Thank you for trying Sticky AMP!!

নিরীহ কামরুজ্জামানকে কেন এভাবে হত্যা, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে সবাই

নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মণপাড়ার একটি তিনতলা বাড়ির ছাদে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন মো. কামরুজ্জামান (৪২)

নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় লাগোয়া দুটি তিনতলা ভবন। একটি মুদিদোকানি গুরু দাসের, অন্যটি দইয়ের কারিগর বিমল ঘোষের। গুরু দাসের ছোট ভাই হরি দাস আর কামরুজ্জামান বন্ধু ছিলেন। ভবন দুটির বিপরীত পাশে একটি চায়ের দোকানে সন্ধ্যার পর দুই বন্ধু হরি দাস ও কামরুজ্জামান নিয়মিত চা পান করতেন। এরপর তাঁরা হরি দাসের বাড়ির ছাদে গিয়ে আড্ডা দিতেন। গত বুধবার রাত সোয়া নয়টার দিকে ওই ছাদেই কামরুজ্জামানকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নরসিংদী সদর হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত পৌনে ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল, নিহতের বাড়ি, হাসপাতাল ও থানা ঘুরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। শিক্ষকতা পেশায় থাকা আপাত নিরীহ মানুষ কামরুজ্জামানকে কেন এভাবে হত্যা করা হলো, তা এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না কেউ। ওই সময় কেনই–বা একা ছাদে উঠেছিলেন তিনি বা তাঁকে কেউ ডেকে নিয়েছিলেন কি না—এসব প্রশ্নের উত্তরও মেলেনি। তবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বিমল ঘোষের বাড়ির ছাদ বেয়ে গুরু দাসের বাড়ির ছাদে উঠে কামরুজ্জামানকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরে ওই একই পথে দৌড়ে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। কারণ, দুই বাড়িরই ছাদ, দেয়াল ও সিঁড়িতে এখনো লেগে আছে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ।

নিহত মো. কামরুজ্জামান নরসিংদী শহরের সাটিরপাড়া এলাকার মৃত আবদুল হামিদের ছেলে। সদর উপজেলার হাজীপুরের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তিনি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। ১০ বছর প্রবাসজীবন কাটিয়ে সম্প্রতি দেশে ফেরার পর কয়েকটি টিউশনি শুরু করেন। তাঁর আট বছর বয়সী এক মেয়ে ও ছয় বছর বয়সী এক ছেলে আছে।

কামরুজ্জামানের মা নুরুন্নাহার বলেন, ‘১০ বছরের বেশি সময় আমার ছেলে সৌদি আরবে ছিল। শেষে দিকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ায় পরিশ্রমের কাজ করতে পারছিল না। তাই দেশে ফিরে আবার পড়াইতে শুরু করেছিল। তার কোনো শত্রু ছিল না। তাকে এভাবে কেউ মেরে ফেলবে, ভাবতে পারলে দেশে আসতে দিতাম না। মৃত্যুই তাকে বন্ধুর বাড়ির ছাদে ডেকে নিয়েছিল। আমার ছেলেকে যারা এভাবে হত্যা করেছে, তাদের ফাঁসি চাই আমি।’

গুরু দাস ও বিমল ঘোষের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, বুধবার রাতে কামরুজ্জামান ও হত্যাকারীদের ছাদে ওঠার বিষয়টি তাঁরা কেউই টের পাননি। গুরু দাসের বাড়ির ছাদে কামরুজ্জামান যখন অবস্থান করছিলেন, তাঁর বন্ধু হরি দাস বাড়ির সামনের দোকানেই অবস্থান করছিলেন। তখনই হত্যাকারীরা বিমল ঘোষের নির্মাণাধীন বাড়ির কলাপসিবল গেট বন্ধ থাকায় দেয়াল বেয়ে দোতলায় ওঠে এবং সিঁড়ি বেয়ে ছাদে চলে যায়। পরে লাফিয়ে গুরু দাসের বাড়ির ছাদে গিয়ে কামরুজ্জামানের গলা কেটে একই পথে পালিয়ে যায়। এ সময় নিজের গলা চেপে ধরে কামরুজ্জামান কোনোরকমে নিচে নেমে আসেন। এরপরই সবাই ঘটনা জানতে পারেন। দ্রুত কামরুজ্জামানকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখনো তাঁর গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁর কণ্ঠনালি ও খাদ্যনালি কেটে যায়। পরে ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত সোয়া ১০টায় তিনি মারা যান।

Also Read: নরসিংদীতে বাড়ির ছাদে একজনকে গলা কেটে হত্যা

ওই দুই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গুরু দাসের বাড়ির ছাদের দুই জায়গায় রক্তে ভেসে যাওয়ার চিহ্ন। এ ছাড়া এখানে–সেখানে লেগে আছে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। নিজের গলা চেপে ধরে কামরুজ্জামান যখন নিচে নামছিলেন, ওই সময় সিঁড়িতে ঝরে পড়া ও দেয়ালে লেপটে থাকা রক্তের দাগও লেগে আছে। অন্যদিকে বিমল ঘোষের বাড়ির ছাদে, সিঁড়িতে, দেয়ালে, কাপড়ে ও দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়ার পর গলিতে রক্তের দাগ লেগে আছে। বাসিন্দারা বলছেন, হত্যার পর দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চিহ্ন এসব রক্তের দাগ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুই বাড়ির পরিবারগুলোও আতঙ্কের মধ্যে আছে।

গতকাল দুপুরে নিহত কামরুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর লাশ দেখতে এসেছেন শত শত মানুষ। তাঁর ৭৫ বছর বয়সী মা নুরুন্নাহারকে সিঁড়িতে বসে বিলাপ করতে দেখা যায়। তিনি বলছিলেন, ‘আমার ছেলেকে ফিরাইয়া দাও।’ ঘরের ভেতর থেকে স্ত্রী-সন্তানদের কান্নার শব্দ ভেসে আসছিল। প্রতিবেশী নারীরা তাঁদের সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। পরে বিকেলে পৌর ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে কাউরিয়াপাড়া কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়া জানান, ঘটনাস্থলের একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরে আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সন্দেহভাজন এক তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে তিনি জানান।