পর এই বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী উৎসবে এসে অনেক বন্ধুর দেখা পেয়ে আমার খুব ভালো লাগছে।’

Also Read: পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে ফিরে গেলেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা

দিনভর অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন চত্বর ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং তাঁদের পুরোনো দিনের কথা মনে করেন। একই সঙ্গে তাঁরা বান্ধবীদের সঙ্গে ছবি তোলেন ও ভিডিও করেন। সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিখ্যাত ব্যান্ড জলের গানের শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।

পুনর্মিলনী উৎসবের নিবন্ধন উপকমিটির আহ্বায়ক সায়েমা আফরোজ বৃষ্টি জানান, উৎসবে ৮৮০ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় উচ্চশিক্ষিত ও গণ্যমান্য  ব্যক্তিদের সহায়তায় ১৯৪৯ সালে শেরপুর শহরের মাধবপুর এলাকায় কায়েদে আযম মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্বাধীনতার পর এই বিদ্যালয়ের নাম দেওয়া হয় শেরপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। ১৯৮১ সালে এটি জাতীয়করণ করা হয়। তখন এটির নাম হয় শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার।

Also Read: নাচ-গান-আড্ডায় কেটে গেল দিনটি